বিশ্বে অব্যাহত করোনা দাপট। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সম্প্রতি জানিয়েছে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এক কোটি পার করবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। তবে পাল্লা দিয়ে জোর কদমে এগোচ্ছে ভ্যাকসিন তৈরির কাজও। সম্প্রতি একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে যেখানে দেখা গিয়েছে যে এমএমআর (হাম, মাম্পস এবং রুবেলা) প্রতিরোধক ভ্যাকসিনগুলি (লাইভ অ্যাটেনিউয়েটেড ভ্যাকসিন) মানব শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাসের আক্রমণের ফলে তৈরি হওয়া ফুসফুসে সংক্রমণ এবং সেপসিস (রক্তে বিষক্রিয়া) প্রতিরোধ করতে পারছে। এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল এমবায়ো অনলাইন পত্রিকায়।
এই লাইভ অ্যাটেনিউয়েটেড ভ্যাকসিনগুলি আসলে কী?
কথায় বলতে গেলে 'বিষে বিষে বিষক্ষয়'। অর্থাৎ এই ভ্যাকসিনগুলিতে মাম্পস, হাম এবং রুবেলার ভাইরাসকেই তাদের শক্তি কমিয়ে মানবদেহে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়। ভাইরাসগুলির শক্তি হ্রাস করার কাজগুলি ল্যাবরেটরিতে করা হয়। এই ভ্যাকসিন যদি দেওয়া থাকে তাহলে নতুন করে পরিবেশ থেকে ভাইরাসরা ঢুকে আর আক্রান্ত করতে পারে না। এর বৈজ্ঞানিক কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে ততদিনে ওই দুর্বল ভাইরাসগুলি মানব দেহে তাদের চরিত্রের অ্যান্টিবডি (লিউকোসাইট বা হোয়াইট ব্লাড সেল) তৈরি করে ফেলে। তাই নতুন এমএমআর ভাইরাস ক্ষতি করতে পারে না শরীরে।
আরও পড়ুন, অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনই সবচেয়ে উন্নত, জানিয়ে দিল হু
করোনার বিরুদ্ধে কীভাবে কাজ করতে পারে এই ভ্যাকসিনগুলি তা দেখতেই গবেষকরা ছত্রাকের স্ট্রেন ব্যবহার করলেন। পরীক্ষাগারে সেই ছত্রাকের কলোনি তৈরি করে সেখানে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলেন। সাধারণ ভাবে যদি ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া একযোগে মানব শরীরে প্রবেশ করে সেক্ষেত্রে সেপসিস (রক্তে বিষক্রিয়া) শুরু হয়ে যায়। মৃত্যুও নিশ্চিত হয়ে পড়ে। কিন্তু দেখা গিয়েছে সেখানে এই ভ্যাকসিন সেপসিস তৈরি হতে দেয়নি। বরং সেপসিস বিরোধী সহজাত সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করছে।
এই গবেষণাটি করেছেন এলএসইউ হেলথ নিউ অরলিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের পল ফিডেল এবং টুলেন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনের মাইরি নোভের। ড: ফিডেল একটি বিবৃতিতে বলেন, "এই লাইভ অ্যাটেনিউয়েটেড ভ্যাকসিন যেমন এমএমআর কোনও প্রাপ্তবয়স্কের শরীরে দেওয়া হলে তা দেহে বাইস্টান্ডার কোষের বৃদ্ধি কমিয়ে দেবে। এর ফলে কোভিড-১৯ দ্বারা যে জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয় শরীরে সেই আশংকা কমে যাবে। এই বাইস্টান্ডার কোষগুলি অনেক বছর বেঁচে থাকে শরীরে তবে সারাজীবন নয়। অতএব যাদের এমএমআর ভ্যাকসিন নেওয়া আছে ছোটোবেলায় তাঁরা সহজেই করোনা ভাইরাসে তৈরি হওয়া সেপসিসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে। তাই কোভিড-সম্পর্কিত সেপসিস থেকে রক্ষা পেতে এই এমএমআর ভ্যাকসিন নেওয়া জরুরি।"
Read the story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন