উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উনের স্বাস্থ্য নিয়ে রহস্য দানা বাঁধার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর আট বছরের বেশি সময়কালের রাজ্যপাটের উত্তরাধিকারী নিয়েও অনিশ্চয়তা ঘনিয়েছে।
কিমের পরিবার সাত দশক ধরে বংশপরম্পরায় পুরুষদের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তর করে এসেছে, কিন্তু ৩৬ বছর বয়সী কিমের কোনও উত্তরাধিকারী নেই। তাঁর নিজের সন্তানেরা বয়সে ছোট এবং শাসক পরিবারের পরিণতবয়স্কদের উত্থানের পথে অনেক বাধা।
৪৭ বছর আগের এক রায় ধরে রেখেছে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো
কয়েকজন সম্ভাব্য উত্তরাধিকারী
কিম ইয়ো জং, বোন
কিছুটা রাজবংশের প্রতিনিধি, কিছুটা ব্যক্তিগত সহকারী কিম তাঁরা দাদার ঘনিষ্ঠ সহচরদের অন্যতম হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভ করেছেন। এ মাসের গোড়ায় তিনি শাসক দল ওয়ার্কার্স পার্টি অফ কোরিয়ার বকল্প পলিটব্যুরো সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
এক দিক থেকে দেখলে তিনিই কিম পরিবারের একমাত্র সদস্য যাঁর বর্তমান শাসন ব্যবস্থার যে ক্ষমতা, তার দিকে সত্যিকারের পদক্ষেপ রয়েছে।
যদিও তিনি শাসক পরিবারের সদস্য হিসেবে প্রথমবার সিওল পরিদর্শন করেছিলেন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চিনের শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের সময়ে কিম জংয়ের সঙ্গী হয়েছিলেন, তার সঙ্গে এ কথাও মনে রাখতে হবে চিনের এক রেলস্টেশনে এক নেতার সিগারেট নেভানোর মত গুরুত্বহীন কাজও তাঁকে করতে দেখা গিয়েছিল। উত্তর কোরিয়ার পিতৃতান্ত্রিক অভিজাতবর্গ অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সী এক মহিলাকে দেশের পরবর্তী সর্বোচ্চ ক্ষমতাসীনের স্থানে দেখতে চাইবে কিনা তা স্পষ্ট নয়।
আরও নোট ছাপা হবে, না হবে না
কিম জং উনের পুত্র
কিমের ঠাকুর্দা কিম ২ সুং প্রতিষ্ঠিত, এবং কিমের বাবার পরিচালিত এই শাসক পরিবারে উত্তরাধিকারী হিসেবে কোনও পুরুষই সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য।
দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দাবিভাগের বক্তব্য অনুসারে কমি রাই সোল জু নামের এক প্রাক্তন গায়িকাকে ২০০৯ সালে বিয়ে করেন ও তাঁদের তিন সন্তান রয়েছে বলে জানা যায়।
সমস্যা হল এই সন্তানদের কারও কথাই দেশের সরকারি সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়নি, এবং সবচেয়ে বড় সন্তানের জন্ম হয়েছে ২০১০ সালে, জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি সংবাদপত্র।
ডেনিস রোডন্যান নামের এক প্রাক্তন বাস্কেটবল তারকা ২০১৩ সালে জানান তিনি জু আয়ি নামের এক মেয়েকেও দেখেছেন।এ অবস্থায় এই শিশুরা প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া অবধি তাদের জায়গায় কাউকে পরিচালনভার সামলাতে হবে।
কিম হান সোল, ভাইপো
উঠে আসছে ১৯৯৫ সালে জন্মগ্রহণ করা কিম হান সোলের নামও। কিন্তু এ ব্যাপারে খটকা হল তাঁর বাবা কিম জং নাম কি দ্বিতীয় কিম জংয়ের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন এবং ম্যাকাওয়ে চিনা জুয়া কেন্দ্রে নির্বাসনে যান!
কিম জং নাম ছিলেন কিম জং উনের সৎ দাদা এবং তাঁর সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী, যিনি প্রায়শই জুয়া খেলতেন এবং মাঝে মাঝেই ভাইয়ের রাজত্বের সমালোচনা করতেন।
ডিপ ন্যুড- সাইবার জগতের বড় বিপদ
কিম হান সোলের পিয়ংইয়ংয়ে ফেরার সম্ভাবনা ২০১৭ সালে নিঃশেষিত হয়ে যায়। কুয়ালালামপুর বিমান বন্দরে তাঁর বাবার মুখে এক ধরনের নার্ভ এজেন্ট লেপে দিয়ে তাঁকে হত্যা করেন দুই মহিলা। চিনা পুলিশ পরে তাদের দেশে পাঠানো বেশ কয়েকজন উত্তর কোরিয়ার এজেন্টকে গ্রেফতার করে যাদের সেখানে পাঠানো হয়েছিল কিম হান সোলকে হত্যার উদ্দেশ্যে। কিন্তু কিম হান সোলের খবর অজানাই থেকে গিয়েছে।
কিম জং চোল, দাদা
কিম জং উনের একমাত্র জীবিত ভাই কিম জং চোলের সম্ভাবনাও দূরবর্তী, কারণ রাজনীতির চেয়ে তাঁর বেশি আগ্রহ গিটারে। লন্ডনে উত্তর কোরিয়া দূতাবাসের প্রাক্তন দ্বিতীয় শীর্ষ পদাসীন ইয়োং হো একবার বলেছিলেন কিমের দাদার কোনও সরকারি পদ নেই, তিনি শুধু একজন সত্যিকারের প্রতিভাবান গিটারবাদক।
দ্বিতীয় কিম জং তাঁর মধ্যম পুত্রকে দেখতেন মেয়েলি হিসেবে। একথা লিখেছিলেন কেনজি ফুজিমোতো নামের ছদ্মনামধারী একজন লেখক, যিনি নিজেকে দাবি করেছিলেন প্রাক্তন উত্তর কোরিয় শাসকের ব্যক্তিগত সুশি শেফ হিসেবে। ২০১১ সালে দক্ষিণ কোরিয় সংবাদমাধ্যম কিম জং চোলকে পাকড়াও করতে সক্ষম হয়। তিনি সে সময়ে সিঙ্গাপুরে এরিক ক্ল্যাপটনের কনসার্ট দেখছিলেন। তিনি সুইজারল্যান্ডে পড়াশোনা করেছেন এবং ভাইয়ের মত তিনিও মার্কিন বাস্কেটবলের ফ্যান, এ ছাড়া তাঁর সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন