নিওকোভ। করোনাভাইরাসের নয়া ভ্যারিয়েন্ট। যাকে নিয়ে দারুণ চিন্তার ঢেউ উঠেছে। ভীতিপ্রদ নতুন উন্মেষ দেখা যাচ্ছে। কেন ভয় ঘিরে ধরছে ওই নিওকোভকে কেন্দ্র করে? কারণটা ইতিমধ্যে সকলে জেনে গিয়েছেন-- এই ভাইরাসটির ক্ষমতা রয়েছে সংক্রমিতের তিন জনের মধ্যে এক জনকে খতম করে দেওয়ার। দাবি করা হয়েছে, নিওকোভ পাওয়া গিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকায়, বাদুড়ের রক্তে। এবং এখনও মানুষের শরীরে না সেঁধালেও, এর মধ্যে সেই সম্ভাবনা মজুত। বলা হয়েছে, আর একটি মিউটেশন বা বদল হলে এটি মানুষের হয়ে যাবে। চিনা গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে এই রোমহর্ষক তথ্য। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে একটি গবেষণামূলক ওয়েবসাইটে, যে সাইট-টি ততটা গুরুত্ব রাখে না আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীমহলে। গবেষণাটি করেছেন উহান ইউনিভার্সিটি এবং দ্য চাইনিজ অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অফ বায়োফিজিক্সের বিজ্ঞানীরা। আসুন, সেই দিকে আমরা আর একবার নজর দিয়ে নিই। দেখে নিই যতটা ভয়ের কথা বলা হচ্ছে, আদৌ ততটা আছে কি না এই ভাইরাসে?
হ্যাঁ, নিওকোভ ভাইরাসটির অস্তিত্ব নিয়ে কোনও সংশয় নেই। এবং এটি দক্ষিণ আফ্রিকার বাদুড়দের মধ্যে পাওয়া গিয়েছে। কিছু সময় আগে। ২০১২ সালে মার্স ভাইরাস এসেছিল, আতঙ্ক ধরিয়েছিল ভয়ঙ্কর, সেই মার্স, মানে মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোমের (MERS)সঙ্গে এর মিল রয়েছে। চিনা গবেষকরা বলেছেন সার্স-কোভ-টু-এর মতো বাদুড়ে সংক্রমণ ছড়াতে পারে এই ভাইরাস। কিন্তু নিওকোভ কখনওই মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটায়নি। কোনও ভাবেই এই আশঙ্কা করা যায় না যে এটি বাদুড়ের শরীর থেকে ঝাঁপ কাটতে পারে মানবশরীরে। গবেষকরা স্পষ্ট করে বলেছেন, মানুষের দেহকোষের এসিই-টু রিসেপ্টারের মাধ্যমে ঢুকে পড়ার ক্ষমতা নেই এর। গবেষকরা বাদুড়ের রিসেপ্টার এবং মানুষের রিসেপ্টারের মধ্যে পার্থক্যের দিকে আতসকাচ ফেলেছেন। তাঁরা বলেছেন, একটি মিউটেশন ঘটলে ওই ভাইরাস মানুষের শরীরে ঢুকে পড়তে পারবে। যদিও এটা ল্যাবের পরীক্ষানিরীক্ষা। বাস্তবের ব্যাপার নয়।
আরও পড়ুন তৃতীয় তরঙ্গ কি ছুঁয়ে ফেলেছে শিখর, চলছে কি তার নিম্নগতি?
হ্যাঁ, নিওকোভের ক্ষমতা রয়েছে সংক্রমিতের তিন জনের মধ্যে একজনকে মেরে ফেলার। যা মার্স করোভাইরাসের শক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত। মার্স গোত্রে বেশ কিছু করোনাভাইরাস পড়ে। যাদের বলা হয় মের্বেকোভাইরাস (Merbecoviruses),যাদের মারণক্ষমতা ৩৫ শতাংশ। জানিয়েছেন গবেষকরা। এখানে জানানো দরকার-- ২০১২-তে মার্স ২৭টি দেশে এটি ছড়িয়েছিল এবং মৃত্যু হয়েছিল ৮৫৮ জনের।
ফলে এখনওই এই ভাইরাসের ভয়ে কাবু হওয়ার কোনও দরকার নেই, মনে করছেন বিজ্ঞানীমহলের অনেকে। ভাইরাসের ভয়ের মরীচিকা না দেখে পরিস্থিতির গতিপ্রকৃতির দিকে নজর রেখে চলাটাই উচিত। মরার আগে মরে গেলে চলবে না।