পেঁয়াজের দাম খবরের শিরোনাম থেকে সরে গিয়েছে বটে, কিন্তু দাম এখনও কমেনি। প্রায় সব মেট্রো শহরেই পেঁয়াজের দাম অন্তত ১০০ টাকা কিলো। সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ করেছে। কালোবাজারির ব্যাপারে প্রচুর নজরদারি চলছে, কিন্তু দাম কমছে না। বাণিজ্য সূত্র অনুসারে, দাম আপাতত কমার সম্ভাবনা নেই।
পেঁয়াজের দাম এত বাড়ল কেন?
এ বছর সেপ্টেম্বর মাস থেকে পেঁয়াজের দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে, নভেম্বরে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছয়। পুনে ও মুম্বইয়ের শহরাঞ্চলের ক্রেতারা তখন থেকেই ১০০ টাকার বেশি দামে পেঁয়াজ কিনেছেন।
নতুন খরিফ ও পরবর্তী খরিফ চাষে ব্যর্থতার ফলে দাম ভয়াবহ বৃদ্ধি পায়। মহারাষ্ট্রে কৃষকরা জুন-জুলাই মাসে খরিফ বীজ পোঁতেন এবং অক্টোবরের পর শস্য তোলেন। একই ভাবে দ্বিতীয় খরিফ শস্যের বীজ পোঁতা হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে এবং তা তোলা হয় জানুয়ারি মাসে। দবারের খরিফ শস্যতেই আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে তা দীর্ঘদিন ধরে মজুত রাখা যায় না। রবি শস্য যা ডিসেম্বর জানুয়ারিতে চায করা হয় এবং মার্চের পর তোলা হয়, তা দীর্ঘসময় ধরে মজুত রাখা সম্ভব।
আরও পড়ুন, নয়া নাগরিকত্ব আইন কী?
দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার কী করেছে?
সরকার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়ে আমদানিতে অনুমতি দিয়েছে। কালোবাজারি আটকাতে মজুতের পরিমাণের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১৭ থেক ১৮ হাজার টন আমদানির চুক্তি হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এমএমটিসির সঙ্গে। বেসরকারি ব্যবসায়ীরা ৮ থেকে ৮৫০০ টন পেঁয়াজ আমদানি করছেন। কেন্দ্রীয় সরকারও এক লক্ষ টন পেঁয়াজ আমদানির পরিকল্পনা করেছে।
এত পদক্ষেপ সত্ত্বেও দাম কমছে না কেন?
দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য আমদানি এবং মজুতের পরিমাণ বেঁধে দেওয়া কেন্দ্রীয় সরকারের শেষ অস্ত্র। একবার মজুতের পরিমাণ ঘোষণা হয়ে গেলে জেলা কালেক্টরেট অতিরিক্ত মজুত পণ্য বাজেয়াপ্ত করতে পারে। যেসব ব্যবসায়ীরা মজুতের ঊর্ধ্বসীমা অমান্য করবে, তাদের জরুরি পণ্য আইনে জেল পর্যন্ত হতে পারে।
আমদানির ফলে পণ্যের প্রাপ্তির উন্নতি হবে এবং দাম কমবে। কিন্তু পেঁয়াজের দামের ক্ষেত্রে দুটি পদক্ষেপের কোনওটিই কাজে লাগেনি।
যে পরিমাণ পেঁয়াজ প্রয়োজন হয়, তাতে বিশাল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করলেও তা দুদিনের বেশি চলে না। দেশীয় বাজারে পেঁয়াজের কম উৎপাদন, আমদানি দিয়ে সামলানো যাবে না।
সেপ্টেম্বরে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা কিলো। এর পর প্যাকিং, হ্যান্ডলিং এবং পরিবহণের খরচ মিলিয়ে পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয় কিলো প্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। কিন্তু এখন আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম ৫০ তেকে ৬০ টাকা হওয়ায় এই পেঁয়াজ যখন খুচরো বাজারে পৌঁছচ্ছে, তখন তার দাম বেড়ে হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কিলো। এর ফলে আমদানির কারণটাই আর বজায় থাকছে না। পেঁয়াজ মজুতের পরিমাণ বেঁধে দেওয়া হয়েছিল যাতে কালোবাজারি না হয়।
আরও পড়ুন, গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে কী বলা হয়েছে নানাবতী কমিশনের রিপোর্টে?
কিন্তু পাইকারি বাজারে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কিলো পেঁয়াজের দাম পৌঁছনর পর, কোনও ব্যবসায়ীই অত দামি পণ্য মজুত রাখতে চান না। তখন তাঁরা চাইছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব বিক্রি করে দিতে।
সে কারণেই মজুতসীমা বেঁধে দেওয়া সত্ত্বেও পেঁয়াজের দাম কমেনি।
এর পর কী
কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রকের আধিকারিকদের মতে, পেঁয়াজের দাম এখন বেশিই থাকবে। গত অক্টোবরে মহারাষ্ট্রে অসময়ের বৃষ্টিতে দ্বিতীয় খরিফ চাষ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আগামী কিছুদিনে দামের সামান্য সংশোধন হলেও, দাম সত্যিই কমবে রবি শস্য বাজারে আসার পর। সেও ফেব্রুয়ারির আগে নয়। ফলে আপাতত কিছুদিন পেঁয়াজ বাজার থেকেই গ্রাহকদের চোখে জল আনবে।