ভোটের মরশুমে বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছে নতুন চ্যানেল নমো টিভি। আম আদমি পার্টি এবং কংগ্রেস এ চ্যানেলের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছে। গত সপ্তাহেই জানা গিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে যে এ চ্য়ানেল তাদের আওতাধীন নয় কারণ এটি ডিটিএইচ অপারেটরদের বিশেষ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে সম্প্রচারিত হচ্ছে।
নমো টিভি কী, তা নিয়ে বিতর্কই বা কেন
নমো টিভির নতুন নাম কনটেন্ট টিভি। গত দিন পনেরোর মধযে সমস্ত বড় ডিটিএইচের মাধ্যমে সারা দেশ জুড়ে এর সম্প্রচার হচ্ছে। কমিশনের কাছে অভিযোগে আম আদমি পার্টির তরফ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে যে আদর্শ আচরণবিধি লাগু হওয়ার পর কী করে এই চ্যানেল সম্প্রচারের অনুমতি দেওয়া হল। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক কী ভাবে এ চ্যানেলের অনুমতি দিয়েছে তা নিয়ে পৃথক ভাবে জানতে চেয়েছে কংগ্রেসও।
কিছু ডিটিএইচ প্ল্যাটফর্মে এ চ্যানেলটিকে হিন্দি খবরের চ্যানেলের তালিকায় রাখা হয়েছে। তবে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রকের অনুমোদিত তালিকায় এরকম কোনও চ্যানেলের নাম নেই। বিষয়বস্তু যাই হোক না কেন, সমস্ত স্যাটেলাইট চ্যানলেকেই এ দেশে ডাউন লিংক করার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের অনুমতি নিতে হয়।
তাহলে এ চ্যানেল চলছে কী করে?
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রক নির্বাচন কমিশনকে বলেছে যে নমো টিভি হল প্ল্যাটফর্ম পরিষেবা। এ ধরনের পরিষেবার জন্য তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রকের অনুমোদন প্রয়োজন হয় না।
প্ল্যাটফর্ম পরিষেবা কাকে বলে?
একজন দর্শক তাঁর টেলিভিশন সেটে বিভিন্ন উপায়ে কোনও চ্যানেল দেখতে পারেন। কেবল টিভির এই পরিষেবা দিয়ে থাকে মাল্টি সিস্টেম অপারেটর বা এমএসও অথবা লোকাল কেবল অপারেটর, ডিটিএইচ পরিষেবা, ইন্টারনেট প্রোটোকল টেলিভিশন সার্ভিস, হেডনেট ইন দ্য স্কাই, এবং ছোট ভূখণ্ডের এলাকায় টেরেস্ট্রিয়াল টিভি সার্ভিস। এগুলিকে একযোগে ডাকা হয় ডিস্ট্রিবিউশন প্ল্যাটফর্ম অপারেটর বা ডিপিও নামে।
টিভিতে আবার চার ধরনের চ্যানেল দেখানো হয়ে থাকে, ১) প্রাইভেট স্যাটেলাইট চ্যানেল যেগুলি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেখানো হয়ে থাকে, যা সম্প্রচারের জন্য তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রকের অনুমোদন প্রয়োজন, ২) দূরদর্শনের চ্যানেলসমূহ, যা প্রসার ভারতীর মাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়ে থাকে, ৩) প্ল্যাটফর্ম সার্ভিস চ্যানেল- যেগুলি ডিপিও-র মালিকানাধীন এবং তাদের দ্বারা পরিচালিত এবং কেবলমাত্র তাদের সাবস্ক্রাইবারদের জন্যই সম্প্রচার করা হয়ে থাকে, ৪) গ্রাউন্ড চ্যানেল- যা একেবারেই এলাকাভিত্তিক এবং লোকাল চ্যানেল নামে পরিচিত। মোটামুটি ভাবে এগুলি নিয়েই চলে কেবল টিভি নেটওয়ার্ক।
প্ল্যাটফর্ম সার্ভিসের মাধ্যমে কিছু নির্দিষ্ট চ্যানেল লোকাল কেবল অপারেটর এবং ডিটিএইচ অপারেটরদের দেখিয়ে থাকে। যারা স্যাটেলাইট চ্যানেল সম্প্রচার করে সেই সম্প্রচারকরা এ পরিষেবা দেয় না এবং এখনকার নিয়মে এই চ্যানেলগুলি কোনওরকম অনুশাসনের আওতায় পড়ে না। অন্যদিকে স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলিকে ভারত সরকার দ্বারা রেজিস্টার্ড হতে হয়, অর্থাৎ তাদের সম্প্রচারের জন্য তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রকের অনুমতি লাগে।
২০১৪ সালে প্ল্যাটফর্ম পরিষেবার সংজ্ঞা দিয়েছিল টেলিকম রেগুলেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা ট্রাই। "ডিপিও গুলি কেবলমাত্র তাদের নিজেদের সাবস্ক্রাইবারদের জন্য প্ল্যাটফর্ম সার্ভিস দিতে পারবে এবং দূরদর্শন চ্যানেল ও রেজিস্টার্ড টিভি চ্যানেল এর মধ্যে পড়বে না। প্ল্যাটফর্ম সার্ভিসের মধ্যে ভারতে রেজিস্টার্ড নয় এমন বিদেশি টিভি চ্যানেলও পড়বে না।"
এ পরিষেবার আওতায় কী পড়ে?
