বৃহস্পতিবার সুইডিশ অ্যাকাডেমি এ বছর এবং গত বছরের সাহিত্যের নোবেল প্রাইজ ঘোষণা করেছে। পোলিশ লেখক ওলগা তোকারচুক ২০১৮ সালের জন্য এবং অস্ট্রিয়ান লেখক পিটার হান্ডকে ২০১৯ সালের জন্য নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। সুইডিশ অ্যাকাডেমির ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি ধর্ষণ ও জেলের ঘটনার জেরে কেলেংকারির কারণে ২০১৮ সালের পুরস্কার বাতিল হয়।
ওলগা তোকারচুক
৫৭ বছরের ওলগা পোল্যান্ডের সফলতম লেখকদের অন্যতম। কয়েক বছর আগে থেকে ইংরেজি পাঠকদের নজরে পড়েছেন তিনি। ২০১৮ সালে Flights বইয়ের জন্য তিনি ম্যান বুকার পুরস্কার জেতেন। এই বইটি তাঁর ২০০৭ সালের Bieguni উপন্যাসের অনুবাদ। অ্যাকাডেমির ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, তাঁর অধিকাংশ সাহিত্যকর্মই ঐতিহাসিক বা মিথিক্যাল প্রেক্ষপটে, বাস্তববাদী অনুপুঙ্খসহ নির্মিত, এবং তার থিম হল সাংস্কৃতিক বৈপরীত্বের টেনশন, কখনও তা রিজন বনাম উন্মাদনা, কখনও নারী বনাম পুরুষ, কখনও গৃহ বনাম বিচ্ছিন্নতা।
আরও পড়ুন, সানাউল হক: উত্তর প্রদেশের ছেলের আল কায়েদার উপমহাদেশীয় প্রধান হয়ে ওঠার কাহিনি
তোকারচুক ওয়ারশ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৯৩ সালে তাঁর প্রথম বই প্রকাশিত হয়। Podróz ludzi Ksiegi (The Journey of the Book-People) নামের সে বইটিতে ছিল সপ্তদশ শতকের ফ্রান্স ও স্পেনের কাহিনি যেখানে বিভিন্ন চরিত্র একটি রহস্যময় বই খুঁজে চলেছে। তাঁর সাড়া জাগানো প্রথম উপন্যাস Prawiek i inne czasy প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালে। ২০১০ সালে সে বইয়ের অনুবাদ হয় ইংরেজি ভাষায়। ইংরেজিতে তার নাম ছিল Primeval and Other Times। এ উপন্যাসের প্রেক্ষিতও এক মিথিক্যাল স্থান, অথচ তা ভরপুর বস্তুনিষ্ঠ অনুপুঙ্খে। অ্যাকাডেমি বলেছে, তোকারজুকের জাবি এই ন্যারেটিভ হল অতীতের জাতীয় ভাবমূর্তির সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত বোঝাপড়ার চেষ্টা। ১৯৮৯ পরবর্তী নতুন পোলিশ সাহিত্যের এ এক চমৎকার উদাহরণ, যেখানে নীতিবিচারকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা হয়েছে এবং জাতির বিবেকের প্রতিনিধিত্ব করতে অনিচ্ছা বিবৃত হয়েছে।
তাঁর সর্ববৃহৎ কাজ হল, Ksiegi Jakubowe, ২০১৪ সালের বই। ইংরেজিতে এর নাম হল The Books of Jacob। ৯০০ পৃষ্ঠার এই উপন্যাস অষ্টাদ শতাব্দীর এক সম্প্রদায়ের নেতা জ্যাকব ফ্র্যাঙ্ককে নিয়ে, যাঁর নাম খুব কম লোকেই জানে। জ্যাকব ইহুদি, ক্রিশ্চান ও মুসলিম সম্প্রদায়কে একত্রিত করার প্রয়াসের মাধ্যমে গোঁড়াদের চক্ষুশূল হয়েছিলেন।
পিটার হান্ডকে
৭৬ বছর বয়সী হান্ডকে প্রথম উপন্যাস Die Hornissen প্রকাশিত হয় ১৯৬৬ সালে। গ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার সময়ে তিনি মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়ে দেন। লিখতে শুরু করেন উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক ও চিত্রনাট্য। ৫০ বছরের লেখালিখির জীবনে তাঁর সাহিত্যকর্ম প্রচুর। দ্বিতীয় বিশযুদ্ধের পর সবচেয়ে প্রভাবশালী লেখকদের মধ্যে অন্যতম তিনি, বলেছে অ্যাকাডেমি।
আরও পড়ুন, বিশ্লেষণ: উর্দু কেন ভারতীয় ভাষা?
অস্ট্রিয়ায় এক সংখ্যালঘু মহিলা ছিলেন হান্ডকের মা। তাঁর বাবা ছিলেন এক জার্মান সৈনিক। বাবার সঙ্গে পিটারের যখন প্রথম দেখা হয় তখন তিনি প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গিয়েছেন। হান্ডকে তাঁর পৈত্রিক উত্তরাধিকার, যা নাৎসি জমানায় বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন বেছে নেন মাতৃক উত্তরাধিকার। একবার তিনি মন্তব্য করেছিলেন সমসাময়িক জার্মান সাহিত্য বর্ণনার অক্ষমতায় ভুগছে। তিনি বলেন, তাঁর নিজের সাহিত্যিক অনুপ্রেরণা তিনি সংগ্রহ করেছেন ফরাসি সাহিত্যের নয়া নভেল আন্দোলন থেকে।
হান্ডকে এখন থাকেন ফ্রান্সে। সার্বিয়ার অতি দক্ষিণপন্থীদের প্রতি তিনি সহানুভূতিশীল বলেই মনে করেন অনেকে। ২০০৬ সালে প্রাক্তন সার্বিয়ান প্রেসিডেন্ট স্লোবোদান মিলোসেভিচের শেষকৃত্যে যোগদান করেছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালে যুগোশ্লাভদের সঙ্গে যুদ্ধে সার্বদের প্রতি সহানুভূতিও ব্যকত করেছেন, সে নিয়ে তিনি লিখেওছেন। অ্যাকাডেমি বলেছে, হান্ডকে কোনও কোনও সময়ে বিতর্কের কারণ হয়েছেন, কিন্তু তিনি কোনও মতেই সার্ত্রের মত পক্ষাবলম্বী লেখক নন, এবং তিনি আমাদের কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি দেন না।
২০১৮ সালের পুরস্কার ২০১৯-এ কেন
ফরাসি নাগরিক জঁ ক্লদ আর্নল্ট নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে অ্যাকাডেমির যোগাযোগ ছিল খুবই ঘনিষ্ঠ। ২০১৮ সালে তাঁর ধর্ষণের অপরাধে জেল হওয়ার পর কেলেংকারির খবর ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর স্ত্রী অ্যাকাডেমির সদস্য ক্যাটারিনা ফ্রস্টেনসন অ্যাাকডেমি থেকে পদত্যাগ করেন। এই দম্পতি স্টকহলমে একটি সাংস্কৃতিক ক্লাব চালাতেন যে ক্লাব অ্যাকাডেমি থেকে ফান্ড পেত। এই কেলেংকারির জেরে সাতজন অ্যাকাডেমি সদস্য পদত্যাগ করেন।
৭০ বছরের সাহিত্য নোবেলের ইতিহাসে এই প্রথমবার তা পিছিয়ে দেওয়া হয়। সুইডিশ সাংস্কৃতিক জগতের এক গোষ্ঠী একটি বিকল্প পুরস্কারের আয়োজন করে, যার নাম নিউ অ্যাকাডেমি প্রাইজ। সে পুরস্কারের জন্য বেছে নেওয়া হয় গুয়াডেলোপের লেখক মেরিস কন্ডেকে।
Read the Full Story in English