পুনর্নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক দেশ এক নির্বাচনের আইডিয়া ফের জাগিয়ে তুলেছেন গত সপ্তাহে। একটি কমটিও তৈরি করা হয়েছে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাও চলছে। তবে অনেক বিরোধী দলই লোকসভা ও বিধানসভা ভোট একসঙ্গে করার ব্য়াপারে আপত্তি তুলেছেন।
এক নির্বাচন হলে কী সুবিধা হবে?
এ নিয়ে দু পক্ষেরই যুক্তি রয়েছে। একসঙ্গে ভোট হলে খরচ যেমন কমবে, তেমনই এক মরশুমে সব ভোট হয়ে যাবে। এখন একবার এ রাজ্য় একবার ও রাজ্য়ে ভোট হয় এবং তার ফলে আদর্শ নির্বাচনবিধির আওতায় থাকায় বিভিন্ন নীতি বা প্রকল্পের ঘোষণা করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হয় না।
উল্টোদিকে, একসঙ্গে ভোট হলে তার সুবিধা পাবে জাতীয় স্তরে ক্ষমতাশীল দলগুলিই এবং অসুবিধেয় পড়বে আঞ্চলিক দলেরা। সমস্য়া বাড়বে যদি কোনও একটা সরকার সময়সীমার আগেই পড়ে যায়। শেক্ষেত্রে বিধান পরিষদ তো ছেড়েই দিন, পড়ে যেতে পারে কেন্দ্রীয় সরকারও। ১৯৫২ সালে থেকে এখনও পর্যন্ত গঠিত ১৭টি লোকসভার মধ্য়ে সাতবার সময়সীমা পূর্ণ হওয়ার আগে লোকসভার পতন ঘটেছে, ১৯৭১, ১৯৮০, ১৯৮৪, ১৯৯১, ১৯৯৮, ১৯৯৯ এবং ২০০৪ সালে। এ ছাড়া অন্য় সমস্য়াও রয়েছে, যেমন এখনকার তুলনায় দ্বিগুণ ইভিএম এবং ভিভিপ্য়াট মেশিন লাগবে, যদি সব ভোট একসঙ্গে হয়।
স্বাধীন ভারতে প্রথমবারে কি একসঙ্গে সব ভোট হয়নি?
১৯৫২ ও ১৯৫৭ সালে লোকসভা ও বিধান পরিষদের ভোট হয় একসঙ্গে। তখন কংগ্রেসের সারাদেশে সর্বময় কর্তৃত্ব। এই পরিস্থিতির বদল ঘটে কেরালায় ১৯৫৯ সালের জুলাই মাসে যখন কেন্দ্র সংবিধানের ৩৫৬ নং অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে নাম্বুদিরিপাদের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টির সরকার ফেলে দেয়। এর পর সে রাজ্য়ে ভোট হয় ১৯৬০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।
কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা ক্রমশ খর্ব হতে থাকে। ১৯৬৭ সালের ভোটে বিহার, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, মাদ্রাজ ও কেরালায় ব্য়াপক হারের মুখে পড়ে তারা। এর ফলে সংযুক্ত বিধায়ক দল সরকার ক্ষমতায় আসে। এর মধ্য়ে ছিল ভারতীয় ক্রান্তি দল, এসএসপি, পিএসপি, স্বতন্ত্র পার্টি, জনসংঘ এবং কংগ্রেসের ভাঙা অংশ ক্ষমতায় আসে। ভাঙন এবং পুনর্ভাঙনের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত বিধানসভাগুলি ভেঙে দিতে হয়, যার ফলে কেন্দ্রীয় ভোট ও বিধানসভা ভোটের একসঙ্গে করার চক্রটিও শেষ হয়ে যায়।
বর্তমানে অন্ধ্র প্রদেশ, ওড়িশা, অরুণাচল প্রদেশ এবং সিকিমের ভোট লোকসভা ভোটের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়।
সাম্প্রতিক কালে ১৯৮৫ সালের দলত্য়াগ বিরোধী আইন এবং ৩৫৬ ধারার প্রয়োগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সুবাদে বিধানসভাগুলি তাদের মেয়াদ পূর্ণ করছে। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে রাষ্ট্রপতি কোনও বিধানসভা সাসপেন্ড করতে পারেন কিন্তু সংসদের অনুমোদন ছাড়া বিধানসভা ভাঙতে পারেন না। এ ছাড়া রাজ্য়ে রাষ্ট্রপতি শাসনের সিদ্ধান্ত বিচারবিভাগের পরীক্ষার মুখে পড়তে পারে।
এনডিএ ক্ষমতায় আসার পর কী ভাবে ফের এই দাবি সামনে এল?
২০১৫ সালে সংসদের এক স্ট্য়ান্ডিং কমিটি এ নিয়ে রিপোর্ট জমা দেয়। ওই রিপোর্টে লোকসভা ও বিধানসভা ভোট একসঙ্গে করার পক্ষে কয়েকটি যুক্তি দেওয়া হয়। তার মধ্য়ে রয়েছে
১) বিভিন্ন নির্বাচন সংগঠিত করতে ব্য়াপক খরচ হয়
২) নির্বাচনের সময়ে আদর্শ আচরণবিধির কারণে বিভিন্ন সময়ে নীতি পঙ্গুত্ব তৈরি হয়
৩) প্রভাব পড়ে প্রয়োজনীয় পরিষেবা দানে
৪) নির্বাচনের সময়ে মানবশক্তির প্রচুর পরিমাণ নিয়োগ
কংগ্রেস অবশ্য় বলেছে এ প্রস্তাব বাস্তবোচিত নয় এবং কর্মক্ষমও নয়। তৃণমূল কংগ্রেস বলেছে এ প্রস্তাব অগণতান্ত্রিক এবং সংবিধানবরোধী, সিপিআই. সিপিএম ও এনসিপি এর বাস্তববাদিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
কোনও মতৈক্য়ের সম্ভাবনা রয়েছে কি?
বিরোধীদের আশঙ্কা রাজ্য়ের ভোট থেকে এর ফলে আঞ্চলিক উপাদান নষ্ট হবে এবং আঞ্চলিক নেতা-নেত্রীরা জাতীয় নেতাদের ছায়ায় ঢাকা পড়ে যাবেন। ক্রমবর্ধমান শক্তিশালী বিজেপি তাদের এ আইডিয়া এবারে নির্বাচনী ইস্তাহারেও রেখেছিল। স্বরাজ ইন্ডিয়া দলের সভাপতি যোগেন্দ্র যাদব বলেছেন এ ধারণা আসলে এক জাতি, এক ভোট, এক দল, এক নেতার।
বিরোধীরা এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করবেই। সরকারকে রাজ্য়সভায় প্রয়োজনীয় সংখ্য়া অর্জন করেই এ বিষয়ক সংশোধনী আনতে হবে।
Read the Full Story here