নিজের মেয়েকে উত্তর কোরিয়ার ভবিষ্যৎ নেত্রী হিসেবে তালিম দিচ্ছেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন। তাঁর মেয়ে কিম জু অ্যা-কে প্রথম জনসমক্ষে দেখা গিয়েছিল গত বছর (২০২২ সাল) নভেম্বরে। তার বাবা, উত্তর কোরিয়ার স্বৈরশাসক কিম জং উনের সঙ্গে একটি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের সময় এসেছিল কিম জু অ্যা। সেই সময় তার বয়স প্রায় ৯ বছর। স্বভাবতই বিশ্লেষক এবং গণমাধ্যমের ফোকাস গিয়ে পড়েছিল কিমের মেয়ের ওপর। কিমের মেয়েই কি উত্তর কোরিয়ার ভবিষ্যৎ নেত্রী? সেই সময় থেকে এই প্রশ্নেই শুরু হয় জল্পনা।
বিভিন্ন সামরিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত
তারপর থেকে এবছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাবার সঙ্গে মোট পাঁচটি অনুষ্ঠানে এসেছিল কিম জু অ্যা। তাতে জল্পনা আরও বাড়ে। সেই জল্পনার আগুনে আরও বাতাস দেন দক্ষিণ কোরিয়ার মন্ত্রী কিম ইউং-হো। তিনি গত ৬ ডিসেম্বর, গণমাধ্যমকে বলেছিলেন যে উত্তর কোরিয়ার নেতা মনে হচ্ছে, 'তাড়াহুড়ো করছেন'। সূত্রের খবর, গোয়েন্দাদের থেকে খবর পেয়েই দক্ষিণ কোরিয়ার মন্ত্রী ওই কথা বলেছিলেন। এই ব্যাপারে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা কর্তা চো তাই-ইয়ং চলতি মাসের গোড়ার দিকে সংবাদ সংস্থা কেবিএসকে জানান যে তিনি বিশ্বাস করেন, কিম জু অ্যাকে তার বাবার উত্তরাধিকারী হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে।
তারপর থেকেই চলছে প্রচার
দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা কর্তা বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার প্রচারমাধ্যম ইতিমধ্যেই মেয়েটির ব্যক্তিত্বের একটি সংস্কৃতি তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাকে 'কোরিয়ার মর্নিং স্টার' হিসেবে উল্লেখ করেছে। যা আগে কিম ইল সুং-কে বলা হত। দক্ষিণ কোরিয়ার দাবি যে মিথ্যে নয়, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার সমাজ বিশেষজ্ঞ কিম সুং কিয়ং। তিনি বলেন, 'আগে, আমি এই ব্যাপারে সন্দিহান ছিলাম। কিন্তু, এখন দেখছি যে কিম জু অ্যা আরও বেশিসংখ্যক সামরিক অনুষ্ঠানে থাকছে। যা অত্যন্ত অর্থবহ।' দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিওলের উত্তর কোরিয়ান কালচারাল স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির এই বিশেষজ্ঞ বলেন, 'কিম জং উন যেখানেই যান এবং তিনি যা বলেন, তা বিশ্বের বাকি অংশ খুব ভেবেচিন্তে দেখে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে কিমের মেয়ে তাঁর সঙ্গে উপস্থিত থাকছেন মানেই, এতে একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।'
আরও পড়ুন- গ্রেফতারি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ভিন্ন রায়, যেমন খুশি ধরপাকড় নিয়ে কতটা নাজেহাল ইডি?
উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম জু অ্যা-এর প্রপিতামহ
প্রথমে বিশেষজ্ঞরা ভেবেছিলেন, কিম সঙ্গে একটি শিশুকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, তার অর্থ হল তিনি তাঁর ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করতে চান। কিন্তু, পরবর্তীতে কিম তাঁর মেয়েকে নিয়ে যখন ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ বা সামরিক কুচকাওয়াজের মতো সামরিক কর্মসূচিতে যোগ দেন, তখন থেকেই ধারণাটা বদলাতে শুরু করে। কারণ, এভাবেই কিম ইল সুং তাঁর ছেলে কিম জং ইলের হাতে সামরিক ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। আর, সেখান থেকে ক্ষমতা একইভাবে এসেছে কিম জং উনের হাতে। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে কিম জং ইল মারা যান। তারপর থেকে উত্তর কোরিয়ার দায়িত্ব হাতে তুলে নিয়েছেন কিম জং উন।