দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর সর্দার ভগৎ সিংয়ের পক্ষে সুর চড়িয়েছিলেন পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু। তিনি বলেছিলেন, 'এই ধরনের সাহস এক বিরল ঘটনা।' ভগৎ সিং-কে ১৯৩১ সালের ২৩ মার্চ ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। ওই দিনটি বর্তমানে শহিদ দিবস হিসেবে পালিত হয়। অনেকেই কংগ্রেসের অহিংসার সঙ্গে ভগৎ সিংয়ের বিপ্লবী দর্শনের ফারাক খুঁজে পান না।
নেহরুও অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন
সে যাই হোক, কংগ্রেস যখন স্বাধীনতা সংগ্রামে অহিংসার পথ বেছে নিয়েছিল, সেই সময়ে কংগ্রেসের অনেক তরুণ নেতাই ভগৎ সিংয়ের পথে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর হিংসাত্মক আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন। শুধু তাই নয়, সেই পথ বেছেও নিয়েছিলেন। জওহরলাল নেহরুও ছিলেন তেমনই একজন। যদিও তিনি নিজে গান্ধীজির অহিংসার ধারণার একজন মুখপাত্র ছিলেন। তারপরও তিনি কিন্তু, ভগৎ সিংয়ের সাহসিকতার প্রশংসা করেছিলেন। তাঁর বিপ্লবী পদ্ধতিগুলো যেন অনুধাবন করতে পেরেছিলেন।
কেন ভগৎ সিংয়ের ফাঁসি হয়েছিল?
১৯৩১ সালের ২৩ মার্চস, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিপ্লবী ভগত সিং, সুখদেব থাপার এবং এস রাজগুরুকে লাহোর জেলের প্রাঙ্গণে ফাঁসি দেওয়া হয়। ১৯২৮ সালে ব্রিটিশ পুলিশ অফিসার জন সন্ডার্সকে হত্যার জন্য 'লাহোর ষড়যন্ত্র মামলা' হয়েছিল। সেই মামলায় এই তিন জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
বিতর্কিত বিচার
ভগৎ সিং, সুখদেব এবং রাজগুরুকে দোষী সাব্যস্ত করার বিচারটি অবশ্য বিতর্কিত ছিল। প্রক্রিয়াটি দ্রুত করার জন্য, ভাইসরয় লর্ড আরউইন হাইকোর্টের তিন জন বিচারকের সমন্বয়ে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স পাস করিয়েছিলেন। এটিকে আইনি ঐতিহাসিকরা এক অবিচার হিসেবে দেখেছেন। কারণ, এটি হঠাৎ করে, কোনও বৈধ কারণ ছাড়াই, দ্রুত রায়ে পৌঁছনোর জন্য আইনের যথাযথ প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদনের একমাত্র জায়গা ছিল প্রিভি কাউন্সিল। যা ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত। আর, সেই আদালত ছিল ইংল্যান্ডে।
আরও পড়ুন- ঠাকুমা ইন্দিরার ইতিহাসই কি ফিরল নাতি রাহুলের জীবনে?
অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে আবেদন
আরউইনের অধ্যাদেশকে অবৈধ বলে চ্যালেঞ্জ করে পিটিশন বা আবেদন দাখিল হয়েছিল। তার পরও সেই অধ্যাদেশ মেনেই বিচার হয়েছে। ১৯৩০ সালের ৭ অক্টোবর, ট্রাইব্যুনাল এক ৩০০ পাতার রায় দেয়। সেই রায়ের উপসংহারে পৌঁছয় যে সন্ডার্সের হত্যাকাণ্ডে ভগৎ সিং, সুখদেব এবং রাজগুরু অংশ নিয়েছিলেন।
তাঁদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। যদিও তিন বিপ্লবী নিজেরা ফায়ারিং স্কোয়াডের মাধ্যমে তাঁকে হত্যার আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু, সেই আবেদন গৃহীত হয়নি। ভগৎ সিং তাঁর শেষ চিঠিগুলোর একটিতে লিখেছেন, 'আমি যুদ্ধ করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছি। আমার ফাঁসি হতে পারে না। আমাকে কামানের মুখে ঢুকিয়ে উড়িয়ে দাও।'