বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। আজ সকালের দিকে এই অনাস্থা প্রস্তাব স্পিকার গ্রহণ করেন। স্পিকার জানান, তিনি সব দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন। তারপর জানাবেন, কখন অনাস্থা প্রস্তাবের অধিবেশনটি চলবে। লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবটি পেশ করেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ। তার আগে বিরোধীরা মণিপুর ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য জানতে চেয়ে তীব্র বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী অবশ্য মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই জানিয়ে দিয়েছিলেন, বিরোধীরা লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব আনতে চলেছে। অধীর চৌধুরী বলেন, 'সরকার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মণিপুর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার দাবি না-মানলে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করা ছাড়া অন্য উপায় থাকবে না। এমনটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংসদের নেতা হিসেবে মণিপুরের হিংসা নিয়ে তাঁর বক্তব্য রাখা উচিত।'
অনাস্থা প্রস্তাব কী?
সংসদীয় গণতন্ত্রে একটি সরকার তখনই ক্ষমতায় থাকতে পারে যখন সে সরাসরি নির্বাচিত সদস্যদের কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। আমাদের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭৫ (৩) অনুযায়ী, মন্ত্রী পরিষদ লোকসভার কাছে সম্মিলিতভাবে দায়বদ্ধ। এই সম্মিলিত দায়বদ্ধতা পরীক্ষার জন্য, লোকসভার কিছু নিয়ম আছে। যার অন্যতম অনাস্থা প্রস্তাব। যে কোনও লোকসভা সাংসদ, ৫০ জন সাংসদের সমর্থন পেলেই সংসদে যে কোনও সময়ে মন্ত্রী পরিষদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করতে পারেন। এরপর প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়। যে সাংসদরা এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেন, তাঁরা সরকারের ত্রুটিগুলি তুলে ধরেন। আর, ট্রেজারি (শাসকপক্ষ) বেঞ্চ জবাবদিহি করে। অবশেষে একটি ভোটাভুটি হয়। অনাস্থা প্রস্তাব ভোটাভুটিতে জিতে গেলে, শাসকপক্ষ পদত্যাগ করে। অনাস্থা প্রস্তাব শুধুমাত্র লোকসভায় পেশ করা যায়।
সরকারের কি উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত?
না। লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ২৭২ জন সাংসদের প্রয়োজন। বর্তমানে এনডিএ সরকারের সদস্য সংখ্যা ৩৩১। বিজেপির একাই আছে ৩০৩ সাংসদ। এর মানে হল যে সমস্ত নন-এনডিএ দলগুলো একত্রিত হলেও (যা খুবই অসম্ভব) বিজেপির কাছে এখনও অনাস্থা প্রস্তাবে জিতে যাওয়ার মত সংখ্যা রয়েছে। উলটোদিকে নতুন নাম দেওয়া 'ইন্ডিয়া' জোটের ১৪৪ জন সাংসদ রয়েছে। আর, এনডিএ এবং ইন্ডিয়া জোটের বাইরে থাকা 'নিরপেক্ষ' দল যেমন বিআরএস, ওয়াইএসআরসিপি, বিজেডি জোটের সম্মিলিত সাংসদ রয়েছে ৭০। তবে, অনাস্থা প্রস্তাব ঐতিহাসিকভাবে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে আলোচনা জোরদার করার জন্য একটি কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। বিরোধীরা জানে যে তাদের কাছে যথেষ্ট সংখ্যা নেই। কিন্তু, তারপরও মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে তাদের উদ্বেগগুলো সমাধান করতে সরকারকে বাধ্য করার লক্ষ্যে বিরোধীরা আন্দোলন করছেন।
আরও পড়ুন- প্রমাণ মিলেছে এলিয়েনের অস্তিত্বের, বিরাট দাবি বিজ্ঞানীর!
অতীতে কতবার অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে?
১৯৬৩ সালে তৃতীয় লোকসভার সময় প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে আচার্য জেবি কৃপালানি প্রথম অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। প্রস্তাবের উপর বিতর্ক চার দিন ধরে ২১ ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল। ৪০ জন সাংসদ এই প্রস্তাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর উত্তরে নেহেরু মন্তব্য করেছিলেন, 'একটি অনাস্থা প্রস্তাবের লক্ষ্য সরকারে থাকা দলটিকে সরিয়ে দেওয়া এবং তার জায়গা নেওয়া। বর্তমান দৃষ্টান্তে এটা স্পষ্ট যে এমন কোনও প্রত্যাশা বা আশা ছিল না। তাই এই বিতর্ক, যদিও বেশ আকর্ষণীয় এবং লাভজনক ছিল, কিন্তু আমি মনে করি যে একটু বাস্তবতাহীনও ছিল। ব্যক্তিগতভাবে আমি এই প্রস্তাব এবং এই বিতর্ককে স্বাগত জানিয়েছি। আমি অনুভব করেছি যে আমরা যদি এই ধরণের পর্যায়ক্রমিক পরীক্ষা করি, তবে এটি একটি ভালো ব্যাপার হবে।' তারপর থেকে, সংসদে আরও ২৬টি অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে (সর্বশেষটি ধরা হচ্ছে না)। সর্বশেষ অনাস্থা প্রস্তাব ২০১৮ সালে টিআরএস প্রথম মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এনেছিল।