সড়ক পরিবহণমন্ত্রী নীতিন গড়করি মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) বলেছেন যে পেট্রোল এবং ডিজেলের মতো জ্বালানি থেকে মানুষকে দূরে সরে যেতে হবে। যদি ডিজেলচালিত যানবাহন (এবং ডিজেলচালিত জেনারেটরের মতো সরঞ্জাম) ব্যবহার অব্যাহত থাকে তবে সমস্যা হতে পারে। 'দূষণ কর' হিসেবে এইসবের ওপর অতিরিক্ত ১০% জিএসটি আরোপের জন্যও তিনি অর্থমন্ত্রীকে বিবেচনা করতে প্রস্তাব দেবেন। যাইহোক গড়করি একইসঙ্গে অবশ্য সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, 'বর্তমানে সরকারের কাছে এমন কোনও প্রস্তাব নেই। তবে, ডিজেলের মতো বিপজ্জনক জ্বালানির কারণে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ছে। তা কমানোর জন্য সরকারের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, সেই সঙ্গে অটোমোবাইল শিল্পে বিক্রি দ্রুত বৃদ্ধির জন্য পরিষ্কার এবং সবুজ বিকল্প জ্বালানি গ্রহণ করা অপরিহার্য।'
শেয়ারের দাম পড়ে গিয়েছে
কেন্দ্রীয় পরিবহণমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরপরই গাড়ি শিল্পের শেয়ারের দাম পড়ে যায়। এর কারণ হল, স্পষ্টীকরণ সত্ত্বেও, মন্ত্রীর বিবৃতিটি ডিজেলের ব্যবহার বন্ধের নীতিকে নতুন করে সামনে এনেছে। এমনিতে পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের নিযুক্ত কমিটি ডিজেলের ওপর নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করেছে। যে সুপারিশ অনুযায়ী, ২০২৭ সালের মধ্যে ১০ লক্ষেরও বেশি জনসংখ্যার শহরে ডিজেল গাড়ির ব্যবহার বন্ধের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। তার তিন মাস পর ডিজেল নিয়ে গড়করির এই বক্তব্য সামনে এল। কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই ডিজেল গাড়ির ওপর ২৮% কর বসিয়েছে। সঙ্গে, ইঞ্জিনের ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে একটি অতিরিক্ত সেস বসানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ডিজেল গাড়ির ওপর বসানো করের পরিমাণ প্রায় ৫০%-এ নিয়ে গিয়েছে।
সরকার ডিজেলের বিরুদ্ধে খড্গ়হস্ত কেন?
গডকরির মন্তব্য এবং প্যানেলের প্রতিবেদনটি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে এবং ২০৭০ সালের মধ্যে নেট কার্বন নির্গমনশূন্য যান চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ওই সময়ের মধ্যে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি থেকে ভারতের ৪০% বিদ্যুৎ উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে। হাইড্রোকার্বন ক্ষেত্রের উৎস, পেট্রোলিয়াম প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যানালাইসিস সেলের অনুমান অনুযায়ী, ভারতের পেট্রোলিয়াম পণ্য ব্যবহারের প্রায় ৪০% ডিজেল। মোট ডিজেল বিক্রয়ের প্রায় ৮৭% হয় পরিবহণ বিভাগে। ট্রাক এবং বাস দেশের ডিজেল বিক্রয়ের প্রায় ৬৮%-এর জন্য দায়ী। তিনটি রাজ্য- উত্তর প্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানা, ভারতে বিক্রি হওয়া ডিজেলের প্রায় ৪০%-এর জন্য দায়ী।
আরও পড়ুন- মন্ত্রী নিখোঁজ! প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রীর পর উধাও চিনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীও, জল্পনা তুঙ্গে!
ডিজেলচালিত গাড়ি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত
মারুতি সুজুকি, ভারতের বৃহত্তম গাড়ি নির্মাতা সংস্থা। তারা ২০২০ সালে ১ এপ্রিল থেকে ডিজেলচালিত যানবাহন তৈরি করা বন্ধ করে দিয়েছে। সঙ্গে, ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা আর ডিজেলচালিত যানবাহন তৈরি করবে না। টাটা মোটরস, মাহিন্দ্রা এবং হোন্ডাও ইতিমধ্যে ১.২ লিটার ডিজেলইঞ্জিন উত্পাদন করা বন্ধ করে দিয়েছে। বর্তমানে শুধুমাত্র ১.৫ লিটার বা তার চেয়ে বড় ইঞ্জিনগুলোই ডিজেলচালিত। যদিও ডিজেল ইঞ্জিনগুলো এখনও কোরিয়ার হুন্ডাই এবং কিয়া থেকে পাওয়া যায়। পাশাপাশি, জাপানের টয়োটা মোটরের ইনোভা ক্রিস্টারও ডিজেল ইঞ্জিন। তবে, বেশিরভাগ গাড়িনির্মাণ সংস্থাই ২০২০ সাল থেকে তাদের ডিজেল ইঞ্জিনের উৎপাদন যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস করেছে। তার ফলে, যাত্রীবাহী যানবাহনে ডিজেলের ব্যবহার ব্যাপক কমে গিয়েছে। ২০১৩ সালে যা ছিল ২৮.৫%। সেটাই হ্রাস পেয়ে বর্তমানে হয়েছে ১৬.৫%।