Advertisment

বিশ্লেষণ: এনপিআর কী, এ নিয়ে এত বিতর্ক কেন?

আসাম এনআরসি-তে ২০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়ার প্রেক্ষাপটে এনপিআর চালু হচ্ছে। সরকার বলছে সারা দেশে এনআরসি লাগু হবে। এর ফলেই এ দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এনপিআর।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NPR, NRC, AADHAAR

২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে এনপিআর আপডেট করার কাজ সম্পন্ন হবে

আসাম এনআরসি-তে ৩.৩ কোটি আবেদনকারীর মধ্যে ১৯ লক্ষের নাম বাদ যাবার পরিপ্রেক্ষিতে উঠে এসেছে ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনপিআর)-এর কথা। যা দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি করেছে।

Advertisment

এর আগে আধার কার্ডের তথ্য সংগ্রহ নিয়ে নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকারের বিতর্ক সামনে এসেছিল। এনপিআরের ক্ষেত্রে ভারতের বাসিন্দাদের আরও বেশি তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এসব নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তার মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক দেশ, এক কার্জের কথা তুলে দিয়েছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন, সারা দেশে এনআরসি কার্যকর হবে।

এনপিআর কী?

এনপিআর হল দেশের সাধারণ বাসিন্দাদের এক তালিকা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বক্তব্য অনুযায়ী, যাঁরা অন্তত গত ৬ মাস ধরে একটি এলাকায় থাকছেন, বা পরবর্তী ৬ মাস ধরে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় থাকার পরিকল্পনা করছেন তাঁরাই দেশের সাধারণ বাসিন্দা। এনআরসি-তে যেমন নাগরিকত্বের বিষয় রয়েছে, এনপিআর তেমন কিছু নয়। ৬ মাসের বেশি সময় ধরে কোনও ভিনদেশি কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় বসবাস করলে তাঁর নামও এ তালিকায় নথিভু্ক্ত হবে।

আরও পড়ুন, এক কার্ডেই সব তথ্য: অমিত শাহের প্রস্তাব নতুন নয়

১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন ও ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব (নাগরিকের নথিভুক্তিকরণ ও জাতীয় আইডেন্টিটি কার্ড) বিধি অনুসারে এনপিআর তৈরি করা হচ্ছে। ভারতের প্রত্যেক স্বাভাবিক বাসিন্দার এনপিআরে নাম নথিভুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক।

২০২১ সালের জনগণনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেলের দফতর এই কাজ চালাবে। আসামে যেহেতু সদ্য এনআরসি-র কাজ শেষ হয়েছে, সেখানে এনপিআর হবে না।

এনপিআর প্রক্রিয়া চলবে স্থানীয়, উপজেলা, জেলা, রাজ্য ও জাতীয় স্তরে। রেজিস্ট্রার জেনারেলের দফতর ইতিমধ্যেই এখটি পাইলট প্রকল্প চালুও করে দিয়েছে। ১২০০ জেসা ও ৪০টি ছোট বড় শহরের বাসিন্দাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এই শুমারি চূড়ান্ত পর্যায়ে শুরু হবে, শেষ হবে ২০২০-র সেপ্টেম্বরে।

এ নিয়ে এত বিতর্কের কী আছে?

আসাম এনআরসি-তে ২০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়ার প্রেক্ষাপটে এনপিআর চালু হচ্ছে। সরকার বলছে সারা দেশে এনআরসি লাগু হবে। এর ফলেই এ দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এনপিআর। আধার এবং গোপনীয়তা নিয়ে চলমান বিতর্কের মাঝেই এনপিআরে ভারতের বাসিন্দাদের ব্যক্তিগত তথ্য আরও অনেক বেশি পরিমাণে সংগ্রহ করা হতে চলেছে।

জাতীয় স্তরে এনআরসি কার্যকর করার ভাবনা প্রয়োগ করা করতে গেলে তার ভিত্তি হবে এই এনপিআর-ই। বাসিন্দাদের তালিকা প্রস্তুত হয়ে গেলে জাতীয় স্তরে এনআরসি তৈরি করা সম্ভব হবে এই তালিকা থেকে নাগরিক যাচাই করার মাধ্যমে।

আরও পড়ুন, ‘চূড়ান্ত’ এনআরসি কেন চূড়ান্ত নয়?

আধার, ভোটার কার্ড, পাসপোর্ট এবং অমিত শাহ যে এক কার্ডের তত্ত্ব দিয়েছেন, সে সবের তথ্যসম্ভারও হয়ে উঠবে এই এনপিআর। মঙ্গলবার অমিস শাহ এক অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেছেন, "এই আলাদা আলাদা পদ্ধতির ব্যবস্থাপনা আমাদের বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, যদি আমরা জনগণনা ডিজিটাল পদ্ধতিতে করি, তাহলে সব কার্ডই এক কার্ডের মধ্যে চলে আসবে। সরকার এ ব্যাপারে কোনও পরিকল্পনা এখনও করেনি, কিন্তু সফল ডিজিটাল জনগণনা মানুষের উপকারে আসবে এই সম্ভাবনার কথা আমিবলতে চাই।"

এনপিআর কি নতুন ধারণা?

