Advertisment

Explained: রসায়নে নোবেল! কেন তিন বিজ্ঞানী পেলেন এবারের পুরস্কার?

তিন বিজ্ঞানীর মধ্যে মউঙ্গি জি বাওয়েন্ডি (Moungi G. Bawendi) ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির প্রফেসর। লুই ই ব্রুস (Louis E. Brus) কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এমিরেটাস, আলেক্সেই আই একিমভ (Alexei I. Ekimov) নিউইয়র্কের সংস্থা ন্যানোক্রিস্টালস টেকনোলজিতে (Nanocrystals Technology) কর্মরত।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Nobel Prize in Chemistry

রসায়নে নোবেল ২০২৩: মউঙ্গি জি বাওয়েন্ডি, লুই ই ব্রুস এবং আলেক্সেই আই একিমভ কোয়ান্টাম ডট আবিষ্কার এবং ন্যানোপার্টিকেলসের গবেষণার জন্য এই পুরস্কার জিতলেন।

'কোয়ান্টাম বিন্দুর আবিষ্কার এবং সংশ্লেষণ বা ন্যানোপার্টিকেলস'-এর জন্য ২০২৩ সালের রসায়নে নোবেল পেলেন তিন বিজ্ঞানী মউঙ্গি জি বাওয়েন্ডি, লুই ই ব্রুস এবং আলেক্সেই আই একিমভ

Advertisment

নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইট বলেছে, 'ন্যানো প্রযুক্তির এই ক্ষুদ্রতম উপাদানগুলো এখন টেলিভিশন এবং এলইডি ল্যাম্প থেকে তাদের আলো ছড়িয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, অন্যান্য অনেক কিছুর মধ্যে টিউমার টিস্যু অপসারণ করার সময় সার্জনদেরও গাইড করতে পারে।'

কোয়ান্টাম বিন্দু কি?

যে কোন মৌলের বৈশিষ্ট্য নির্ভর করে এর মধ্যে কতগুলো ইলেকট্রন আছে, তার ওপর। যাইহোক, যখন বস্তুটি সত্যিই ক্ষুদ্র, ন্যানো-ডাইমেনশনের হয়, তখন এর বৈশিষ্ট্যগুলি তার আকারের ওপর নির্ভর করে। একটি কণা যত ছোট, তার ইলেকট্রন তত বেশি একত্রিত হয় এবং এটি এর বৈশিষ্ট্যগুলিকে প্রভাবিত করে। এই ধরনের কণা, যাদের আকার তাদের আচরণ নির্ধারণ করে, তাদের কোয়ান্টাম ডট বলা হয়।

বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে জানতেন যে এই জাতীয় কণার অস্তিত্ব থাকতে পারে। তিনজন নোবেল বিজয়ী, কয়েক দশক ধরে তাঁদের কাজের মাধ্যমে একটি উচ্চ মানের কোয়ান্টাম বিন্দু তৈরি করতে সফল হয়েছেন, যা ব্যবহারিকভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে। এই তিন বিজ্ঞানীর মধ্যে আবার ব্রুসের অধীনে বাওয়েন্ডি তাঁর পোস্টডক্টরাল গবেষণা করেছিলেন।

Ekimov, Brus, এবং Bawendi কি করেছেন?

এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য আবিষ্কারের জন্য প্রথম ব্যক্তি হলেন একিমভ। কিন্তু, যেহেতু তিনি তখন সোভিয়েত ইউনিয়নে কাজ করছিলেন (তার পর থেকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন), 1981 সালে প্রকাশিত তাঁর গবেষণাটি বাইরে প্রকাশ পায়নি।

১৯৭০-এর দশকের মধ্যে, বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছিলেন যে একই পদার্থ কাচের মধ্যে একটি ভিন্ন রঙ দিতে পারে, যা কাচের ভিতরে গঠিত পদার্থের কণার আকারের ওপর নির্ভর করে। আর, তা গলিত কাচকে কীভাবে উত্তপ্ত এবং শীতল করা হয়েছিল তার ওপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, ক্যাডমিয়াম সেলেনাইড এবং ক্যাডমিয়াম সালফাইডের মিশ্রণ কাচকে হলুদ বা লাল করতে পারে।

একিমভ জানতে চেয়েছিলেন কেন এটি ঘটে। তাই তিনি বিভিন্ন গরম এবং শীতল পরিস্থিতিতে রঙিন কাচের জন্য কপার ক্লোরাইড ব্যবহার শুরু করেছিলেন। নোবেল ওয়েবসাইট অনুয়ায়ী, 'আকর্ষণীয়ভাবে, এটা দেখা যায় যে কাচের আলো শোষণ কণার আকার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বড় কণাগুলোও আলোকে শোষণ করে। কিন্তু, কণা যত ছোট হয়, তারা আলোকে তত বেশি শোষণ করে। একজন পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে, একিমভ কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নিয়মগুলোর সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত ছিলেন এবং দ্রুত বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি একটি আকার-নির্ভর কোয়ান্টাম প্রভাব পর্যবেক্ষণ করছেন।'

ব্রুস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করছিলেন। তিনি একিমভের কাজ সম্পর্কে জানতেন না এবং সৌরশক্তি ব্যবহার করে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটানোর চেষ্টা করেছিলেন। এজন্য, তিনি ক্যাডমিয়াম সালফাইডের কণা ব্যবহার করছিলেন। যা আলো শোষণ করতে পারে এবং প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে। কণাগুলি একটি দ্রবণে ছিল এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য উপলব্ধ পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফলকে সর্বাধিক করার জন্য ব্রুস তাদের খুব ছোট করে দেন।

ব্রুস তখন বুঝতে পেরেছিলেন যে যখন বড় কণাগুলি ক্যাডমিয়াম সালফাইডের মত একই তরঙ্গদৈর্ঘ্যে আলো শোষণ করে, তখন ছোট কণাগুলি নীল দেখাচ্ছে। যা প্রমাণ করে যে একটি কণার আকার ও তার বৈশিষ্ট্যগুলিকে সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তিত করে। কারণ, একটি কণা যা ভিন্নভাবে আলো শোষণ করে, তা একই উপাদানের বৃহত্তর কণার থেকে ভিন্ন আচরণও করে থাকে।বাওয়েন্ডি বিভিন্ন দ্রাবক, তাপমাত্রা এবং কৌশল ব্যবহার করে ক্ষুদ্র কণা তৈরির ক্ষেত্রে ব্রুসের পদ্ধতিতেই উন্নত করেছেন।

নোবেল একাডেমি বলেছে, 'বাওয়েন্ডি যে ন্যানোক্রিস্টালগুলি তৈরি করেছিলেন, তা প্রায় নিখুঁত ছিল। আর, তা স্বতন্ত্র কোয়ান্টাম প্রভাবের জন্ম দিয়েছে। কারণ এর উত্পাদন পদ্ধতিটি ছিল সহজ, ব্যবহার করার উপযুক্ত। এককথায় বৈপ্লবিক। আরও বহু রসায়নবিদ ইতিমধ্যেই ন্যানো প্রযুক্তিতে কাজ করা শুরু করে দিয়েছেন। আর, কোয়ান্টাম ডটগুলির অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলো জানার চেষ্টা শুরু করেছেন।'

কোয়ান্টাম ডট কি ব্যবহার করা যেতে পারে?

নোবেল আকাদেমির ওয়েবসাইটের মতে, 'কোয়ান্টাম ডটগুলির উজ্জ্বল বৈশিষ্ট্যগুলি কিউলেড (QLED) প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে কমপিউটার এবং টেলিভিশন স্ক্রিনে ব্যবহার করা হয়, যেখানে কিউ (Q) মানে কোয়ান্টাম ডট। একইভাবে, কিছু এলইডি ল্যাম্পে কোয়ান্টাম ডট ব্যবহার করা হয় ডায়োডের ঠান্ডা আলোকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য। আলো তখন দিবালোকের মত শক্তিদায়ক বা ম্লান বাল্বের উষ্ণ আলোর মতো শান্ত হয়ে উঠতে পারে।'

কোয়ান্টাম বিন্দু থেকে আসা আলো জৈব রসায়ন এবং ওষুধেও ব্যবহার করা যেতে পারে। ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, 'বায়োকেমিস্টরা কোষ এবং অঙ্গগুলির ম্যাপ করতে বায়োমোলিকুলে কোয়ান্টাম ডট সংযুক্ত করে। চিকিৎসকরা শরীরের টিউমার টিস্যু ট্র্যাক করতে কোয়ান্টাম বিন্দুর সম্ভাব্য ব্যবহারের খোঁজ শুরু করেছেন। রসায়নবিদরা পরিবর্তে রাসায়নিক বিক্রিয়া চালানোর জন্য কোয়ান্টাম বিন্দুর অনুঘটক বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করেন।'

তিনজন বিজ্ঞানী কারা?

আলেক্সেই আই একিমভ প্রাক্তন ইউএসএসআর-এ ১৯৪৫ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের ইওফে ফিজিক্যাল-টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৭৪ সালে পিএইচডি করেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের ন্যানোক্রিস্টালস টেকনোলজি ইনকর্পোরেটেডের প্রধান বিজ্ঞানী ছিলেন।

লুই ই ব্রুস ১৯৪৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করেন। এখন সেখানে তিনি একজন অধ্যাপক।

মউঙ্গি জি বাওয়েন্ডি ১৯৬১ সালে প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। ফ্রান্স, তিউনিসিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে ওঠেন। তিনি ১৯৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) অধ্যাপক।

Nobel in Chemistry science Lightning
Advertisment