ভয়াবহ তাপপ্রবাহে নাজেহাল আম-আদমি। আগামী কয়েক বছরে রেকর্ড হারে বাড়তে পারে তাপমাত্রা। ইতিমধ্যেই এমন রিপোর্ট দিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। এবার এল নিনো নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করলেন মার্কিন বিজ্ঞানী, রেকর্ড তাপের সম্ভাবনা নিয়ে দিলেন ইঙ্গিত। ইউএস ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ) বিজ্ঞানীরা বৃহস্পতিবার বলেছেন যে একটি প্রত্যাশিত এল নিনো ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যার কারণে রেকর্ড গরম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি দুই থেকে সাত বছর পর পর এল নিনো পরিস্থিতি তৈরি হয়। শেষবার এলনিনোর প্রভাব দেখা গিয়েছিল ২০১৬ সালে। NOAA আবহাওয়াবিদ মিশেল এল হিউরেক্স বলেছেন এল নিনোর প্রভাবে জলবায়ুর ব্যপক পরিবর্তন হওয়াটাই স্বাভাবিক। এল-নিনোর প্রভাবে কোথাও প্রবল বৃষ্টি আবার কোথাও খরা ডেকে আনবে, বিশ্বকে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা।
আবহাওয়ার ওপর এল নিনোর প্রত্যাবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বকে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে এল-নিনো আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরে এসেছে এবং এই বছরের শেষের দিকে বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার চরম পরিস্থতি সৃষ্টি করবে। এর প্রভাবে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপের দিকে অগ্রসর হবে। এর ফলে দক্ষিণ আমেরিকায় ভারী বৃষ্টিপাত হবে এবং অস্ট্রেলিয়া খরার সম্মুখীন হবে।বৃহস্পতিবার ইউএস ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ক্লাইমেট প্রেডিকশন সেন্টারের জারি করা এক অ্যাডভাইজরিতে বলা হয়েছে, তিন বছর ধরে আবহাওয়ার ওপর লা নিনার প্রভাব রয়েছে এবং এর কারণে তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। ফের বিশ্বে, এখন এল-নিনো ফিরে এসেছে। যার প্রভাব পড়তে শুরু করবে আবহাওয়ার ওপর।
গ্রীষ্ম ২০২৩-২০২৪ সালে রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে
জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে গত মে মাসে দুর্বল এল-নিনো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল এবং এর ফলে নিরক্ষীয় প্রশান্ত মহাসাগরের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে। শেষবার এল-নিনোর প্রভাব দেখা গিয়েছিল ২০১৬ সালে। সেই বছর বিশ্বকে প্রচণ্ড গরমের মুখে পড়তে হয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও এল-নিনোর কারণে তাপমাত্রা বেড়ে ২০২৩ বা ২০২৪ সালে রেকর্ড মাত্রায় পৌঁছাতে পারে।এল-নিনোর সূচনা নিশ্চিত করতে বিজ্ঞানীরা দুটি সংস্থার রিপোর্টের উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে একটি হল NOAA এবং অন্যটি হল অস্ট্রেলিয়া ব্যুরো অফ মেটিওরোলজি (BOM)। এল-নিনো নিয়ে প্রকাশিত তাদের বুলেটিনে অস্ট্রেলিয়ার এজেন্সি বলেছে, এল-নিনো এ বছর আসবে, অনুমান করা হচ্ছে ৭০ শতাংশ।
এল নিনোর প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করেছে
রিপোর্টে বলা হয়েছে, এল-নিনোর প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করেছে। এল-নিনোর কারণে সৃষ্ট শুষ্ক আবহাওয়া এশিয়ায় খাদ্য উৎপাদনকে হুমকির মুখে ফেলছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর প্রভাবে অস্ট্রেলিয়ায় ফসলের উৎপাদন ৩৪ শতাংশ কমে যেতে পারে। ইন্দোনেশিয়ায় পাম অয়েল ও চাল উৎপাদনে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। এল নিনোর নেতিবাচক প্রভাব মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে পাম তেলের ওপরও দেখা গেছে। ভারত, রবি ফসলের জন্য বর্ষার বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল, এল নিনোর প্রভাব পড়বে তার ওপরেও।
এল নিনো কি?
এল নিনো প্রশান্ত মহাসাগরের নিরক্ষীয় অঞ্চলের একটি মহাসাগরীয় ঘটনা। সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের কারণে সারা বিশ্বের আবহাওয়ায় এর প্রভাব দৃশ্যমান হয়। এল নিনো এমন একটি অবস্থা যা উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। এল নিনোকে জলবায়ু ব্যবস্থার একটি অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এ কারণে আবহাওয়ার ওপর গভীর প্রভাব পড়ে। লা নিনার ফলে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল বরাবর দক্ষিণ থেকে উত্তর দিকে স্বাভাবিকের থেকে শীতল এক সমুদ্র স্রোতের প্রবাহ লক্ষ্য করা যায়। যার ফলে ওই অঞ্চলে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়, যা আয়ন বায়ুর পশ্চিমমুখী গমনকে আগের চেয়েও ত্বরান্বিত করে। আর, এর ফলে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম দিকে নিরক্ষীয় অঞ্চলে অবস্থিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার উত্তর অংশে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে। আর, পূর্ব উপকূলে অবস্থিত দক্ষিণ আমেরিকার পেরু ও ইকুয়েডর উপকূলে তৈরি হয় শুষ্ক পরিস্থিতি। এর স্থায়িত্ব হয় এক থেকে দেড় বছর।
সাধারণত লা নিনার পর আসে এল নিনো। যে স্প্যানিস শব্দের বাংলা হল বালক। এই পর্যায়বৃত্ত পরিবর্তন ঘটে ৩ থেকে ৮ বছরের মধ্যে। যার ফলে ২০২৩ এন নিনোর সময় বলেই মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। ভারতে খরার মরশুম মানেই এল নিনোর বছর। তবে, সব এল নিনোতেই খরা হয় না।
২০১৬ সালের পর, এখন অর্থাৎ সাত বছর পর এল-নিনো আবার প্রশান্ত মহাসাগরে ফিরে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল প্রশাসন, ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাসোসিয়েশন এই তথ্য জানিয়েছে। যদিও তা আগেই অনুমান করা হয়েছিল। এল-নিনোর এই ধাক্কার পর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল ভারতে এর প্রভাব কী হবে। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ আইএমডি ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে। আইএমডি কয়েকদিন আগেই জানিয়েছে, এই বর্ষায় এল নিনোর বৃদ্ধির প্রায় ৭০ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে। আইএমডি-র বক্তব্য যদি সত্যি হয়, তাহলে দেশের খরিফ শস্য উৎপাদনে এর প্রভাব পড়তে পারে।
এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া বাতাস দুর্বল হয়ে পড়লে এল-নিনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এই কারণে তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর ঠিক এই কারণে সমুদ্রের তাপমাত্রাও ২-৩ ডিগ্রি বৃদ্ধি পায়। এই ঘটনাকে বলা হয় এল-নিনো। ০.৫ এবং ০.৯-এর মধ্যে এই সূচকের একটি পরিমাপ একটি দুর্বল এল-নিনো হিসাবে বিবেচিত হয় এবং ১ এর উপরে একটি পরিমাপ হলে মাঝারি এল-নিনো হিসাবে বিবেচিত হয়। কিন্তু যদি এই সূচকটি ১.৫ থেকে ১.৯ এর মধ্যে থাকে, তবে এটি একটি শক্তিশালী এল-নিনো হিসাবে বিবেচিত হয়। NOAA (NIO) এ বার সূচক ১.৫-এর বেশি হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে।