লস্কর-ই-তইবার প্রধান হাফিজ সইদ এবং জইশ-ই-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারের আত্মীয়দের ইতিমধ্যেই বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন বা ইউএপিএতে জঙ্গি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এবার কাশ্মীরি জঙ্গি মুস্তাক আহমেদ জারগারকেও ইউএপিএতে অভিযুক্ত করল প্রশাসন। বছর ৫২-র জারগার শ্রীনগরের বাসিন্দা। ১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের বিমান আইসি-৮১৪ অপহরণের পর যাত্রীদের বিনিময়ে তিন জঙ্গিকে মুক্তি দিয়েছিল ভারত। তাদের অন্যতম এই জারগার।
কে এই মুস্তাক আহমেদ জারগার?
কাশ্মীর উপত্যকার শ্রীনগরে নওহাট্টা এলাকার বাসিন্দা জারগার। কাশ্মীরে জঙ্গিপনার শুরুর অধ্যায়ে যে ক'জন জঙ্গি পাকিস্তানে গিয়ে জঙ্গিশিবিরে প্রশিক্ষণ নিয়েছিল, জারগার তাদেরই একজন। কাশ্মীরে ফিরে সে জিহাদি কার্যকলাপ শুরু করে। ১৯৮৮ সালে জারগার জম্মু-কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট (জেকেএলএফ) সংগঠনে যোগ দেয়। জেকেএলএফ প্রধান আসফাক মজিদ ওয়ানির ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে।
ওই বছর অগস্টে অনন্তনাগের বাসিন্দা পিপলস লিগের সদস্য জহুর শেখের সাহায্যে ত্রেহগাম সীমান্ত দিয়ে জারগার পাকিস্তানে পৌঁছয়। সেখানে জেকেএলএফের জঙ্গি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল। জারগার সেই শিবিরে প্রশিক্ষণ নেয়। ১৯৮৯ সালের মে মাসে দ্বিতীয়বারের জন্য পাকিস্তানে যায়। উরি দিয়ে কাশ্মীরে ফিরে আসে। ওয়ানির মৃত্যুর পর জেকেএলএফ প্রধান ইয়াসিন মালিকের সঙ্গে জারগারের দূরত্ব তৈরি হয়। অল-উমর-মুজাহিদিন (এইউএম) নামে নতুন সংগঠন তৈরি করে জারগার।
কী ধরনের জঙ্গি কার্যকলাপে জারগার যুক্ত?
জেকেএলএফে থাকাকালীনই জারগার বিভিন্ন জঙ্গি কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। তার মধ্যে অন্যতম বড় ঘটনা, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সইদের মেয়ে রুবাইয়া সইদকে ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বরে অপহরণ। রুবাইয়ার বিনিময়ে বেশ কয়েকজন জঙ্গিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় সরকার।
সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টালের দাবি, জারগার বেশ কয়েকটি হামলায় যুক্ত। নিরাপত্তা বাহিনীর আধিকারিক থেকে কাশ্মীর প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিক, বিভিন্ন ব্যক্তির হামলায় তার নাম উঠে এসেছে। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ধারাবাহিক হত্যার পিছনেও উঠে এসেছে জারগারের নাম। ৪০টি খুনের সঙ্গে সে সরাসরি যুক্ত। শেষপর্যন্ত জারগারের সঙ্গীরা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারায়। আর, জারগার ১৯৯২ সালে ধরা পড়ে।
জঙ্গি কার্যকলাপ ছাড়াও তোলাবাজি এবং শ্রীনগরে সম্পত্তি লেনদেনের সঙ্গেও সে যুক্ত ছিল। তার বিরুদ্ধে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের সাতটি মামলা আছে। অন্য মোটর সংস্থার ডিলারকে সাহায্য করতে জারগার লোকজন দিয়ে শ্রীনগরে মারুতি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল। ২০০২ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রার্থী এবং রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর হামলার জন্য এই জারগারকেই 'মুখ্য সংযোজক' নিযুক্ত করেছিল পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই।
আরও পড়ুন- পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ইউক্রেনে গ্রেফতার হয়েছে, কে এই ভিক্টর মেদভেদচুক?
জেল থেকে মুক্তির পর কী হয়েছিল?
১৯৯৯ সালে বিমান অপহরণের ঘটনায় যাত্রীদের বিনিময়ে তিন জঙ্গিকে জেল থেকে মুক্তি দিয়েছিল ভারত। তাদের মধ্যে একজন ছিল মাসুদ আজাহার। যে মুক্তির কিছুদিন পরই জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি সংগঠন তৈরি করেছিল। অপরজন আহমেদ ওমর সঈদ শেখ। যে পরে পাকিস্তানে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাংবাদিক ড্যানিয়েল পার্লের অপহরণ এবং হত্যায় দোষী সাব্যস্ত হয়। আর, তৃতীয় জন এই জারগার। যে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজফফরাবাদে ঘাঁটি গাড়ে। সেখানেই অল-উমর-মুজাহিদিন (এইউএম) সংগঠন নতুন করে গড়ে তোলে। কাশ্মীর থেকে জঙ্গি নিযুক্তির দায়িত্ব নেয়। মাসুদ আজাহারের জেইএম সংগঠনের সঙ্গে জারগারের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তার জঙ্গি সংগঠনের কাজকর্ম দীর্ঘদিন পর উপত্যকায় দেখা যাচ্ছে।
জারগার এখন কী করছে?
২০১৬ সালে হিজবুল কমান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর জারগারের সংগঠন কাশ্মীর উপত্যকায় নতুন ভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। উপত্যকায় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বিভিন্ন হামলার ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে এই জঙ্গি সংগঠন। ২০১৬ সালে শ্রীনগরে সশস্ত্র সীমা বল বা এসএসবির জওয়ানদের ওপর হামলার ঘটনায় নাম জড়িয়েছে এইউএমের। ওই হামলায় এক জওয়ান প্রাণ হারিয়েছিলেন। বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিলেন। পরবর্তী বছরগুলোতেও এরকম বেশ কয়েকটি হামলা জওয়ানদের ওপর হয়েছে। ২০১৯ সালে এইউএমের হামলায় দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগে সিআরপিএফের রোড ওপেনিং পার্টির পাঁচ জওয়ানের মৃত্যু হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে খবর আছে, জঙ্গি সংগঠন আল-কায়দা এবং জইশ-ই-মহম্মদের সঙ্গেও যোগ রয়েছে জারগারের।
Read story in English