Congress-Ram Temple: সময়টা ১৯৪৯। তার ২২-২৩ ডিসেম্বর রাতে বাবরি মসজিদে একটি রাম লালা মূর্তি পাওয়া যায়। যা সরানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন জওহরলাল নেহেরু। কিন্তু, দেশভাগ এবং দাঙ্গার ক্ষত থেকে জন্ম নেওয়া দেশে প্রধানমন্ত্রী নেহরুর কথা মান্য করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ শুধুমাত্র তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কেকে নায়ার এবং শহরের ম্যাজিস্ট্রেট গুরু দত্ত সিং-ই নয়, ফৈজাবাদের কংগ্রেস নেতারাও অমান্য করেছিলেন।
- সেই সময় ফৈজাবাদের কংগ্রেস বিধায়ক ছিলেন বাবা রাঘব দাস।
- তাঁর সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন হিন্দু মহাসভার মহন্ত দিগ্বিজয়নাথ।
- ফৈজাবাদের কংগ্রেস নেতারাও নেহরুর নির্দেশ অমান্য করেছিলেন।
তৎকালীন কংগ্রেস বিধায়ক
সেই সময় ফৈজাবাদের কংগ্রেস বিধায়ক ছিলেন বাবা রাঘব দাস। তিনি মূর্তিটি অপসারণের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। এমনকী, মূর্তিটি সরানো হলে, বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগেরও হুমকি দিয়েছিলেন। তাঁর বই, 'The Demolition And The Verdict'-এ সাংবাদিক নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, '১৯৫০ সালে যখন কেন্দ্রীয় সরকার নেহেরুর নির্দেশে উত্তরপ্রদেশ সরকারকে পদক্ষেপের জন্য চাপ দিচ্ছিল, রাঘব দাস হুমকি দিয়েছিলেন যে যদি মূর্তিটি সরানো হয়, তাহলে আমি বিধানসভা এবং দল থেকে পদত্যাগ করব।'
অনন্য বিধায়ক রাঘব দাস
এই বিধায়ক আবার যে সে নন। তিনি ১৯৪৮ সালের উপনির্বাচনে ফৈজাবাদ আসনে জিতেছিলেন। প্রায় ১,৩০০ ভোটের ব্যবধানে তৎকালীন বিধায়ক এবং সমাজতন্ত্রী নেতা আচার্য নরেন্দ্র দেবকে পরাজিত করেছিলেন। নরেন্দ্র দেবের পদত্যাগের কারণেই এই উপনির্বাচন হয়েছিল। আচার্য নরেন্দ্র দেব সেই ১৩ বিধায়কের অন্যতম, যাঁরা একটি পৃথক সমাজতান্ত্রিক দল গঠন করার লক্ষ্যে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন।
কে এই রাঘব দাস?
রাঘবেন্দ্র মহারাষ্ট্রের পুনের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। রাঘব দাস নাম নিয়ে ১৭ বছর বয়সে বাড়ি ছাড়েন। 'সত্যের সন্ধানে', পূর্ব উত্তরপ্রদেশ জুড়ে ঘুরে বেড়ান। 'মৌনি বাবা' নামে একজন তপস্বীর কাছে হিন্দি শেখেন।
আরও পড়ুন- রামমন্দিরের পিছনে রাজীব গান্ধীর কৃতিত্ব, কী দাবি কংগ্রেসের?
পন্থ নিজে বেছেছিলেন রাঘব দাসকে
রাঘব দাসকে খোদ উত্তরপ্রদেশের (ইউপি)-র মুখ্যমন্ত্রী গোবিন্দ বল্লভ পন্থ উপনির্বাচনের জন্য বেছে নিয়েছিলেন। আধ্যাত্মিক মতাদর্শে প্রবলভাবে বিশ্বাসী রাঘব দাস যুক্তিবাদী নরেন্দ্র দেবের সঠিক ওষুধ ছিলেন। নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের বইয়ের লেখা অনুযায়ী, নরেন্দ্র দেবের পরাজয় নিশ্চিত করার জন্য, পন্থ নিজে অযোধ্যায় রাঘব দাসের পক্ষে প্রচার করেছিলেন। তিনি মন্দিরের শহর ফৈজাবাদের লোকেদের বলেছিলেন যে নরেন্দ্র দেব একজন নাস্তিক। তিনি ভগবান রামকে বিশ্বাস করেন না। মুখোপাধ্যায় তার বইয়ে লিখেছেন, 'পন্থ প্রচার করেছিলেন যে আচার্য নরেন্দ্র দেব টিকি রাখেন না। অথচ, ধর্মপ্রাণ হিন্দুদের কাছে টিকি অন্যতম সম্পদ।' বিশেষ করে, মন্দির শহর ফৈজাবাদে যা ঘরে ঘরে দেখা যায়।
আরও পড়ুন- নকশাতেই বাজিমাত, রামমন্দির ফেরাতে চলেছে রামায়ণের যুগের পরিবেশ!
রামজন্মভূমি আন্দোলনে কংগ্রেস যোগ
নবনির্বাচিত কংগ্রেস বিধায়ক গোড়া থেকেই রাম জন্মভূমি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৪৯ সালের ২০ অক্টোবর থেকে অযোধ্যায় রামচরিতমানসের নয় দিনের অখণ্ড পাঠ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানের শেষ দিনে বিধায়ক রাঘব দাস যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন হিন্দু মহাসভার মহন্ত দিগ্বিজয়নাথ। এই দিগ্বিজয়নাথ হলেন মহন্ত অবৈদ্যনাথের গুরুদেব। আর, মহন্ত অবৈদ্যনাথের শিষ্য হলেন যোগী আদিত্যনাথ। যোগী আদিত্যনাথ বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৪৯ সালের সেই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাম রাজ্য পরিষদের নেতা স্বামী করপাত্রী।