বিশ্বজুড়ে মানুষের মধ্যে 'দেজা ভু' বা পূর্বস্মৃতি জাগিয়ে তুলতে, গত ডিসেম্বরে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছিল চিন। তারপর এবারে বিধিনিষেধহীন ভাবে শীতের অনুভূতি উপলব্ধি করবে বলেই ঠিক করেছিলেন চিনের বাসিন্দারা। কিন্তু, বাধ সেধেছে নিউমোনিয়া। সেখানকার সংবাদমাধ্যমের বক্তব্য, বর্তমানে চিন নিউমোনিয়া উপদ্রুত। যাতে বেড়েছে শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা।
১. চিনের পরিস্থিতি কেমন?
চিনে শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতা বেড়েছে। সেদেশের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন গত ১৩ নভেম্বর একটি প্রেস কনফারেন্স করেছে। সেখানে জানিয়েছে, হাসপাতালগুলোয় নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগী বাড়ছে। বিভিন্ন হাসপাতাল এই পরিস্থিতিতে জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যেই নিউমোনিয়ার চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামোর বন্দোবস্ত করা শুরু করেছে। বিষয়টি চলতি সপ্তাহেই সামনে আসে। কারণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) চিনের কাছে আরও তথ্য চেয়েছিল। সেখানে শিশুদের মধ্যে নির্ণয় না-হওয়া নিউমোনিয়ার স্তরের ওপর মনিটরিং ইমার্জিং ডিজিজেস (প্রোএমইডি)-এর একটি রিপোর্টও উদ্ধৃত করেছিল হু।
২. কোথায় ছড়িয়েছে সংক্রমণ?
চিনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। বেজিং এবং লিয়াওনিঙের মধ্যে দূরত্ব ৮০০ কিলোমিটার। এই দুটি কেন্দ্রেই নিউমোনিয়া বেশি ছড়িয়েছে। সংবাদ সংস্থা আল জাজিরা বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, 'বেজিংয়ের একটি হাসপাতালের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১,২০০ রোগী তাদের এমারজেন্সিতে আসছেন।'
৩. প্রাদুর্ভাবে কারা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত?
শিশুদের মধ্যে এই রোগ সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুদের একটি বড় অংশও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। বেজিংয়ের স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের উপস্থিতির সংখ্যা বর্তমানে বেশ কম। এমনকী কিছু শিক্ষার্থী স্কুলে অসুস্থ হয়ে পড়ায় কমপক্ষে এক সপ্তাহের জন্য পুরো ক্লাস বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে। কিছু বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি একদিক থেকে ইতিবাচক। কারণ তা বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, বয়স্কদের মধ্যে ছড়িয়ে থাকা রোগজীবাণু প্রতিরোধের ক্ষমতা বেড়েছে। এর অর্থ, ভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করছে। তবে, শিশুদের পাশাপাশি বয়স্ক এবং গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।
৪. এটা কি কোভিড-১৯ এর মত নতুন রোগ?
এখনও তা পরিষ্কার নয়। শুধু চিনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- ইনফ্লুয়েঞ্জা, মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া, রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি/RSV), এবং সার্স-কভ-২/SARS-CoV-2 (যে ভাইরাস কোভিড-১৯ ঘটায়)-এর মত পরিচিত প্যাথোজেনের জন্য শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা বেড়েছে। এখনও পর্যন্ত, নতুন কোনও অসুস্থতা শনাক্ত করা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চিনের কাছে ছড়িয়ে পড়া রোগের ব্যাপারে আরও তথ্য চেয়েছে। হু-এর মতে, মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া, একটি সাধারণ ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ। যা সাধারণত ছোট শিশুদের প্রভাবিত করে। সম্ভবত, ১৮ বছরের কমবয়সি রোগীদের বেশিরভাগকেই তা প্রভাবিত করে।
আরও পড়ুন- বিশ্বজুড়ে বাড়ছে খাদ্য সংকট, একইসঙ্গে ভারতীয় কৃষির গুরুত্বও, কী করলে বাড়বে ফসল?
৫. কেন এই প্রাদুর্ভাব?
চিনা কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, কোভিড -১৯ বিধিনিষেধ তুলে নেওয়াকে এই প্রাদুর্ভাবের কারণ বলে দায়ী করেছেন। এটা অন্যান্য দেশে দেখা, 'লকডাউন উঠিয়ে দেওয়ার পর সংক্রমণের বিস্তার'-এর মত ব্যাপার। চিনের বাসিন্দাদের মধ্যে কঠোর এবং দীর্ঘ লকডাউনের জেরে অনাক্রম্যতা গড়ে ওঠেনি। যার জেরে এই রোগ ছড়াচ্ছে। যা শ্বাসযন্ত্র এবং কণ্ঠস্বরকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। এমনটাই জানিয়েছেন ইউনিভার্সিটি কলেজ অফ লন্ডনের জেনেটিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফ্রাঙ্কোইস বেলোক্স। তিনি জানিয়েছেন, সম্ভবত শীতের সূত্রপাতের জেরেও চিন-এ এই রোগ বেশি ছড়িয়েছে। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত এই পরিস্থিতিতে চিন সরকার জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহ শেষে তাপমাত্রা আরও কমবে।