মুম্বইয়ের এক বিচারক ৫ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার নীরব মোদীকে পলাতক আর্থিক অপরাধী বলে ঘোষণা করেছেন। নীরব মোদী পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে জালিয়াতি কাণ্ডে অভিযুক্ত। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের আবেদন সাড়া দিয়ে বিচারক নীরব মোদীকে এই তকমা দিয়েছেন।
এ বছরের গোড়ায় মুম্বইয়েরই বিশেষ এক আদালত লিকার ব্যারন বিজয় মালিয়াকে ইডির আবেদনের ভিত্তিতে পলাতক অর্থনৈতিক অপরাধী ঘোষণা করে। বিজয় মালিয়াই ভারতে এ ধরনের প্রথম তকমাধারী।
আরও পড়ুন, নিত্যানন্দের নতুন দেশ: কী ভাবে গড়ে ওঠে নয়া রাষ্ট্র
বিজয় মালিয়া এবং নীরব মোদী দুজনেই ব্রিটেনে রয়েছেন, ভারতে প্রত্যার্পণের বিরুদ্ধে দুজনেই লড়াই চালাচ্ছেন।
পলাতক আর্থিক অপরাধী কে?
২০১৮ সালের পলাতক অর্থনৈতিক অপরাধী আইনে পলাতক আর্থিক অপরাধীর সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি যাঁর বিরুদ্ধে উক্ত অপরাধের জন্য ভারতের কোনও আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে, যিনি (১) ফৌজদারি বিচার এড়াতে ভারত ছেড়ে পালিয়েছেন, অথবা (২) যিনি বিদেশে রয়েছেন, কিন্তু ফৌজদারি বিচারপ্রক্রিয়া এড়ানোর উদ্দেশ্যে ভারতে ফিরতে চাইছেন না, তিনি পলাতক আর্থিক অপরাধী।
পলাতক আর্থিক অপরাধী আইনের লক্ষ্য হল, ভারতের আদালতের আওতার বাইরে থেকে যেসব আর্থিক অপরাধীরা আইনের হাত থেকে বাঁচতে চাইছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ।
পলাতক আর্থিক অপরাধী বিল লোকসভায় আনা হয় ২০১৮ সালের ১২ মার্চ। লোকসভায় এই বিল পাশ হয় ১৯ জুলাই। রাজ্যসভায় এ বিল পাশ হয় ২৫ জুলাই।
এ আইনের প্রয়োজনীয়তা কী?
আর্থিক অপরাধের সঙ্গে জালিয়াতি, জাল করা, অর্থ পাচার, কর ফাঁকি প্রভৃতি যুক্ত। এ ধরনের অপরাধের বিচার হয় ২০০২ সালের অর্থপাচার প্রতিষেধক আইন, ১৯৮৮ সালের বেনামি সম্পত্তি লেনদেন আইন এবং ২০১৩ সালের কোম্পানি আইনের আওতায়।
১৮৬০ সালের ভারতীয় দণ্ডবিধি এবং ১৯৭৩ সালের ফৌজদারি কার্যবিধিতেও জালিয়াতি ও প্রতারণার মত অপরাধে শাস্তির বিধান রয়েছে।
আরও পড়ুন, ইনার লাইন পারমিট কী, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব)-এর সঙ্গে তার যোগাযোগ কোথায়?
অতি আর্থিক অপরাধীরা, যারা বিচার এড়াতে দেশ থেকে পলাতক, তাদের জন্য ২০১৭ সালে অর্থমন্ত্রক একটি খসড়া বিল নিয়ে আসে। তাতে বলা হয়, বর্তমান দেওয়ানি ও ফৌজদাপি আইনে এ ধরনের অপরাধীদের মোকাবিলা করবার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্থান নেই। তাদের বিচারব্যবস্থার আওতায় আনতে নতুন আইনকাঠামো প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়।
মন্ত্রক আরও বলে, যেসব বিধান রয়েছে তা সময়সাপেক্ষ তো বটেই, একইসঙ্গে তদন্তের ক্ষেত্রে বাধাসৃষ্টিকারী এবং ব্যাঙ্কের আর্থিক অবস্থার উপরেও তা প্রভাব ফেলে।
২০১৮ সালের মার্চ মাসে বিদেশমন্ত্রক জানায়, যাঁরা সিবিআই ও ইডির তদন্তের অধীনে থাকা ৩০ জনেরও বেশি ব্যবসায়ী ভারতীয় আদালতের হাত এড়াতে পালিয়ে গিয়েছেন।
ফেরার আর্থিক অপরাধী ঘোষণার পদ্ধতি কী?
এই আইনে কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে ফেরার আর্থিক অপরাধী বলে ঘোষণা করার জন্য বিশেষ আদালতে আবেদন করতে হয়।
বিশেষ আদালত ওই ব্যক্তিকে তখন একটি নির্দিষ্ট জায়গায় উপস্থিত হবার জন্য নোটিস জারি করতে পারে। যদি ওই ব্যক্তি সেখানে হাজির হয়, তাহলে আদালত এ সংক্রান্ত কার্যবিধি বন্ধ করে দিতে পারে।
যদি বিশেষ আদালত ওই ব্যক্তিকে ফেরার আর্থিক অপরাধী বলে মেনে নেয়, তাহলে সেই মোতাবেক নির্দেশ জারি করতে পারে। আদালত এর পর দেশে বা বিদেশে পলাতক ওই ব্যক্তির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিতে পারে।
নীরব মোদীর ক্ষেত্রে এই আবেদন ইডি জমা দিয়েছিল ২০১৮ সালের জুলাই মাসে। বিজয় মালিয়ার ক্ষেত্রে আইন যখন অর্ডিন্যান্স আকারে রয়েছে, সেই সময়ে, ২০১৮ সালের জুন মাসে আবেদন জমা পড়ে।
পড়তে ভুলবেন না, বিশ্লেষণ: নাথুরাম গডসের মতাদর্শ ও তাঁর ভক্তকুল