Advertisment

নরেন্দ্র মোদী প্রমাণ লোপাট করেননি, বলল কমিশন

২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সবরমতী এক্সপ্রেসে দগ্ধ এস-৬ কোচ পরিদর্শন করবার সময়ে "প্রমাণ লোপাট" করার অভিযোগ ছিল মোদীর বিরুদ্ধে। সে অভিযোগ থেকে কমিশন মোদীকে মুক্তি দিয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Nanavati Commission Report, Gujarat Riot

পাঁচ বছর আগে এই রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছিল তৎকালীম মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেনের কাছে

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জিটি নানাবতী এবং এ এইচ মেহতা কমিশনের রিপোর্ট বুধবার বিধানসভায় পেশ করেছে গুজরাট সরকার। এই কমিশন ২০০২ সালে গোধরায় ট্রেনে আগুন এবং তার পরবর্তী দাঙ্গার তদন্ত করেছিল।

Advertisment

পাঁচ বছর আগে ২০১৪ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেন প্যাটেলের কাছে এই রিপোর্ট পেশ করা হয়। গুজরাট হাইকোর্টে রাজ্য পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ডিজি আর বি শ্রীকুমারের দায়ের করা একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে এই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল।

৯ খণ্ডের এই রিপোর্টে পৃষ্ঠাসংখ্যা ২,৫০০-রও বেশি। এতে ৪৪,৪৪৫টি হলফ নামা রয়েছে। এর মধ্যে ৪৮৮টি হলফনামা বিভিন্ন রাজ্য সরকারি আধিকারিকদের।

২০০৮ সালে কমিশনের প্রথম রিপোর্ট পেশ করা হয়। এ রিপোর্টেও মোদীকে সমস্ত অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তখন সে রিপোর্ট ছিল এক খণ্ডের এবং তার মূল ফোকাস ছিল ট্রেনে আগুনের ঘটনা।

নানাবতী কমিশনের রিপোর্টের মূল কী কী বিষয় উঠে এসেছে?

কমিশনে উঠে আসা তথ্য প্রকাশ করে রাজ্য সরকার জানিয়েছে, এই কমিশন-

*গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ও বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর তৎকালীন মন্ত্রিসভাকে ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ষড়যন্ত্র এবং তার পরে রাজ্য জুড়ে দাঙ্গার ব্যাপারে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে।

*শ্রীকুমার, রাহুল শর্মা এবং সঞ্জীব ভাট এই তিন প্রাক্তন আইপিএস অফিসারকে তাঁদের "নেতিবাচক" ভূমিকার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। গুজরাট সরকার এই তিনজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় স্তরে ব্যবস্থা নেবার কথা ঘোষণা করেছে।

Nanavati Commission Report, Gujarat Riot ট্রেনের কামরায় আগুন লেগে ৫৯ জনের মৃত্যুর পরই দাঙ্গা লাগে গুজরাটে (ছবি-এক্সপ্রেস আর্কাইভ)

রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রতিমন্ত্রী প্রদীপসিং জাদেজা এদিন বিধানসভায় রিপোর্ট পেশ করেন। তিনি বলেন, "কমিশন জানিয়েছে গোধরা পরবর্তী দাঙ্গা পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা তাঁর কোনও মন্ত্রী এই দাঙ্গার ষড়যন্ত্রী ছিলেন না। কোনও রাজ্য সরকারি কর্মীও এই দাঙ্গায় যুক্ত ছিলেন না।"

জাজেডা বলেন, "কমিশন তিনজন উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকের নেতিবাচক ভূমিকা লক্ষ্য করেছে... এঁরা হলেন আর বি শ্রীকুমার, রাহুল শর্মা এবং সঞ্জীব ভাট... আমরা এঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিদানের প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করব।"

কমিশনের কাছে এই তিন অফিসার কী বলেছিলেন?

