কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ছত্তিসগড় সরকার সুপ্রিম কোর্টে জাতীয় তদন্ত আইন, ২০০৮-এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে। তাদের বক্তব্য এ আইন সংবিধানবিরোধী। কংগ্রেস সরকার তাদের আবেদনে বলেছে, রাজ্যের পুলিশি ব্যবস্থার উপর খবরদারি করার কোনও অধিকার এনআইএ-র নেই।
একই সপ্তাহে সংবিধানের ১৩১ নং অনুচ্ছেদের আওতায় কেন্দ্রীয় আইন সংবিধানবিরোধী বলে দুটি রাজ্য শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। মঙ্গলবার, কেরালা সরকার সুপ্রিম কোর্টে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তা আইন কেন্দ্রের সন্ত্রাসবাদবিরোধী সংস্থার হাতে রয়েছে। ২৬-১১-র মুম্বই হামলার পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম এই আইন প্রস্তাব করেন এবং সংসদে সামান্য বিরোধিতাসহ এ বিল পাশ হয়ে যায়।
২০০৮ সালের জাতীয় নিরাপত্তা আইন কী?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআই যেমন একমাত্র সত্যিকারের ফেডারেল এজেন্সি, তেমনই এই আইনবলে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি ভারতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী এজেন্সি হয়ে উঠবে। এদের ক্ষমতা হবে সিবিআইয়ের থেকেও বেশি। ভারতের যে কোনও প্রান্তে যে কোনও রকম সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের ক্ষেত্রে এনআইএ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করতে পারবে, রাজ্য সরকারকে না জানিয়ে রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে, তদন্ত করতে পারবে এবং গ্রেফতার করতে পারবে।
সুপ্রিম কোর্টের দরখাস্তে ছত্তিসগড় সরকার বলেছে, ২০০৮ সালের এই আইনবলে কেন্দ্র যে কোনও তদন্তের জন্য একটি সংস্থা তৈরি করতে পারবে, যা আদতে রাজ্য সরকারের এক্তিয়ার।
সংবিধানের সপ্তম তফশিল অনুসারে পুলিশ রাজ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত।
আবেদনে বলা হয়েছে, এই আইন পুলিশের মাধ্যমে কোনও ঘটনার তদন্ত করার ব্যাপারে রাজ্য সরকারের অধিকার খর্ব করে এবং কেন্দ্রের হাতে নিরঙ্কুশ, বিবেচনাধীন ও অবাধ ক্ষমতা তুলে দেয়। এই আইনে কোনও রকম সমন্বয় বা সম্মতির পূর্বশর্ত নেই, যা সংবিধানদত্ত রাজ্যের সার্বভৌম ক্ষমতার বিপরীত।
ছত্তিসগড়ের পক্ষ থেকে এই আইনের ৬(৪), ৬(৬), ৭ ও ৮ ধারা নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে।
যেসব ধারা ও বিধি নিয়ে আপত্তি, সেগুলি একবার দেখে নেওয়া যাক।
৬. তালিকাভুক্ত অপরাধের তদন্ত-
(৪) কেন্দ্রীয় সরকার যদি মনে করে কোনও অপরাধ তালিকাভুক্ত অপরাধের মধ্যে পড়ে এবং তার তদন্ত এজেন্সির করা উচিত, সেক্ষেত্রে সরকার উক্ত তদন্ত করতে এজেন্সিকে নির্দেশ দিতে পারে।
(৬) ৪ ও ৫ নং উপধারা অনুসারে কোনও নির্দেশ দেওয়া হলে রাজ্য সরকার এবং রাজ্য সরকারের কোনও পুলিশ অফিসার সে ব্যাপারে আর তদন্ত করতে পারবেন না এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র এজেন্সির হাতে তুলে দিতে হবে।
৭ নং ধারা- রাজ্য সরকারের হতে তদন্ত সমর্পণ- এই আইনের আওতায় কোনও অপরাধের তদন্তের সময়ে এজেন্সি অপরাধের গুরুত্ব অনুসারে দুটি কাজ করতে পারে
(ক) রাজ্য সরকারকে এই তদন্তের সঙ্গে যুক্ত হবার অনুরোধ করতে পারে অথবা
(খ) কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্ব অনুমোদন নিয়ে এই অপরাধের তদন্ত ও বিচারের জন্য মামলা রাজ্য সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে পারে।
৮ নং ধারা- সংশ্লিষ্ট অপরাধের তদন্তের ক্ষমতা- কোনও তালিকাভুক্ত অপরাধের তদন্তের সময়ে তালিকাভুক্ত অপরাধের সঙ্গে সংযুক্ত কোনও অপরাধ যদি অভিযুক্ত করে থাকে তারও তদন্ত করতে পারে।
গত বছর এনআইএ-তে যেসব বদল হয়েছে
২০১৯ সালের এনআইএ সংশোধনী আইনে যেসব অপরাধের তদন্ত এনআইএ করতে পারবে তার আওতাবৃদ্ধি করা হয়েছে। এজেন্সি এখন মানবপাচার, জাল নোট, নিষিদ্ধ অস্ত্র তৈরি ও বিক্রি, সাইবার সন্ত্রাস, এবং বিস্ফোরক আইনের তদন্ত করতে পারবে।
এই সংশোধনীতে কেন্দ্রীয় সরকার যে কোনও দায়রা আদালতকে এনআইএ বিচারের জন্য বিশেষ আদালত ঘোষণা করতে পারবে।
২০১৯ সালে পাশ হওয়া সংশোধিত ইউএপিএ আইনে একজন এনআইএ অফিসার খানাতল্লাশি করতে পারবেন, সন্ত্রাসবাদে যুক্ত এমন সন্দেহভাজন সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারবেন। এ ব্যাপারে রাজ্য পুলিশের ডিজির কোনও পূর্ব অনুমতি লাগবে না। তদন্তকারী আধিকারিকের একমাত্র এনআইএ ডিজির অনুমতিই লাগবে।