ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার মধ্যেই ন্যাটো তাদের সদস্যভুক্ত দেশগুলোয় সেনাসংখ্যা বাড়াচ্ছে। গোটা পূর্ব ইউরোপজুড়েই এটা চলছে। গত সপ্তাহেই ন্যাটো প্রধান জেনস স্টোলেনবার্গ এই সেনা মোতায়েন করার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু, ইউক্রেনে ন্যাটো এখনও সেনা পাঠায়নি। সেটা, কেন? এক্ষেত্রে নানা মুনির নানা মত।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ এক্ষেত্রে ন্যাটো গোষ্ঠীর ৫ নম্বর আইনের কথা উল্লেখ করছেন। এই আইন অনুযায়ী, ন্যাটোভুক্ত কোনও সদস্য দেশ আক্রান্ত হলে, বাকি সদস্য দেশগুলো মিলিতভাবে এই হামলাকে তাদের সকলের ওপর হামলা বলে ধরে নেয়। সেই আইনের বলেই, ন্যাটো বৃহত্তর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
এই পরিস্থিতিতে রাশিয়া যদি ইউক্রেনের প্রতিবেশী ন্যাটোভুক্ত দেশে হামলা চালায়, তবে পালটা হামলা চালাতে তাই ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর অসুবিধা নেই। কিন্তু, ইউক্রেন এখনও ন্যাটোভুক্ত দেশ নয়। বরং, ন্যাটোর সদস্য হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিল। যাতে তীব্র আপত্তি ছিল মস্কোর।
ন্যাটোর এই ৫ নম্বর আইন সম্পর্কে জানতে হলে, এর জন্মলগ্নের ইতিহাস জানাটা জরুরি। ১৯৪৯ সালে 'দি নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন' বা ন্যাটো তৈরি হয়। সেই সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন গোটা বিশ্বের অন্যতম বড় শক্তি ছিল। তাকে ঠেকাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার পাশাপাশি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ন্যাটোর জোট গঠন করে। এই জোট গঠনের শর্ত ছিল, ন্যাটোর সদস্যরা আক্রান্ত হলে, বাকি সদস্যরা মিলিতভাবে সেই দেশকে রক্ষা করবে।
তারপর থেকে যতবার ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো আক্রান্ত হয়েছে, দেখা গিয়েছে বাকি সদস্যরা মিলিতভাবে পালটা হামলায় অংশগ্রহণ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১-য় জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার হামলার জবাবেও ন্যাটোকে একজোট হয়ে আফগানিস্তানে হামলা চালাতে দেখা গিয়েছে।
বর্তমানে ইউক্রেন পশ্চিমী প্রতিরক্ষা জোটের সদস্য। গত মাসের শেষদিকে অবশ্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি ইউক্রেনকে ন্যাটোর পূর্ণকালীন সদস্য করে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু, সেই আহ্বানের ফয়সালা হয়নি। তার আগেই রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালিয়েছে।
তার প্রেক্ষিতে ন্যাটো জোটের ৪ নম্বর আইন অনুযায়ী পরিচালন কমিটির সদস্যদের বৈঠক ডেকেছিলেন ন্যাটোকর্তারা। দীর্ঘ কয়েক দশকের ইতিহাসে জরুরি পরিস্থিতির বিবেচনায় এভাবে বার ছয়েক পরিচালন কমিটির বৈঠক ডেকেছে ন্যাটো। কিন্তু, ওই পর্যন্তই। ইউক্রেন ন্যাটোভুক্ত না-হওয়ায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে তার বেশি হস্তক্ষেপ করতে চায়নি ন্যাটোর সদস্য দেশগুলো।
Read story in English