শ্রীকুমার মোট ৯টি হলফনামা জমা দিয়েছেন কমিশনের কাছে। সেখানে তিনি বলেছেন, দাঙ্গা চলাকালীন পুলিশকে বেআইনি নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

শর্মা কমিশনের কাছে দুটি সিডি জমা দেন। দাঙ্গা যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, সে সময়ে রেকর্ড করা কিছু ফোন কল রয়েছে ওই দুটি সিডি-তে। এই কলগুলি সেলফোর্স এবং এটি অ্যান্ড টি নামক দুটি মোবাইল সংস্থার মাধ্যমে করা হয়েছিল।

সঞ্জীব ভাট কমিশনকে জানান, ২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মোদীর সভাপতিত্বে এক বৈঠকে তিনি হাজির ছিলেন। ভাটের বক্তব্য অনুসারে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী মোদী ওই বৈঠকে অফিসারদের "হিন্দুদের রাগের বহিঃপ্রকাশের সুযোগ" করে দেবার নির্দেশ দেন।

শ্রীকুমার বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। শর্মা স্বেচ্ছাবসর নিয়ে হাইকোর্টে আইন ব্যবসা করেন। সঞ্জীব ভাটকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১৯৯৬ সালের একটি ড্রাগ মামলায় তিনি এখন জেলে।

মোদী সম্পর্কে কমিশন ঠিক কী বলেছে?

২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বৈঠকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টা ধরে রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর সুযোগ করে দেবার নির্দেশ দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী, এ অভিযোগ কমিশন খারিজ করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন জাদেজা।

২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সবরমতী এক্সপ্রেসে দগ্ধ এস-৬ কোচ পরিদর্শন করবার সময়ে "প্রমাণ লোপাট" করার অভিযোগ ছিল মোদীর বিরুদ্ধে। সে অভিযোগ থেকে কমিশন মোদীকে মুক্তি দিয়েছে। ফেরবার সময়ে ওই কামরায় আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ফলে ৫৮ জনের মৃত্যু হয়। এঁদের অধিকাংশই ছিলেন করসেবক, তাঁরা অযোধ্যা থেকে ফিরছিলেন।

"২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি গোধরা গিয়ে দগ্ধ এস ৬ কোচ পরিদর্শনের মাধ্যমে তিনি পরিস্থিতি বোঝবার চেষ্টাই করেছিলেন, প্রমাণ লোপাট করতে যাননি", কমিশনের এমনটাই পর্যবেক্ষণ বলে জানিয়েছেন জাদেজা ।

মোদীর মন্ত্রীদের নিয়ে রিপোর্টে কী বলা হয়েছে?

জাদেজা তিনজন বিজেপি নেতার নাম উল্লেখ করেছেন এদিন। এঁরা হলেন প্রয়াত হরেন পাণ্ডিয়া, ভরত বারোট এবং প্রয়াত অশোক ভাট। জাদেজা বলেন, কমিশন জানিয়েছে এঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অসত্য।

জাদেজা বলেন, কমিশন বিজেপি নেত্রী মায়া কোডনানির সম্পর্কে কোনও পর্যবেক্ষণের কথা জানায়নি, কারণ নারোদা পাটিয়া গণহত্যা মামলার ষড়যন্ত্রী হিসেবে তখন তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলছিল।

বিভিন্ন এনজিও সম্পর্কে রিপোর্টে কী বলা হয়েছে?

তিনজন সিনিয়র আইপিএস অফিসার ছাড়া দুটি এনজিও-র ভূমিকাও নেতিবাচক বলে মনে করেছে কমিশন। এই দুটি সংস্থা হল প্রয়াত মুকুল সিনহা পরিচালিত জন সংঘর্ষ মঞ্চ এবং তিস্তা শেতলবাদ পরিচালিত জাস্টিস অ্যান্ড পিস।

জাদেজার কথায় এই দুটি সংস্থা আন্তর্জাতিক স্তরে মোদী, গুজরাট এবং গুজরাটিদের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চেয়েছিল।

জাদেজা বলেছেন, "যারা মোদীকে ভোটে হারাতে পারেনি, তারা ওঁর এবং গুজরাটের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক স্তরে নষ্ট করতে চেয়েছিল। কিন্তু পরের ভোটে গুজরাটের মানুষ তাঁদের যথেষ্ট শাস্তি দিয়েছে। ফলে আমি সে বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না... কমিশনের রিপোর্ট মোদী এবং গুজরাটকে কলঙ্কিত করার কংগ্রেসি ষড়যন্ত্র উন্মোচন করে দিয়েছে।"

narendra modi Godhra Riot
Advertisment