লোকাল কেবল অপারেটররা স্থানীয়ভাবে বিষয়ভিত্তিক এরকম কিছু চ্যানেল দেখায়, এর মধ্যে লোকাল নিউজ অন্যতম। ডিটিএইচ অপারেটররা এই প্ল্যাটফর্ম পরিষেবা মুভিজ অন ডিম্যান্ড, ভিডিও অন ডিম্যান্ড, পে পার ভিউ ইত্যাদি পরিষেবার জন্য ব্যবহার করে থাকে। এগুলির জন্য সাবস্ক্রাইবারদের আলাদা ভাবে অর্থ দিতে হয়।
নমো টিভি কি প্ল্যাটফর্ম পরিষেবা?
প্ল্যাটফর্ম পরিষেবা প্রতিটি ডিটিএইচ অপারেটরদের জন্য আলাদা আলাদাই হয়ে থাকে, তবে নমো টিভি সারা দেশ জুড়েই প্রায় সব ডিটিএইচ অপারেটররাই সম্প্রচার করেছেন। ২০১৪ সালে এবং তারও আগে, ২০০৬ সালে ডিটিএইট অপারেটররা এই পরিষেবার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধে আপত্তি তুলেছিল। ২০১৪ সালে ট্রাইয়ের সুপারিশ ছিল, এ ধরনের সব পরিষেবাকেই তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রকের দ্বারা রেজিস্টার্ড হতে হবে এবং এ পরিষেবা কারা চালাচ্ছে তার বিস্তারিত বিবরণ ও কোম্পানির নাম নিবন্ধীকরণ করতে হবে। ট্রাইয়ের সুপারিশে এও বলা হয়েছিল যে একই প্ল্যাটফর্ম পরিষেবা একাধিক ডিটিএইচ সম্প্রচার করতে পারবে না। প্রসঙ্গত নমো টিভি দেখা যাচ্ছে সারা দেশে বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। প্ল্যাটফর্ম পরিষেবার ক্ষেত্রে কোনও আইন অবশ্য এখনও আনা হয়নি।
এই পরিষেবা কি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণমুক্ত?
যেহেতু এই পরিষেবার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের কোনও অনুমতি লাগে না, ফলে মন্ত্রক এ ক্ষেত্রে কোনও শাস্তিও দিতে পারে না, যা যে কোনও অন্য চ্যানেলের ক্ষেত্রে নেওয়া সম্ভব। তবে অন্য কিছু উপায় না থাকলেও, এ ধরনের পরিষেবাকে দুটি আইনের আওতায় পড়তেই হয়, এক) সংবিধানের উনিশ নং অনুচ্ছেদ, যার আওতায় পড়ে বাকস্বাধীনতা এবং ১৯৯৪ সালের অ্যাডভ্যার্টাইজমেন্ট অ্যান্ড প্রোগ্রাম কোড অফ কেবল টিভি অ্যাক্ট- চ্যানেলে সম্প্রচারিত বিষয়বস্তু এই আইনের আওতাধীন।
Read the Story in English