শুক্রবার, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সমুদ্রের উপর দেশের দীর্ঘতম সেতু, অটল সেতুর উদ্বোধন করেছেন। ছয় দশক আগে প্রথম এই সেতুটির ধারণা সামনে এলেও তা বাস্তবায়িত হয় ১২ জানুয়ারি ২০২৪। এই সেতুটি প্রায় ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ ছয় লেনের সেতু, যার দৈর্ঘ্য সমুদ্রে প্রায় ১৬.৫ কিলোমিটার এবং স্থলভাগে প্রায় ৫.৫ কিলোমিটার। এটি মুম্বই থেকে পুনে, গোয়া এবং দক্ষিণ ভারতে ভ্রমণের সময়ও অনেকটাই কমিয়ে দেবে।
মুম্বই থেকে নভি মুম্বইয়ের সংযোগকারী এই সেতুটি দেশের বৃহত্তম সমুদ্র সেতু যা ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ। এর মাধ্যমে দক্ষিণ মুম্বই থেকে নভি মুম্বইয়ের দূরত্ব অনেকটাই কমে যাবে। এই সেতুর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এর নিচ দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কার্গো জাহাজ অনায়াসেই চলাচল। এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন ৭০ হাজার যানবাহন চলাচল করবে বলে জানা গিয়েছে। ৪০০টি এআই প্রযুক্তির ক্যামেরার সাহায্যে ২৪ ঘণ্টা চালানো হবে এই সেতুতে। ১৭,৮৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ লেনের অটল সেতু তৈরি করা হয়েছে।
প্রায় ২২ কিলোমিটারের এই পুরো অংশের মধ্যে ১৬.৫০ কিলোমিটার সম্পূর্ণ সমুদ্রের উপরে থাকবে।মুম্বই ট্রান্স হারবার লিঙ্কে (MTHL) চার চাকার গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে ১০০ কিমি প্রতি ঘণ্টা, মুম্বই পুলিশ বুধবার এতথ্য জানিয়েছে। এই সেতুর মাধ্যমে মুম্বই এবং নভি মুম্বইয়ের মধ্যেকার দূরত্ব মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে দূরত্ব কভার করা সম্ভব হবে। যেটা অতিক্রম করতে বর্তমান ২ ঘন্টা সময় লাগে। এটি ভারতের দীর্ঘতম সমুদ্র সেতু। এই সেতুর মাধ্যমে মুম্বই থেকে পুনে, গোয়া এবং দক্ষিণ ভারতে যাতায়াতের সময় অনেক কমে যাবে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী রাজ্যে ৩০,৫০০ কোটি টাকারও বেশি উন্নয়নমূলক প্রকল্প চালু করেন।
অটল সেতু প্রায় ২১.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৬-লেনের একটি সেতু। এটি সমুদ্রের উপর ১৬.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং স্থলভাগে প্রায় ৫.৫ কিলোমিটার। এটি ভারতের দীর্ঘতম সেতু, যা দেশের দীর্ঘতম সমুদ্র সেতুও। এটি মুম্বই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং নভি মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দ্রুত সংযোগ প্রদান করবে এবং মুম্বই থেকে পুনে, গোয়া এবং দক্ষিণ ভারতে ভ্রমণের সময়ও কমিয়ে দেবে। এটি মুম্বই বন্দর এবং জওহরলাল নেহরু বন্দরের মধ্যে সংযোগ উন্নত করবে।
এটি মুম্বইয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও এই বহুল প্রতীক্ষিত সেতুটি মুম্বই এবং নভি মুম্বাইয়ের মধ্যে সরাসরি যাতায়াত সহজ করে তুলবে, এই মেগা সেতুটি চালু হওয়ার ফলে মুম্বইয়ের অন্যান্য অংশেও যাতায়াত সহজ করে তুলবে। এই মহাসেতুর নাম দেওয়া হয়েছে অটল সেতু। এই সেতু মুম্বই হারবার ট্রান্স লিংক (MTHL) নামে পরিচিত। অটল সেতু মুম্বই থেকে গোয়া ভ্রমণে সময় বাঁচাবে। বর্তমানে মুম্বই থেকে গোয়া যেতে ১১ ঘন্টা সময় লাগে। এই সেতু চালু হতেই সেই সময় আরও ২ ঘন্টা কমে যাবে। একইভাবে, বর্তমানে মুম্বই এবং পুনে যেতে তিন ঘন্টা সময় লাগে। সেতুটি চালু হলে এই যাত্রা শেষ হবে ১.৩ ঘণ্টায়।
সবচেয়ে বড় সেতুটির বৈশিষ্ট্য কী
মাত্র ২০ মিনিটে মুম্বই থেকে নভি মুম্বই পৌঁছানো সম্ভব হবে।
সমুদ্রের উপর নির্মিত অটল সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ২২ কিলোমিটার।
এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন ৭০ হাজার যানবাহন চলাচল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এই সেতু দিয়ে ভ্রমণের জন্য মোট টোল ট্যাক্স পড়বে ৩৭৫ টাকা।
একটি সিঙ্গেল রাইডের জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫০ টাকা।
প্রতিদিন টোলের মাধ্যমে ১.৭৫ কোটি টাকা আয় হবে।
সেতুটি চালু হওয়ার পর যানজটের ঝামেলা থেকে সহজেই মুক্যি মিলবে। মুম্বই থেকে নভি মুম্বই, নভি মুম্বই বিমানবন্দর, মুম্বই-পুনে এক্সপ্রেস, মুম্বই গোয়া হাইওয়েতে পৌঁছানো সহজ হবে। দেশের দীর্ঘতম সেতুটি নানা দিক থেকে বিশেষ। সেতুর উপর দিয়ে ১০০ কিলোমিটার বেগে যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যানবাহনের গতি বজায় রাখতে, দেশে প্রথমবারের মতো, MTHL-এ উন্মুক্ত সড়ক টোলিং ব্যবস্থা চালু হবে।
১০টি দেশের সহযোগিতায় নির্মিত সেতু
MTHL ১০ টি দেশের বিশেষজ্ঞ এবং ১৫০০০ দক্ষ শ্রমিকদের সহায়তায় নির্মিত হয়েছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি সেতুটি ভূমিকম্পের কম্পন এবং প্রবল সমুদ্র ঢেউয়ের মধ্যে ১০০ বছর মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম। নির্মাণের সময় পরিবেশ ও সামুদ্রিক প্রাণীর যত্ন নেওয়া হয়েছে। এই সেতুটি তৈরি করতে ১৭,৮৪০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। দৈর্ঘ্যের দিক থেকে এটি বিশ্বের ১২ তম সেতু।
অটল সেতু মুম্বই এবং নভি মুম্বইয়ের মধ্যে যাতায়াতের সময় ২ ঘন্টা থেকে কমিয়ে মাত্র ২০ মিনিট করবে, জ্বালানী এবং সময় উভয়ই সাশ্রয় করবে। যেখানে মুম্বই হারবার ব্রিজ লিংক তৈরি করা হয়েছে প্রতি শীতে ওই এলাকায় ফ্ল্যামিঙ্গো পাখি আসে। এ বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রেখে সেতুর দুপাশে সাউন্ড ব্যারিয়ারও বসানো হয়েছে। এতে শব্দ দূষণ হবে না এবং পাখিদের কোনো ক্ষতি হবে না। এছাড়া সেতুতে এমন লাইট বসানো হয়েছে, যা শুধু সেতুর ওপর পড়বে এবং সামুদ্রিক প্রাণীর কোনো ক্ষতি হবে না।