Muslim League and Hindu Mahasabha formed coalition governments: বর্তমান সময়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিজেপিকে মুসলিম-বিরোধী তকমা দিয়ে আকছার তোপ দাগে। কিন্তু একটা সময় ছিল, যখন হিন্দুত্ববাদী হিন্দু মহাসভা মুসলিমবাদী মুসলিম লিগের সঙ্গে জোট পর্যন্ত গঠন করেছিল। সম্প্রতি সেই বিতর্ক ফের সামনে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ
আর, তা সামনে এনেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। কংগ্রেস সভাপতি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বিজেপির 'মতাদর্শগত পূর্বপুরুষ'দের বিরুদ্ধে ব্রিটিশদেরকে এবং মুসলিম লিগকে সমর্থন করার অভিযোগ এনেছেন। খাড়গের একথা বলার কারণ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী শনিবার (৬ এপ্রিল) অভিযোগ করেছিলেন, কংগ্রেসের ইস্তাহারে 'মুসলিম লিগের স্ট্যাম্প' আছে।
খাড়গের প্রতিক্রিয়া
তারই প্রেক্ষিতে সোমবার খাড়গে সোশ্যাল মিডিয়া এক্স-এ বলেছেন, 'সবাই জানে যে মোদী শাহের আদর্শগত পূর্বপুরুষরা ১৯৪২ সালে মহাত্মা গান্ধীর ডাকা ভারত ছাড়ো আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিলেন। ১৯৪০-এর দশকে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি, মুসলিম লিগের সঙ্গে জোট গড়ে বাংলা, সিন্ধু এবং এনডব্লিউএফপিতে সরকার গঠন করেছিলেন।'
১৯৩৭ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন
১৯৩৫ সালে তৈরি ভারত সরকারের আইনে অধীনে অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩৭ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন। সেই নির্বাচনে কংগ্রেস প্রশংসনীয় ফলাফল করে। মোট ১,৫৮৫টি প্রাদেশিক বিধানসভা আসনের মধ্যে ৭১১টিতে জয়ী হয়। ১১টি প্রদেশের মধ্যে ৫টিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। এই পাঁচটি প্রদেশ হল- মাদ্রাজ, বিহার, উড়িষ্যা, কেন্দ্রীয় প্রদেশ এবং ইউনাইটেড প্রদেশ। এছাড়াও বোম্বেতে ১৭৫টি আসনের মধ্যে ৮৬টিতে জয়লাভ করে। এই সমস্ত প্রদেশে কংগ্রেসের মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। কিছু সময় পরে, কংগ্রেস উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ (এনডব্লিউএফপি) এবং অসমেও সরকার গঠন করে।
অকংগ্রেসি সরকার
তবে সিন্ধু, পঞ্জাব এবং বাংলা- এই তিন প্রদেশে অকংগ্রেসি সরকার গঠিত হয়। সিন্ধুতে সিন্ধ ইউনাইটেড পার্টির নেতৃত্বে একটি জোট সরকার গঠিত হয়। পঞ্জাবে সিকান্দার হায়াত খানের ইউনিয়নিস্ট পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। বাংলায় ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টি (কেপিপি) মুসলিম লিগের সঙ্গে জোট গঠন করেছিল। তবে, একক বৃহত্তম পার্টি ছিল কংগ্রেস। তারা পেয়েছিল ৫৪ আসন। মুসলিম লিগ এই নির্বাচনে অত্যন্ত খারাপ ফলাফল করে। মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত ৪৮২টি আসনের মধ্যে লিগ মাত্র ১০৬টি আসনে জয়ী হয়। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে একটি আসনেও জিততে পারেনি। পঞ্জাবে সংরক্ষিত ৮৪টি আসনের মধ্যে মাত্র দুটিতে জয়লাভ করে। সিন্ধুর ৩৩টি আসনের মধ্যে মাত্র তিনটিতে জয়ী হয়। অথচ, পঞ্জাব এবং সিন্ধু ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ।
আম্বেদকরের মতামত
ডক্টর বি আর আম্বেদকর তাঁর 'Pakistan or the Partition of India, 1940'-এ লিখেছেন, 'আশ্চর্যের বিষয় মনে হতে পারে যে, মিস্টার সাভারকর ও মিস্টার জিন্নাহ এক জাতি বনাম দুই জাতির ইস্যুতে পরস্পরের বিরোধিতা করার বদলে একটি বিষয়ে সম্পূর্ণ একমত। শুধু একমতই নন। বরং, তাঁরা জোর দিয়ে বলেন যে ভারতে দুটি জাতি রয়েছে- একটি মুসলিম জাতি ও অন্যটি হিন্দু জাতি।'
কংগ্রেসের প্রতিবাদ এবং পদত্যাগ
১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বরে, নির্বাচিত ভারতীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই ব্রিটিশ সরকার জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ভাইসরয় লিনলিথগোর এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কংগ্রেস তীব্র প্রতিবাদ জানায়। কংগ্রেস দাবি করে যে যুদ্ধের জন্য ভারতের সমর্থনের বিনিময়ে, ব্রিটেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ-পরবর্তী অধ্যায়ে ভারতকে স্বাধীনতা দিতে হবে। ভাইসরয় লিনলিথগো, সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করায় ১৯৩৯ সালের অক্টোবরে কংগ্রেসের মন্ত্রীরা সরকার থেকে পদত্যাগ করে।
আরও পড়ুন- কাচাথিভু কি স্রেফ রাজনৈতিক উসকানি, ভোটের জন্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে বাজি রাখা?
মুসলিম লিগ-হিন্দু মহাসভার জোট
সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছিল হিন্দু মহাসভা এবং মুসলিম লিগ। তারা মুসলিম অধ্যুষিত সিন্ধু এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে জোট গঠন করে। শুধু তাই নয়। হিন্দু মহাসভা বাংলায় ফজলুল হকের কেপিপিকেও সমর্থন করেছিল। সুভাষচন্দ্র বসু প্রতিষ্ঠিত ফরওয়ার্ড ব্লকও এই জোটকে সমর্থন করেছিল।