লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা বুধবার বিধি অনুসারে প্রয়োজনীয় ৫০ জন সাংসদের মাথা গণনার পরে লোকসভায় কংগ্রেসের উপনেতা গৌরব গগৈয়ের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন। এই প্রস্তাবকে বিরোধী দল ভারত জোট এবং ভারত রাষ্ট্র সমিতির সদস্যরাও সমর্থন করেছেন।
কেন বিরোধী দল অনাস্থা প্রস্তাব আনল?
বর্ষা অধিবেশনের শুরু থেকেই, বিরোধী দলগুলো দাবি করে আসছে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে মণিপুরের হিংসাত্মক পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে বিবৃতি দিতে হবে। বেশ কয়েকদিন বিক্ষোভ ও ধোঁয়াশা চলার পর, বিরোধীরা বুধবার সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনের জন্য দুটি পৃথক নোটিশ দেয়। বিরোধীদের লক্ষ্য, প্রধানমন্ত্রীকে বিতর্কের জবাব দিতে বাধ্য করা। সংবিধানে উল্লেখ আছে যে প্রধানমন্ত্রী হলেন মন্ত্রী পরিষদের প্রধান। তাই, যখনই সংসদ সদস্যরা লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবেন, প্রধানমন্ত্রীকে বিতর্কের জবাব দিতে হবে। বিরোধী দলগুলোর অনাস্থা নিয়ে পদক্ষেপের জন্যই প্রধানমন্ত্রীকে আলোচনার সময় তাঁদের আনা অভিযোগের জবাব দিতে হবে।
নথি বলছে
সংসদের নথি বলছে যে, ২০১৯ সালে শুরু হওয়া বর্তমান লোকসভার মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী মোদী সাতটি বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচটি বিতর্ক হয়েছিল যখন প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির ভাষণে ধন্যবাদ প্রস্তাবের বার্ষিক বিতর্কে উত্তর দিয়েছিলেন। অন্য দুটি উপলক্ষ ছিল (১) ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠার বিষয়ে হাউসকে অবহিত করা। আর, (২)-য়টি হল- ২০১৯ সালে নবনির্বাচিত স্পিকার ওম বিড়লাকে অভিনন্দন জানিয়ে দেওয়া বক্তৃতা। বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী সংসদের পরিবর্তে সংসদের বাইরে মণিপুর নিয়ে কথা বলেছেন। অতীতে সংসদ অধিবেশন চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা সংসদের বাইরে নীতি ও অন্যান্য ঘোষণা করেছেন। লোকসভার পরবর্তী স্পিকাররা রায় দিয়েছেন যে এই ধরনের ঘোষণা করা সংসদীয় বিশেষাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত নয়।
আরও পড়ুন- LGBTQ ইস্যুতে উত্তাল সংস্কৃত কলেজ, শিক্ষিকাকে ক্ষমা চাইতে হবে, দাবিতে আন্দোলনে পড়ুয়ারা
মিলিতভাবে দায়বদ্ধ
ভারতের মন্ত্রিসভা এবং মন্ত্রী পরিষদ লোকসভার কাছে মিলিতভাবে দায়বদ্ধ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী পরিষদের ওপর লোকসভার অধিকাংশ সদস্যের আস্থা আছে কি না, তা পরীক্ষা করার জন্যই লোকসভার নিয়ম হল অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হওয়া। এখনও পর্যন্ত স্বাধীনতার পর থেকে লোকসভায় মোট ২৭টি অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে (তালিকা দেখুন)। শেষবার আনা হয়েছিল ২০১৮ সালে প্রথম মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু, একটি বাদে কোনও অনাস্থা প্রস্তাবই পাশ হয়নি। বর্তমান সরকারের লোকসভায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে এবং বর্তমান অনাস্থা প্রস্তাবটিও নেতিবাচক হতে পারে। ১৯৭৯ সালে, প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই বুঝতে পেরেছিলেন যে তাঁর সরকারের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদদের সমর্থন নেই। আর, তাই তিনি এই প্রস্তাবে ভোটাভুটি হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেছিলেন।