বাচ্চাদের মাধ্যমে কি করোনা সংক্রামিত হতে পারে? প্রাথমিকভাবে চিকিৎসক থেকে বৈজ্ঞানিকমহল উত্তর ছিল একটাই- না। করোনা ভাইরাস সংক্রমণে বাচ্চাদের কোনও ভূমিকা থাকতে পারে না এমনটাই মনে করা হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক যে গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে সেখানে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যে প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই বাচ্চারাও করোনার বাহক হতে পারে।
কী কী গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে এই তথ্য তা দেখে নেওয়া যাক:
১. মার্কিন মুলুকে বিভিন্ন বয়সের বাচ্চাদের মধ্যে একটি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। একদম মৃদু উপসর্গবিশষ্ট কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত এমন ১৪৫টি কেসে প্রথম সপ্তাহ থেকেই উপসর্গ দেখা গিয়েছে এদের শরীরে। সেখানে ছিল ৫ বছরের কম, ৫-১৭ বছর বয়সি এবং প্রাপ্তবয়স্করা। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গিয়েছে ৫ বছরের নীচে যাদের বয়স ছিল তাঁরা বাকি দলের তুলনায় এই ভাইরাস সংক্রমণের অন্যতম বাহক হয়ে উঠছে। অ্যান অ্যান্ড রবার্ট এইচ লুরিয়ে হাসপাতালে এই সমীক্ষা চলে। হাসপাতাল থেকেই একটি বিবৃতি দিয়ে জানান হয় যে দেখা যাচ্ছে বাচ্চাদের মধ্যে দিয়েই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বেশি।
আরও পড়ুন, নতুন রূপে কি করোনার শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে? কেন এত ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে বিশ্বে?
২. ইটালিতে এই একই বিষয়ের উপর পরীক্ষানিরীক্ষা চলে। সেখান থেকে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে তা হল বাচ্চারা যদি করোনা ভাইরাসের সংস্পর্শে আসে তাহলে সেই ভাইরাসের বাহক হলেও অনেকক্ষেত্রেই তাঁরা নিজেরা সংক্রামিত হয় না। কিন্তু তাঁদের মাধ্যমে পরিবারের বাকিরা সংক্রামিত হতে পারে।
এই তথ্যের ভিত্তিতে ইটালির ট্রেন্টো অঞ্চলে একটি সমীক্ষা করা হয়। যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ২৮১২ থেকে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে ৬৬৯০তে পৌঁছয়। এদের মধ্যে ৮৯০ জনের দেহে করোনা উপসর্গ পাওয়া যায়। শতকরার হিসেবে দাঁড়ায় ১৩ শতাংশ। বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে এদের মধ্যে ১ থেকে ১১ বছর বয়সি যারা তাঁদের মাধ্যমে ৫০ জনের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ২৫ জন। অর্থাৎ যে তথ্য প্রাথমিকভাবে ইটালিতে বলা হচ্ছিল তাকেই মান্যতা দিয়েছে এই সমীক্ষা।
আরও পড়ুন, করোনা টেস্টের ভুল রিপোর্টে বিপদ বাড়ছে! সত্যিই কি আপনি ‘সুস্থ’?
৩. বাচ্চারাই সংক্রমণ বেশি ছরাচ্ছে কি না তা বুঝতে দক্ষিণ কোরিয়াতে ৫৯ হাজার ৭৩ জনের উপর সমীক্ষা করা হয়। যারা ৫ হাজার ৭০৬ জন কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছে। সাউথ কোরিয়া সেন্টার অফ ডিজিস কন্ট্রোলের তরফে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে সেখানে দেখা গিয়েছে আক্রান্তদের মধ্যে যাদের বাড়িতে ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সি বাচ্চা রয়েছে সেই সকল আক্রান্তের সংখ্যা ১৮.৬ শতাংশ। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে সেই হিসেব ১১.৮ শতাংশ।
এছাড়াও সুইজারল্যান্ডেও বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা হয়। সেখানকার জেনেভা জেনারেল হাসপাতালে মারর এবং এপ্রিল মাসে পরীক্ষা চলে। সমস্ত দিক, তথ্য, বিবৃতি এবং নথি বিচার করে গবেষকরা দেখেছেন যে বাচ্চারাই চট করে কোভিড-১৯ ভাইরাস নিজেদের দেহে নিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু তাঁদের ইমিউনিটি ক্ষমতায় বাধা পাচ্ছে কোভিড। ফলে সেই সকল বাচ্চাদের সংস্পর্শে যে সব প্রাপ্তবয়স্করা আসছে তাঁরা সহজেই আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। এক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন, তা হল বাচ্চাদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে করোনার কোনও উপসর্গও দেখা দিচ্ছে না। যা বর্তমানে করোনা ঝড়ের মাঝে চিন্তার মেঘ তৈরি করছে বিশ্বে।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন