বহু বিলম্বের পর ২০১৭ সালের তথ্য সোমবার প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি)। কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ বাদ দিয়ে ২০১৬ সালের অপরাধের রিপোর্টের থেকে এবারের রিপোর্ট বেশি তথ্যসমৃদ্ধ। এনসিআরবি এবার ৩০টিরও বেশি নতুন বিভাগ ও উপবিভাগ এবারের রিপোর্টে যোগ করেছে।
এবারের রিপোর্টে গণপিটুনি, খাপ হত্যা, প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা হত্যা এবং ধর্মীয় কারণে হত্যা সম্পর্কিত তথ্য বাদ দেওয়া হয়েছে।
২০১৫ সালের কৃষক আত্মহত্যার তথ্য এখনও প্রকাশিত হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। ২০ মাস আগে এ সম্পর্কিত তথ্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: দেশে সাইবার অপরাধ এক লাফে বেড়েছে ৭৭ শতাংশ
এনসিআরবি অপরাধ তথ্য: নতুন বিভাগ
অন্তত চারটি বিভাগে তথ্য বিভাজিত করা হয়েছে। সেগুলি হল মহিলা ও শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ, দলিতদের বিরুদ্ধে অপরাধ, দুর্নীতির মামলা, এবং মামলা শেষ করতে পুলিশ ও আদালতের যে সময় লেগেছে। এই প্রথম এনসিআরবি মহিলা ও শিশুদের বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধের বিভাগ সংযুক্ত করেছে রিপোর্টে।
দলিতদের ক্ষেত্রে এনসিআরবি এই প্রথমবার তফশিলি জাতি উপজাতি (নৃশংসতা প্রতিরোধ) আইনে নথিবদ্ধ মামলার সঙ্গে সঙ্গে অপমান, জমি ছিনিয়ে নেওয়া ও সামাজিক ভাবে একঘরে করার মত ঘটনার তথ্যও প্রকাশ করেছে।
সরকারি চাকুরেদের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলাও এবার নথিবদ্ধ করেছে এনসিআরবি। এ ছাড়াও অপরাধমূলক হুমকি, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে অনলাইন জালিয়াতি, অনলাইন গেমিংয়ের মাধ্যমে ইন্টারনেট ক্রাইম এবং ভিক্ষা করানোর উদ্দেশ্যে অপহরণের মত বিভাগ যুক্ত হয়েছে।
মহিলা ও শিশু
মহিলা ও শিশুদের মধ্যে মামলার ক্ষেত্রে এনসিআরবি এই প্রথম ধর্ষণের সঙ্গে হত্যা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করেছে। ২০১৭ সালে, সারা দেশে ৩৩৮৮৫ জন মহিলা ধর্ষিত হয়েছেন। এর মধ্যে ২২৭টি ক্ষেত্রে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধি ও পকসো আইনে মোট ২৮, ১৫২ টি শিশুধর্ষণের মামলা নথিবদ্ধ হয়েছে। এর মধ্যে ১৫১ জনকে খুন করা হয়েছে।
তবে এনসিআরবি ২০১২ সালের ডিসেম্বরের গণধর্ষণের ঘটনার পর যে গণধর্ষণের বিভাগ যুক্ত করেছিল তা এবার আর রাখা হয়নি।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: সোশাল মিডিয়ায় আধার সংযোগ ও সুপ্রিম কোর্ট
মহিলাদের বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে এনসিআরবি ৪২৪২টি অপরাধের ঘটনা নথিবদ্ধ করেছে, যেখানে মহিলাদের স্টক করা হয়েছে, ব্ল্যাকমেল করা হয়েছে, অথবা তাঁদের মর্ফ করা ছবি ইন্টারনেটে আপলোড করা হয়েছে।
বিশেষ ও স্থানীয় আইনে সংঘটিত মহিলাদের বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধ উপবিভাগে, মহিলা কেন্দ্রিক অপরাধের সংখ্যা ৬০০। এর মধ্যে ২৭১টি তথ্য প্রযুক্তি আইনের আওতায় প্রকট যৌন উপাদান প্রকাশ করার জন্য।
এবারের রিপোর্টে গণপরিবহণ ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার বিভাগ সংযুক্ত করা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্থার ৪৭৯টি মামলা এবং গণপরিবহণে যৌন হেনস্থার ৫৯৯টি মামলার কথা এবারের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
এবছর নাবালকদের বিরুদ্ধে ৩৩,৬০৬টি মামলা নথিবদ্ধ হয়েছে এবং ৪০,৪২০জনকে আটক করা হয়েছে। এনসিআরবি বলেছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব নাবালকরা আইন ভঙ্গ করেছে তাদের অধিকাংশই ১৬-১৮ বছরের। ৪০,৪২০টির মধ্যে এ বয়সের নাবালকরা ২৯, ৪১৪টি মামলায় (৭২.২ শতাংশ) জড়িত।
বিচারে বিলম্ব
পুলিশের কাছে এবং আদালতে মুলতুবি থাকা মামলার পরিসংখ্যানও সংগ্রহ করেছে এনসিআরবি।
পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, ৪০ শতাংশ মামলায় চার্জশিট দিতে দেরি করেছে পুলিশ। ভারতীয় দণ্ডবিধির আওতায় সংঘটিত অপরাধে, পুলিশের ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট দেওয়ার কথা। কিন্তু পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সহ দাঙ্গার ক্ষেত্রে মামলার চার্জশিট দিতে ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে দেরি করেছে পুলিশ। সেখানে বলা হয়েছে, ৩ লক্ষ মামলা এক বছরের বেশি সময় ধরে তদন্ত মুলতুবি রয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৪০ শতাংশের বেশি মামলা ফাস্ট ট্র্যাকে কোর্টে পাঠানোর পর, সেখানে বিচার শেষ হতে তিন বছরের বেশি সময় লেগেছে। ৩৩৮৪টি মামলা ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে পাঠানোর পর ১০ বছরের বেশি সময় লেগেছে মামলা শেষ হতে।
২০১৭ সালে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে যে ৩৮ হাজারের মত মামলা শেষ হয়েছে, তার মধ্যে ৪৫০০ মামলা চলেছে ৫-১০ বছর ধরে। মাত্র ১১৫০০ টি মামলা ১ বছরের মধ্যে শেষ হয়েছে।
২০১৭ সালের শেষে আদালতে মুলতুবি ছিল মোট ২,৭১,৭৭৯টি মামলা।
অন্যান্য পরিসংখ্যান
দাঙ্গার বিভাগে এবার নজরদারদের কার্যকলাপ, জল, বিদ্যুৎ ও সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ এবং মিছিল চলাকালীন দাঙ্গার উপবিভাগ যুক্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়া ভুয়ো খবর ছড়ানোর মত নতুন বিভাগ যুক্ত করা হয়েছে, যার আওতায় ২৫৭টি অপরাধ নথিভুক্ত হয়েছে। ৯৫২টি নির্বাচন সংক্রান্ত অপরাধের কথা ২০১৭ সালে নথিবদ্ধ হয়েছে এবং ধর্ম সংক্রান্ত অপরাধ নথিবদ্ধ হয়েছে ১৮০৮টি। প্রকাশ্য স্থানে অশ্লীল কাজ এবং গানের জন্য ২৯,৫৫৭টি অপরাধের ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়েছে।
Read the Full Story in English