না। ইউপিএ সরকারের আমলে যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন পি চিদাম্বরম, সেই ২০০৯ সালে এই ধারণার কথা ওঠে। সে সময়ে মনে করা হয়েছিল, এই প্রকল্পের চেয়ে আধার কার্ড বেশি কাজে আসবে।

এনপিআরের তথ্য প্রথম সংগ্রহ করা হয় ২০১০ সালে, ২০১১-র জনগণনার জন্য। ২০১৫ সালে বাড়ি বাড়ি ঘুরে সার্ভের মাধ্যমে সে তথ্য আরও আপডেট করা হয়।

তবে বর্তমান সরকার ২০১৬ সালে সরকারি সুযোগসুবিধাদানের ব্যাপারে আধারকেই গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। ৩ অগাস্টের নোটিফিকেশনের মাধ্যমে অবশ্য ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেলের দফতর এনপিআরের ভাবনাকে ফের সামনে নিয়ে এসেছে। ২০১৫ সালের এনপিআর নতুন তথ্যের মাধ্যমে আপডেট করার কাজ শুরু হয়েছে যা ২০২০-র মধ্যে সম্পন্ন হবে। আপডেট করা তথ্য ডিজিটাইজেশনের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে।

এনপিআর কী ধরনের তথ্য সংগ্রহ করবে?

জনবিন্যাসের তথ্য এবং বায়োমেট্রিক তথ্য দুইই সংগ্রহ করবে এনপিআর। জনবিন্যাসের তথ্যের ১৫টি বিভাগ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে নাম, জন্মস্থান, শিক্ষা ও পেশা যা রেজিস্ট্রার জেনারেলের দফতর সংগ্রহ করবে। বায়োমেট্রিক তথ্যের জন্য নির্ভর করা হবে আধারের উপর। সে জন্য বাসিন্দাদের আধার তথ্য চাওয়া হবে।

আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: মোদীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদ থেকে বাঙালি বাদ

এ ছাড়া পরীক্ষামূলকভাবে মোবাইল নম্বর, আধার, প্যান কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার আইডি কার্চ এবং পাসপোর্ট (ভারতীয় নাগরিকদের ক্ষেত্রে) চাইছে রেজিস্ট্রার জেনারেলের দফতর। জন্ম ও মৃত্যুর শংসাপত্র রেজিস্ট্রেশন আপডেট করার কাজও চলছে।

২০১০ সালে, রেজিস্ট্রার জেনারেলের দফতর কেবলমাত্র জনবিন্যাসের তথ্য সংগ্রহ করেছিল। ২০১৫ সালে তা আপডেট করা হয় মোবাইল নম্বর, আধার ও রেশন কার্ডের নম্বরের মাধ্যমে। ২০২০ সালে রেশন কার্ডের তথ্য বাদ দেওয়া হবে, কিন্তু আরও তথ্য যোগ করা হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সূত্র জানিয়েছে এনপিআরে নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক, তবে প্যান, আধার, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং ভোটার আইডি দেওয়া স্বেচ্ছামূলক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, "এসব বাধ্যতামূলক করা মানেই অকারণে আইনি ঝামেলা ডেকে আনা। এখনও পর্যন্ত এগুলিকে বাধ্যতামূলক করার কোনও প্রস্তাব নেই। আমরাও নাগরিকদের উপর আস্থা রাখছি। যেসব তথ্য দেওয়া হচ্ছে তা যাচাই করার জন্য কোনও নথি চাওয়া হচ্ছে না। পাইলট প্রকল্পে আমরা দেখেছি মানুষ স্বেচ্ছায় তথ্য দিচ্ছেন। দিল্লির মত কিছু শহর এলাকায়ই কেবলমাত্র আমরা কিছুটা প্রতিরোধের মুখে পড়েছি।"

বাসিন্দারা যাতে অনলাইনে এনপিআর আপডেট করতে পারেন, সে ব্যবস্থাও রেখেছে মন্ত্রক।

সরকার এত তথ্য চাইছে কেন?

গোপনীয়তা নিয়ে প্রভূত সংশয়ের মধ্যে সরকারের এত তথ্য সংগ্রহের দু ধরনের কারণ রয়েছে। প্রথমত সরকার বলছে, সব দেশের কাছেই তার বাসিন্দাদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য থাকা প্রয়োজন কারণ ার ফলে সরকার আরও ভালভাবে নীতিনির্ধারণ করতে পারবে এবং জাতীয় নিরাপত্তাকেও সাহায্য করবে।

আরও পড়ুন, আসাম এনআরসি: উৎকণ্ঠার অবসান নাকি উৎকণ্ঠার সূত্রপাত?

দ্বিতীয়ত, সরকারের বক্তব্য, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার আইডি এবং প্যানের মত তথ্য থাকলে যাঁরা ভারতে বাস করছেন, তাঁদের লাল ফিতের ফাঁস এড়ানো সহজতর হবে। এর ফলে কাগজেকলমের কাজ কমবে বলেও মনে করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আধিকারিক।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আধিকারিক বলছেন, সরকারি নথির এক এক জায়গায় কোনও নাগরিকে এক একটি জন্মতারিখ রয়েছে, এবং এ সমস্যা বহুল। এনপিআর এ সমস্যাকে দূর করবে। এনপিআরের তথ্য থাকলে সরকারি কাজে কাউকে আর আলাদা করে বয়স, তারিখ, ঠিকানা এবং অন্যান্য সব খুঁটিনাটি সংক্রান্ত প্রমাণপত্র দিতে হবে না। সরকার বলছে, এর ফলে ভোটার লিস্টে কারচুপিও এড়ানো যাবে।

আধিকারিকরা আরও জানাচ্ছেন এনপিআরের তথ্য গোপন রাখা হবে, অর্থাৎ কোনও তৃতীয় পক্ষের কাছে তা দেওয়া হবে না। তবে এত ব্যাপক তথ্য সংরক্ষণের উপায় কী তা অবশ্য পরিষ্কার নয়।

Read the Full Story in English

Citizenship Bill nrc
Advertisment