Advertisment

কীভাবে তৈরি হয়েছিল ভারতের জাতীয় পতাকা?

দেশ স্বাধীন হলেই তো আর হবে না। দেশের পরিচয়বাহক এমন পতাকাও তো প্রয়োজন। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হল, ভারতের জাতীয় পতাকা হবে তেরঙ্গা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

সময়টা ১৯৪৭ সাল ২২ জুলাই। পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুর ডাকে দিল্লির কনস্টিটিউশন হলে একত্রিত হয়েছেন ভারতের গণপরিষদের সদস্যরা। উদ্দেশ্য একটাই স্বাধীন ভারতের পতাকা কেমন হবে? দেশ স্বাধীন হলেই তো আর হবে না। দেশের পরিচয়বাহক এমন পতাকাও তো প্রয়োজন। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হল, "ভারতের জাতীয় পতাকা হবে তেরঙ্গা। উপরে থাকবে গেরুয়া, মধ্যে সাদা আর নীচে গাঢ় সবুজ।"

Advertisment

এর আগে অবশ্য মহাত্মা গান্ধী একটি পতাকা তৈরি করেছিলেন (কংগ্রেসের জন্য) যার মাঝে ছিল চরকা। সে পতাকাও ছিল তেরঙ্গা। কিন্তু ভারতের জাতীয় পতাকার ক্ষেত্রে অবশ্য চরকা তুলে দিয়ে অশোক চক্র বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। এই পতাকার বিষয়ে সুক্ষ্ম থেকে সুক্ষ্মতর পর্যায়ে আলোচনাও চলে। ১৪ অগাস্ট মাঝরাতে ক্ষমতা পাওয়ার পর ১৫ অগাস্ট লাল কেল্লায় ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু।

publive-image লালকেল্লা থেকে জাতীর উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন জওহরলাল নেহেরু

ভারতের প্রথম পতাকা কেমন দেখতে ছিল?

মনে করা হয় স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্যা সিস্টার নিবেদিতা প্রথম ভারতের পতাকার ডিজাইন তৈরি করেন। উনি ছিলেন একজন আইরিশ নাগরিক। ১৯০৪-১৯০৬ সালে এই পতাকার নকশা তৈরি হয়, এমনটাই জানায় ইতিহাস। আরেকটি বিষয় যদিও তর্কসাপেক্ষ তবে তথ্য জানায় যে ১৯০৬ সালের ৭ অগাস্ট কলকাতার পার্সি বাগান স্কোয়ারে ভারতের প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

publive-image

কেমন ছিল সেই পতাকা? তেরঙ্গা হলেও আজকের জাতীয় পতাকার সঙ্গে কোনও মিল ছিল না। পতাকার একদম উপরে সবুজ রঙ, মধ্যে হলুদ এবং শেষে ছিল লাল। মধ্যে লেখা ছিল 'বন্দে মাতরম'। মনে করা হয় এই পতাকার নকশা তৈরি করেছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী শচীন্দ্র প্রসাদ বোস এবং হেমচন্দ্র কানুনগো। লাল রঙের অংশে প্রতীক হিসেবে রাখা হয়েছিল সূর্য এবং চন্দ্র। অন্যদিকে সবুজ রঙের অংশে ছিল আটটি অর্ধন্মিলিত পদ্ম।

১৯০৭ সালে ম্যাডাম কামা এবং তাঁর বিপ্লবী সহকারীরা জার্মানিতে ভারতের পতাকা উত্তোলন করেন। সেই প্রথম যেখানে বিদেশের মাটিতে উড়েছিল ভারতের কোনও পতাকা। ১৯১৭ সালে অ্যানি বেসান্ত এবং লোকমান্য তিলক একটি নতুন পতাকা তৈরি করেছিল গৃহযুদ্ধ আন্দোলনের সময়। সেই পতাকায় ছিল সপ্তর্ষি মন্ডলের তারাবৃন্দ।

এখনের যে পতাকা আমরা দেখতে পাই, তার ইতিহাস কী?

ভারতের পতাকায় তেরঙ্গাকে স্থান দেওয়ার কথা প্রথম মহাত্মা গান্ধীকে জানান পিঙ্গালি বেঙ্কায়া। যিনি ভারতের স্বাধীনতা যোদ্ধা ছিলেন। সাল ১৮৯৯-১৯০২ মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয় দক্ষিণ আফ্রিকায়। তখন পিঙ্গালি সেখানে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মির হয়ে উপস্থিত ছিলেন।

এরপর জানান যায় ১৯১৬ সালে ভারতের পতাকার নকশা রেখে একটি বইও প্রকাশ করেন তিনি। ১৯২১ সালে কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভায় বাপুকে তিনি কয়েকটি পতাকার নকশা এঁকেও দেন। যেখানে লাল এবং সবুজ এই দুই রঙ ছিল হিন্দু এবং মুসলিম এই দুই ধর্মকে বোঝানোর জন্য। তবে গান্ধীজি জানান যে এই দুই রঙের মধ্যে সাদাও রাখতে হবে। কারণ ভারতে এই দুই ধর্মাবলম্বীরা ছাড়াও আরও ধর্মের লোক বসবাস করেন। দেশের উন্নতির প্রতীক হিসেবে চরকা রাখার কথা বলেন তিনি।

তবে পরবর্তীতে লাল রঙকে সরিয়ে গেরুয়া নিয়ে আসা হয় 'শক্তি এবং সাহসীকতার' প্রতীক অর্থে। সাদা রাখা হয় 'শান্তি এবং সত্যর' অর্থে এবং সবুজ রাখা হয় কৃষিপ্রধান দেশ ভারতের 'জমির উর্বরতা, বৃদ্ধি এবং শুভ' কামনার্থে। পরবর্তীতে পতাকাটির কোনও ধর্মীয় ব্যাখ্যা যেন না থাকে সেদিকেই নজর দেওয়া হয়েছিল।

Read the full story in English

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Independence Day
Advertisment