ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেল এবং সেন্সাস কমিশনারের নতুন অফিসের উদ্বোধন করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন ভবিষ্যত পরিকল্পনা, উন্নয়নের উদ্যোগ ও কল্যাণমূলক প্রকল্পের ক্ষেত্রে আসন্ন ২০২১ সালের জনগণনা তথ্যের ব্যবহারের সম্ভাব্যতার কথা উল্লেখ করেছেন।
অমিত শাহ জানিয়েছেন, এই প্রথম এমন একটা সেন্সাস হতে চলেছে যেখানে সমস্ত তথ্য ডিজিটালি সংগৃহীত হবে এবং যা বিভিন্ন ভাবে বিন্যস্ত ও ব্যবহৃত হবে। যেমন তিনি বলেছেন, জন্মৃমৃত্যুর রেজিস্ট্রেশন কি আমরা দেশের ভোটার তালিকার সঙ্গে লিংক করতে পারি না। অমিত শাহ বলেছেন, এভাবে, ভোটধিকার অর্জনের বয়সে পৌঁছালে আলাদা করে কাউকে আর ভোটার কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে না, স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ভোটার কার্ড তৈরি হয়ে যাবে। একই ভাবে, কেউ মারা গেলে ভোটার লিস্টে সে তথ্য স্বয়ংক্রিয় ভাবেই চলে আসবে।
আরও পড়ুন, ‘চূড়ান্ত’ এনআরসি কেন চূড়ান্ত নয়?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন এখনই তেমন কোনও প্রকল্প না থাকলেও, আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, আইডেন্টিটি কার্ডের মত আলাদা কার্ডের হাত থেকে এ ভাবে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, যদি জনগণনার কাজ সঠিক ভাবে, সঠিক ফর্ম্যাটে করা হয়, তাহলে অন্য সব কার্ড তুলে দিয়ে একটি কার্ডের ব্যবহার প্রয়োগ করা যেতে পারে। অর্থাৎ, একটি কার্ডেই হয়ে উঠবে একজন ব্যক্তির ব্যাঙ্কের কার্ড, ভোটার আইডি কার্ড, আধার কার্ড এবং পাসপোর্ট। অমিত শাহ বলেছেন, ডিজিটাল জনগণনার এই পদ্ধতির প্রথম ধাপ হয়ে উঠতে পারে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই প্রস্তাবের সঙ্গে ২০০১ সালে বিশেষ ক্ষমতাপ্রাপ্ত মন্ত্রিগোষ্ঠীর দেওয়া মাল্টিপারপাস ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ড (MPNIC)-এর মিল রয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল বাজপেয়ী সরকারের আমলে। তাঁরা একটি রিপোর্টে এই MPNIC-এর কথা উল্লেখ করেছিলেন। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের পর গঠিত কে সুব্রহ্মণিয়ম নেতৃত্বাধীন কার্গিল কমিটির প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ওই রিপোর্ট দেয় বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন মন্ত্রিগোষ্ঠী।
২০০১ সালের প্রস্তাবিত MPNIC কী ছিল?
বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন মন্ত্রিগোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে ছিলেন এল কে আদবানি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), জর্জ ফার্নান্ডেজ (প্রতিরক্ষামন্ত্রী), জসবন্ত সিং (বিদেশমন্ত্রী), যশোবন্ত সিং (অর্থমন্ত্রী)। তাঁরা MPNIC প্রস্তাব করেছিলেন ক্রমবর্ধমান বেআইনি অনুপ্রবেশ আটকাতে। সেখানে বলা হয়েছিল-
"বেআইনি অভিবাসন ক্রমশ বাড়ছে। ভারতে যেসব নাগরিক এবং অনাগরিকরা বাস করছেন তাঁদের পঞ্জীকরণ দরকার। এটা করা সম্ভব জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর মাধ্যমে। সমস্ত নাগরিকদের মাল্টিপারপাস ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ড (MPNIC) দেওয়া উচিত এবং অনাগরিকদের ক্ষেত্রে অন্য রং ও ডিজাইনের কার্ড দেওয়া দরকার। শুরুতে সীমান্তবর্তী জেলা বা সীমান্তের ২০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে এবং ক্রমশ আরও ভিতরে বাড়ানো প্রয়োজন।"
"কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত এই আইডেন্টিটি কার্ড প্রকল্পের পুরো খরচ বহন করা। প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে আসা বহু নাগরিক (...........)* কর্মসংস্থানের সুযোগের জন্য সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আসতে চান। ভবিষ্যতে বেআইনি অনুপ্রবেশ আটকাতে বিদেশিদের জন্য ওয়ার্ক পারমিটের ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে,"
"(...............................)*। ভবিষ্যতে সমস্ত নাগরিকদের জন্য MPNIC এবং ভারতের সমস্ত নাগরিক এবং অভারতীয়দের বাধ্যতামূলক পঞ্জীকরণের প্রস্তাব ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দেওয়া রয়েছে।"
(* চিহ্নিত অংশাবলী নিরাপত্তাজনিত কারণে সরকার মুছে দিয়েছে)
MPNIC-ই কি ফিরে আসছে আবার?
MPNIC-ই ঠিক আগের অবস্থায় আনা হচ্ছে, এরকমটা বলা ঠিক হবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়ে দিয়েছেন এরকম কোনও নির্দিষ্ট প্রকল্প এখন নেই। কিন্তু সরকার চায় একটি নির্দিষ্ট কার্ড নাগরিকদের জন্য চালু করতে যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিভিন্ন তথ্য সংগৃহীত থাকবে।
আরও পড়ুন, ফের বালাকোট চালু: দেখে নিন পাকিস্তানের জঙ্গি ক্যাম্পের ইতিহাস ভূগোল
দ্বিতীয়ত, ২০০১ সালে MPNIC যখন প্রস্তাবিত হয়েছিল, তখনকার সময় থেকে বিশাল বদল ঘটে গিয়েছে। আধার ডেটাবেসের তার একটা বড় উদাহরণ। যে আধার কার্ড এখন প্রায় সব ভারতীয় নাগরিকেরই রয়েছে।
তৃতীয়ত, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে সরকার ২০২০ সালের মধ্যে ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স গ্রিড চালু করতে চলেছে। ন্যাটগ্রিড ব্যবহার করবে ১০টি সংস্থা। যার মধ্যে রয়েছে ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ (আইবি), রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিটিক্যাল উইং (র), সিবিআই এবং ইডি। বিমান পরিবহণ, ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন সহ ২১টি ডেটা বেসের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম এবং বেআইনি অনুপ্রবেশের দিকে নজর রাখা ও তাকে প্রতিহত করাই এই পদ্ধতির লক্ষ্য।
ন্যাটগ্রিড চালু হলে MPNIC-র আর তত প্রয়োজন থাকবে না, কারণ MPNIC-র ও মূল লক্ষ্য সন্দেহভাজন সন্ত্রাসমূলক কাজকর্ম ও বেআইনি অনুপ্রবেশে নজরদারি।
Read the Full Story in English