১৯৪৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস তিন দিনের সফরে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পোর্টব্লেয়ার পৌঁছন। এই সফরকালে তিনি জিমখানা গ্রাউন্ড, যা বর্তমানে নেতাজি স্টেডিয়াম বলে পরিচিত, সেখানে ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে, ১৯৪২ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এই দ্বীপ ছিল জাপানিদের শাসনে। ওই দিন তা সুভাষ বোসের আজাদ হিন্দ সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। যদিও কার্যত তা জাপানেরই নিয়ন্ত্রণে ছিল।
আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ভারত মহাসাগরের ভারতীয় ভূমি, মায়ানমার ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে অবস্থিত এবং গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দরের নিকটবর্তী।
এই দ্বীপপুঞ্জ শুরুতে ছিল ওলন্দাজদের শাসনে, পরে তা ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে তার দখল নেয় জাপানি সামরিক বাহিনী।
সুভাষ বোস যুদ্ধের সময়ে জাপানিদের মিত্রশক্তি ছিলেন। তিনি ১৯৪৩ সালের অগাস্ট মাসে এক জনসভায় ঘেষণা করেন সে বছর শেষ হবার আগেই ভারতের মাটিতে উপস্থিত হবে আজাদ হিন্দ ফৌজ।
২৪ অক্টোবর সিঙ্গাপুরে ৫০ হাজার ভারতীয়ের উপস্থিতিতে সুভাষ বোস ফের সে কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, "বছর শেষ হবার আগেই তিনি ভারতের পবিত্র ভূমিতে" পা রাখবেন।
১৯৪৩ সালের শেষাশেষি আজাদ হিন্দ সরকার জাপানিদের কাছ থেকে এই দ্বীপপুঞ্জের দখল নেয়। সুভাষ বোস পোর্ট ব্লেয়ারে হাজির হন ২৯ ডিসেম্বর।
হারভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ সুগত বোস লিখেছেন, সুভাষ বোস ২৯ ডিসেম্বর পোর্ট ব্লেয়ারে উপস্থিত হয়ে নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন। তাঁর এই উপস্থিতি ছিল প্রতীকী। ব্রিটিশরা আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের সেলুলার জেলে ভারতের মহান বিপ্লবীদের বন্দি করে রেখেছিল। এখানে বহু বিপ্লবীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রাখা হয়। বহু জনকে মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হয়েছিল। যেসব বিপ্লবীরা এখানে বন্দি ছিলেন তাঁদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
"পোর্ট ব্লেয়ারের জিমখানা ময়দানে সমবেত জাতীয় সংগীতের মাধে তিনি ত্রিবর্ণ পতাকা উত্তোলন করেন। চলে যাবার আগে তিনি আন্দামানের নামকরণ করেন শহীদ দ্বীপ ও নিকোবরের নাম দেন স্বরাজ দ্বীপ।"