/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/11/Nathuram-LEAD.jpg)
দক্ষিণপন্থী জাতীয়তাবাদীরা, বিশেষ করে হিন্দু মহাসভা গডসেকে বারবার দেশপ্রেমিক বলে বর্ণনা করেছে
মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসের হত্যাকারীকে যারা দেশপ্রেমিক বলে মনে করে তাদের মতাদর্শ বিজেপির কাছে নিন্দিত। ২৮ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার, এ কথা বলেছেন দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। রাজনাথ সিং আরও বলেন, গান্ধীর দর্শন ভবিষ্যতেও প্রাসঙ্গিক থাকবে এবং তা জাতির কাছে পথনির্দেশিকার কাজ করবে।
বিজেপি সাংসদ প্রজ্ঞা সিং ঠাকুরে সংসদে গডসের প্রশংসা করার পর দিনই রাজনাথ সিংয়ের মন্তব্য সামনে এসেছে। প্রজ্ঞার বক্তব্য সংসদের কার্যবিবরণী থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
সংসদে এসপিজি নিয়ে বিতর্কের সময়ে ডিএমকে সাংসদ এ রাজা মহাত্মা গান্ধীকে খুন করার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। সে সময়ে প্রজ্ঞা ঠাকুর গডসের প্রশংসা করেন।
এরপর থেকে বিজেপি প্রজ্ঞা ঠাকুরের মন্তব্যের বিরোধিতা করতে শুরু করে। দলের কার্যকরী সভাপতি জেপি নাড্ডা সংসদীয় উপদেষ্টা কমিটি থেকে প্রজ্ঞাকে বাদ দেবার প্রস্তাব দিয়েছেন
নাথুরাম গডসের 'মতাদর্শ'
দক্ষিণপন্থী জাতীয়তাবাদীরা, বিশেষ করে হিন্দু মহাসভা গডসেকে বারবার দেশপ্রেমিক বলে বর্ণনা করেছে। তারা দেশভাগের জন্য গান্ধীকে দায়ী করে এবং বিশ্বাস করে সে সময়ে সরকারের নীতি ছিল "অন্যায্যভাবে মুসলিম পন্থী"।
একবছরের বেশি সময় ধরে চলা গান্ধী হত্যা মামলায় বক্তব্য রাখার সময়ে গান্ধীকে "পাকিস্তানের পিতা" বলে আখ্যা দেন গডসে। এই ভাষণটি পরে "কেন আমি গান্ধীকে হত্যা করেছি" শীর্ষক বই আকারে প্রকাশিত হয়।
গডসে তাঁর ভাষণের শুরুতে বলেছিলেন, "মার্ক্সবাদ, সমাজতন্ত্র, দাদাভাই নওরোজি, সাভারকর, স্বামী বিবেকানন্দ, গোপালকৃষ্ণ গোখলে সহ অন্যান্যদের লেখালিখি পড়ে আমার মনে হয়েছে আমার প্রথম কর্তব্য হল হিন্দুত্ব এবং হিন্দুদের সেবা করা আমার প্রথম কর্তব্য। দেশপ্রেমিক ও বিশ্বনাগরিক হিসেবে এটাই আমার কর্তব্য।"
তিনি আরও বলেন, "শিবাজি, রাণা প্রতাপ এবং গুরু গোবিন্দ সিংয়ের মত মানুষদের বিপথচালিত দেশপ্রেমিক বলে আখ্যায়িত করার মাধ্যমে গান্ধীজি নিজের দম্ভ নিজেই ফাঁস করে দিয়েছিলেন।"
"সত্য এবং অহিংসার নামে তিনি দেশে অবর্ণনীয় বিপর্যয় এনে দিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন একজন হিংস্র শান্তিকামী। অন্যদিকে রাণা প্রতাপ, শিবাজি এবং গুরু (গোবিন্দ সিং) দেশের মানুষের হৃদয়ে অমলিন হয়ে থাকবেন।"
"৩২ বছর ধরে প্ররোচিত হবার পর, ওঁর শেষ মুসলিমপন্থী অনশন আমাকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে বাধ্য করে যে ওঁর অস্তিত্ব শেষ করে দেওয়া প্রয়োজন।"
১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি নয়া দিল্লির বিড়লা হাউসের কাছে তাঁর ঘরের সামনে গান্ধীর বুকে তিনবার গুলি করেন গডসে।
গডসে বলেছেন, "আমি গুলি ছুড়েছিলাম এমন একজন ব্যক্তির দিকে যার নীতি ও ক্রিয়াকলাপ লক্ষ লক্ষ হিন্দুর ধ্বংসের কারণ হয়েছে। এমন কোনও আইনি পদ্ধতি নেই যার দ্বার এই অপরাধীকে এসবের জন্য অভিযুক্ত করা যায়, আমি অন্তিম গুলি চালিয়েছিলাম।"
গডসেকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৪৯ সালের ১৫ নভেম্বর গডসের ফাঁসি হয় আম্বালা জেলে।
বহু দিনের 'দেশপ্রেমিক'
প্রজ্ঞা ঠাকুর একাধিকবার এ কাজ করেছেন।
মে মাসে লোকসভা ভোটের সময়ে তিনি বলেছিলেন, "নাথুরাম গডসে দেশভক্তি ছিলেন, দেশভক্ত রয়েছেন, দেশভক্ত থাকবেন। যাঁরা ওঁকে জঙ্গি বলছে, তাদের নিজেদের অন্তরের দিকে তাকানো উচিত, এরকম লোকজনকে ভোটে উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।"
প্রজ্ঞা ঠাকুর এর পর ক্ষমাও চান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, "গান্ধী এবং নাথুরাম গডসেকে যে মন্তব্য উনি করেছেন তা সমাজের পক্ষে অত্যন্ত ভুল... উনি ক্ষমা চেয়েছেন বটে, কিন্তু আমি কোনওদিনও ওঁকে সম্পূর্ণ ক্ষমা করতে পারব না।"
২০১৩ সালে শিবসেনার মুখপত্র সামনার এক সম্পাদকীয়তে লেখা হয় "পণ্ডিত" নাথুরাম গডসে ইতালি থেকে আসেননি, তিনি ছিলেন একজন "সাচ্চা দেশপ্রেমিক"।
২০১৫ সালে বিজেপির সাংসদ সাক্ষী মহারাজ গডসেকে দেশপ্রেমিক হিসেবে আখ্যা দেন।
২০১৭ সালে হিন্দু মহাসভা তাদের গোয়ালিয়র দফতরে ব্যাপক সমর্থকদের সামনে গডসের আবক্ষ মূর্তি বসায়।
এ বছরের গোড়া সুরাটের এক মন্দিরে গডসের জন্মবার্ষিকী উদযাপন করেন ৬ হিন্দু মহাসভার কর্মী। একই সঙ্গে হিন্দু মহাসভা দাবি করে, আদালতে গডসের বিবৃতি স্কুল পাঠসূচির অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
এ মাসেই গডসের পুজো করেছেন অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার নেত্রী তথা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আত্মীয়া রাজ্যশ্রী চৌধুরী। এরপর গোয়ালিয়র পুলিশ মহাসভার মুখপাত্র নরেশ বাথামের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩এ ধারায় মামলা রুজু করে। গডসেকে প্রশংসা করে এবং দেশভাগের জন্য গান্ধীকে দায়ী করে একটি লিফলেট বিলি করার জন্য এই মামলা করা হয়।