পলাতক গহনা ব্যবসায়ী নীরব মোদী, ১৩,৫০০ কোটি টাকার পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (পিএনবি) কেলেঙ্কারি মামলায় প্রধান অভিযুক্ত, লন্ডন শহরে আচমকাই মুখোমুখি পড়ে গেলেন ব্রিটেনের 'দ্য টেলিগ্রাফ' পত্রিকার, যাদের প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, লন্ডনের রাস্তায় ট্যাক্সি ধরার চেষ্টা করছেন মোদী, এবং বারবার একঘেয়ে ভাবে সাংবাদিক মিক ব্রাউনের প্রশ্নের উত্তরে বলে যাচ্ছেন, "নো কমেন্টস।"
মোদীর পরনে কালো জ্যাকেট, যা ভিডিওর সাব-টাইটেল অনুযায়ী, "উটপাখির চামড়ার তৈরি" এবং "যার দাম কমপক্ষে ১০ হাজার পাউন্ড"। দু মিনিট তেরো সেকেন্ডের ভিডিওটি 'দ্য টেলিগ্রাফ' পত্রিকার টুইটার হ্যান্ডেলে পোস্ট করা হয়েছে, যেখানে শেষ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, ট্যাক্সি ধরে বেরিয়ে যাচ্ছেন মোদী। উল্লেখ্য, মোদীর নামে ইন্টারপোলের 'রেড কর্নার' নোটিস এখনও জারি রয়েছে, এবং সিবিআই ও ইডির তাঁকে ভারতে প্রত্যপর্ণের আবেদনের এখনও মীমাংসা হয় নি।
মোদীর বিরুদ্ধে মামলার ক্ষেত্রে এই ভিডিওর গুরুত্ব কী?
সিবিআই এবং ইডি-র দায়ের করা মামলায় খুব একটা আসবে যাবে না। মোদীর বিরুদ্ধে 'রেড কর্নার' জারি হওয়ার পরেই ভারতকে ব্রিটেন জানায়, লন্ডনেই আছেন তিনি। এই তথ্যের ভিত্তিতে বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে মোদীকে ভারতে প্রত্যর্পণের আবেদন জানায় সিবিআই এবং ইডি। অধস্তন বিদেশ মন্ত্রী ভি কে সিং ২০১৮ সালের অগাস্ট মাসে সংসদকে জানান, প্রত্যর্পণের আবেদন বিশেষ 'ডিপ্লোম্যাটিক ব্যাগে' করে লন্ডনে ভারতীয় হাই কমিশনে পাঠানো হয়। যতদিন না দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে মোদীকে, ততদিন তাঁর বিরুদ্ধে মামলাগুলির কোনো পরিবর্তন হবে না।
কিন্তু সাধারণ নির্বাচনের মুখে এই ভিডিও ভারত সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলতে পারে। একবার প্রত্যপর্ণের আবেদন করা হয়ে গেলে বিষয়টি বিদেশ মন্ত্রকের হাতে চলে যায়। স্পষ্ট কথায় বলতে গেলে, এবার ব্রিটেনের ওপর কতটা কূটনৈতিক প্রভাব খাটাতে পারে ভারত, তার ওপর নির্ভর করছে পলাতককে কবে ফেরত আনা যাবে। 'রেড কর্নার' নোটিস এবং প্রত্যর্পণের আবেদন সত্ত্বেও অবাধে লন্ডনের রাস্তায় ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছেন মোদী, সোজা বাংলায় বললে, দেখতে খারাপ দেখায়। মনে হয়, সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা যা-ই হয়ে থাকুক, তা ব্রিটেনকে মোদীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে প্রভাবিত করতে পারে নি।
ভিডিওটির আরেকটি অবদান হলো, নীরব মোদী প্রসঙ্গ ফের একবার শিরোনামে চলে এলো। পুলওয়ামা হামলা এবং ভারতীয় বায়ুসেনার বিমান হানার দৌলতে বিষয়টি মোটামুটি চাপা পড়ে গিয়েছিল। ইতিমধ্যেই ভিডিওটি নিয়ে একটি বিবৃতির মাধ্যমে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছে কংগ্রেস।
এরপর কী?
শনিবার সিবিআই এবং ইডি সূত্রের খবর, এই দুই সংস্থার মোদীকে ফেরত আনায় কোনো ভূমিকা নেই, যতক্ষণ না লন্ডনের কোনো আদালতে প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। বিদেশ মন্ত্রক সম্ভবত নতুন করে ব্রিটেনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চলেছে যাতে এই প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব শুরু হয়ে যায়।
কী নিয়ে মামলা মোদীর বিরুদ্ধে?
সিবিআই এবং ইডি-র অভিযোগ, মোদী, তাঁর মামা মেহুল চোকসি, এবং এই দুজনের মালিকানাধীন একাধিক সংস্থা পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ২০১১ এবং ২০১৮ সালের মধ্যে জাল লেটার অফ আন্ডারটেকিং (এলওইউ) এবং লেটার অফ ক্রেডিট ব্যবহার করে ১৩,০০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেয়।
ইডি অথবা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের দাবি, এই ঋণ বাবদ পাওয়া টাকা মোদী অজস্র ভুয়ো সংস্থার গোলকধাঁধার মধ্য দিয়ে হয় নিজের ব্যক্তিগত কাজে লাগান, নাহয় এমন কোনো খাতে ব্যবহার করেন যার জন্য ওই ঋণ আদৌ অনুমোদিত হয় নি।