Advertisment

ভারতীয় ভাষার প্রথম বুকার-লাভ, খ্যাতি-শীর্ষে শ্রী, বুকার-কাহিনি জানেন?

বুকার প্রাইজ গল্পসমগ্র, উপন্যাসের বইকে দেওয়া হয়, ইংরেজিতে লিখিত, প্রথম এই পুরস্কার দেওয়া শুরু ১৯৬৯ সালে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
geetanjali sree

যখন ইংরেজিতে লিখতে পারেন তখন হিন্দিতে কেন লিখছেন? এই প্রশ্নটা তাঁকে করেছেন অনেকেই। তাঁকে খুবই অবাক করেছে প্রশ্নটা, কারণ নিজের মাতৃভাষাতে তো লিখবেন কেউ, সেটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু ওই প্রশ্নে ছিল শ্লেষ, হতবাক হয়ে যাওয়া, 'কেন এই ভাবে হিন্দিতে লিখে সময় বরবাদ করছেন' টাইপের ব্যাপার। একটি সেমিনারে এমনই বলেছিলেন হিন্দি ভাষার সাহিত্যিক গীতাঞ্জলি শ্রী। তিনি বুঝতে পেরে গিয়েছেন অনেক আগেই-- স্বাভাবিকতাটাই এখন অস্বাভাবিক, আর অস্বাভাবিকতাটাই স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। এবং স্বাভাবিক মনে করে অস্বাভাবিক কাজটা করেছিলেন বলেই ভারতের প্রথম সাহিত্যিক বুকার প্রাইজ-টা পেলেন। হ্যাঁ, অবশ্যই ইংরাজি অনুবাদে। এ জন্য আমেরিকার বাসিন্দা অনুবাদক ডেইসি রকওয়েলের কৃতিত্ব কম নয়। বইটির নাম, ইতিমধ্যেই রাষ্ট্র হয়ে গিয়েছে, রেত সমাধি। ইংরেজি অনুবাদে-- টুম্ব অফ স্যান্ড।

Advertisment

ডেইসি রকওয়েলের অনুবাদ নিয়ে অনেক কিছু বলা যায়। যেমন, তিনি ঠিক অনুবাদ করেন না, নিজেকেও প্রকাশ করেন অনুবাদের মধ্য দিয়ে, প্রকৃত লেখার সঙ্গে তা মিশে গিয়ে নতুন একটা লেখা হয়ে যায়। হিন্দি এবং উর্দুতে পারদর্শিনী এই মহিলা ইতিমধ্যেই নানা নামী হিন্দি সাহিত্যিকের বই অনুবাদ করে ফেলেছেন। আন্তর্জাতিক মহলে সুখ্যাতিও পেয়েছেন বেশ ভালই। গীতাঞ্জলি শ্রী-র এই বইটা অনুবাদ তাঁর সোজা ব্যাটে ছক্কা, একেবারে গ্যালারি টপকে। ২০১৮ সালেই এই অনুবাদের কাজটি প্রকাশ পেয়েছে। বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশনের বছরে দুটি পুরস্কার দেয়, তারই একটি পেয়েছে টুম্ব অফ স্যান্ড। এই পুরস্কার প্রদান সেবামূলক কাজ। মানুষের কল্যাণে সাহিত্যকে উৎসাহিত করাই এর লক্ষ্য। দুটি বুকার প্রাইজের মধ্যে একটি, ইংরেজিতে লেখা ফিকশনের জন্য দেওয়া হয়, তার নাম 'দ্য বুকার প্রাইজ'। আর দ্বিতীয়টি দেওয়া হয় ইংরেজিতে অনূদিত অন্য অন্য কোনও ভাষায় লেখা বইয়ের জন্য, পুরস্কারের নাম-- দ্য ইন্টারন্যাশনাল বুকার প্রাইজ, যেটি পেয়েছেন গীতাঞ্জলি শ্রী। শুনতে একটু মজার লাগলেও বলা যায় যে, গীতাঞ্জলি আরও একবার পুরস্কৃত, আন্তর্জাতিক পুরস্কারে, ১৯১৩ সালে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল প্রাইজ পান গীতাঞ্জলীর ইংরেজি অনুবাদ, সং অফারিংস-এর সৌজন্যে। বইটি নিজেই অনুবাদ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। যার ভূমিকা লেখেন আইরিশ কবি ডবলিউ বি ইয়েটস।

বুকার প্রাইজ কী?

বুকার প্রাইজ গল্পসমগ্র, উপন্যাসের বইকে দেওয়া হয়, ইংরেজিতে লিখিত, প্রথম এই পুরস্কার দেওয়া শুরু ১৯৬৯ সালে। প্রতি বছর একটি প্যানেল এই পুরস্কারের প্রাপকের নাম স্থির করে। বাধ্যতামূলক ভাবে ইংরেজিতে লেখা হওয়া চাই বইটি, ব্রিটেন কিংবা অ্যায়ারল্যান্ডে প্রকাশিত হতে হবে। বিচারকদের প্যানেলটি তৈরি নামি ইতিহাসবিদ, লেখক এবং অধ্যাপক প্রভৃতিদের নিয়ে। এ বছর পাঁচ বিচারকের প্যানেল পুরস্কার প্রাপক বাছার দায়িত্বে। বুকার প্রাইজ-জয়ী পেয়ে থাকেন ৫০ হাজার পাউন্ড। আগেই তৈরি হয়ে যায় একটি তালিকা, যা বারো জনের। যেটিকে বলা হয়ে থাকে, বুকার ডজন। এ বছরের বুকার প্রাইজের লং লিস্ট ঘোষণা করা হবে জুলাইতে। শর্ট লিস্ট, যাতে ৬টি বই থাকে, সেপ্টেম্বরে ঘোষণা করা হবে। জয়ী কে হবেন, তা জানানো হবে এ বছরেরই নভেম্বরে।

ইন্টারন্যাশনাল বুকার প্রাইজ কী?

দ্য ইন্টারন্যাশনাল বুকার প্রাইজ দেওয়া শুরু হয় ২০০৫ থেকে। প্রাথমিক ভাবে এটি ছিল দ্বিবার্ষিক। ইংরেজিতে প্রকাশিত বা ইংরাজি অনুবাদে পাওয়া যায় কাজের জন্য যে কোনও দেশের জীবিত লেখককে এই পুরস্কার দেওয়া হত। অ্যালিস মুনরো, লিডিয়া ডেভিস এবং ফিলিপ রথ এঁরা হলেন প্রথম দিকের পুরস্কার প্রাপক। ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর দেওয়া শুরু হয় এই ইন্টারন্যাশনাল বুকার প্রাইজ। কোনও ভাষায় লেখা কোনও একটি বই, যা ইংরেজিতে অনূদিত, তার জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হতে থাকে। ৫০ হাজার পাউন্ডই দেওয়া হয় এই পুরস্কারে, তবে লেখক ও অনুবাদক- দু'জনকে যা সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন- রামায়ণের পথে পর্যটন, ট্রেনে চড়ে যেন এক মহাকাব্যিক জার্নি, জানেন সে ‘গৌরব’-কথা?

বুকার নাম কেন?

এই পুরস্কারের প্রাথমিক স্পনসরের নাম বুকার গ্রুপ লিমিটেড, ব্রিটিশ ফুড এবং হোলসেল অপারেটর। তাদের স্পনসরশিপ চলে ১৯৬৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত। দ্য ম্যান গ্রুপ, ব্রিটেনের একটি ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম এই পুরস্কারটিকে স্পনসর করতে শুরু করে ২০০২ সাল থেকে। পুরস্কারটির নাম তখন হয়ে যায়, ম্যান বুকার প্রাইজ। ২০১৯ সালে ম্যান গ্রুপ তাদের স্পনসরশিপে ইতি টানে। আমেরিকান চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন ক্র্যাঙ্কস্টার্ট এর পর এই পুরস্কারটিকে স্পনসর করতে শুরু করে। ফের বুকারেই ফিরে আসে এর নাম।

বুকারের বড় নাম

মার্গারিট অ্যাটউড বুকার পেয়েছেন, দ্য টেস্টামেন্টস-এর জন্য। ইয়ান মার্টেল পেয়েছেন লাইফ অফ পাই-এর জন্য, জুলিয়ান বার্নস বুকার পকেটে পোরেন দ্য সেন্স অফ অ্যান এন্ডিং লিখে। কয়েক জন ভারতীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখকও পেয়েছেন এই পুরস্কার। দ্য গড অফ স্মল থিংস-এর জন্য অরুন্ধতী রায়, মিডনাইট'স চিন্ড্রেন লিখে বুকার পান সলমন রুশদি, দ্য ইনহেরিটেন্স অফ লস-এর জন্য পান কিরণ দেশাই। কিন্তু সব-কটি বই-ই লেখা ইংরেজিতে। গীতাঞ্জলি শ্রী-র মাথায় সেই বিরল মুকুট, যিনি প্রথম ভারতীয় ভাষায় এই পুরস্কারের জয়যাত্রাটা শুরু করলেন।

Read full story in English

nobel prize literature english verson
Advertisment