মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) দুপুর ১২.১৭-এ, বেঙ্গালুরু একটি 'জিরো শ্যাডো ডে' বা ছায়াহীন দিন অনুভব করল। কারণ, এই সময় উল্লম্ব বস্তুগুলো কোনও ছায়া ফেলেনি। কারণ হল সূর্য ঠিক শীর্ষে ছিল। তাই ছায়া সরাসরি বস্তুর নীচে পড়েছে। জওহরলাল নেহরু তারামণ্ডল আগেই বিবৃতিতে জানিয়েছিল, '২০২৩ সালের ২৫ এপ্রিল সূর্য বেঙ্গালুরুতে এবং ১৩০ উত্তর অক্ষাংশ বরাবর সমস্ত জায়গায় (দুপুর ১২টা ১৭ নাগাদ) ঠিক উপরে পৌঁছে যাবে। যার ফলে, সমস্ত উল্বম্ব বস্তুর ছায়া সেই সময় অদৃশ্য হয়ে যাবে। জিরো শ্যাডো ডে বা ছায়াশূন্য দিবস অবশ্য নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন দিনে ১৩০ অক্ষাংশ থেকে দূরে বিভিন্ন স্থানেই তা অনুভব করা যায়।'
ছায়াশূন্য দিবস কী?
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস যেমনটা আগেই ব্যাখ্যা করেছিল যে, কর্কটক্রান্তি এবং মকরক্রান্তির মধ্যবর্তী পৃথিবীর প্রতিটি বিন্দুতেই বছরে দুটি ছায়াহীন দিবস থাকে। বেঙ্গালুরুতে পরবর্তী ছায়াহীন দিবস দেখা যাবে ১৮ আগস্ট। জিরো শ্যাডো ডে বা ছায়াশূন্য দিবস গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আর, তাই ভারতে রাঁচির উত্তরের স্থানগুলো এর বাইরে রয়েছে। অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া (এএসআই) এর পাবলিক আউটরিচ এবং শিক্ষা কমিটির সদস্য নিরুজ রামানুজাম দ্য ইন্ডিয়ানকে বলেছিলেন যে, 'উত্তরায়ণের সময় সূর্য যখন উত্তর দিকে চলে যায় এবং দক্ষিণায়নের সময় সূর্য যখন দক্ষিণ দিকে ঢলে পড়ে, সেই সময় এই ছায়াশূন্য দিবস তৈরি হয়।'
কেন ছায়াশূন্য দিবস তৈরি হয়?
উত্তরায়ণ (শীত থেকে গ্রীষ্ম পর্যন্ত সূর্যের দক্ষিণ থেকে উত্তরে চলাচল) এবং দক্ষিণায়ন (উত্তর থেকে দক্ষিণে ফিরে যাওয়ার) ঘটে থাকে। কারণ পৃথিবীর ঘূর্ণন অক্ষ সূর্যের চারপাশের অক্ষের প্রায় ২৩.5° কোণে হেলে থাকে। রামানুজম জানিয়েছেন যে সূর্যের অবস্থান পৃথিবীর নিরক্ষরেখার ২৩.৫° উত্তর থেকে ২৩.৫° দক্ষিণ এবং পিছনে চলে যায়। যে সমস্ত স্থানের অক্ষাংশ সূর্যের অবস্থান এবং বিষুবরেখার মধ্যে কোণ সমান হয় সে দিন শূন্য ছায়া দিবস অনুভব করে, স্থানীয় দুপুরে একটি বস্তুর নীচে ছায়া থাকে। যে সমস্ত স্থানের অক্ষাংশ সূর্য এবং বিষুবরেখার কোণের সমান হয়, সেই সব জায়গায় ছায়াশূন্য দিবস অনুভূত হয়। অর্থাৎ, ভরদুপুরে ছায়া বস্তুর ঠিক নীচে চলে যায়।
আরও পড়ুন- গুজরাট-তামিলনাড়ুর সুদৃঢ় যোগসূত্র এতদিন লুকিয়ে রাখা হয়েছিল, কেন এমন অভিযোগ মোদীর?
এএসআই তার ওয়েবসাইটে বলেছে, 'আমরা সবাই স্কুলে পড়েছি যে পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে। আর পৃথিবীর অক্ষ, নিরক্ষরেখার ওপরে অঙ্কিত উলম্ব থেকে ২৩.৫° কোণে হেলে অবস্থান করছে যার কারণে ঋতু পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ এটি নিরক্ষীয় তলের সঙ্গে ৬৬.৫° কোণ উৎপন্ন করেছে। সূর্যকে সামনে রেখে পৃথিবী নিজের অক্ষ বা মেরুরেখার চারিদিকে পশ্চিম থেকে পূর্বে অবিরাম ঘুরে চলেছে। নিজের অক্ষকেন্দ্রিক পৃথিবীর এই গতিকে বলে আবর্তন গতি বা আহ্নিক গতি। আর, পৃথিবী নিজের মেরুদণ্ডের চারিদিকে অবিরাম আবর্তন করে একটি নির্দিষ্ট উপবৃত্তাকার পথে অনবরত সূর্যকে প্রদক্ষিণ বা পরিক্রমা করছে। এই গতিকে বলে বার্ষিক বা পরিক্রমণ গতি।'