সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম TikTok বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) বলেছে যে তারা ওসামা বিন লাদেনের ২০০২ সালের 'আমেরিকাকে চিঠি' প্রচার করলে সেই অ্যাকাউন্টকে নিষিদ্ধ করবে। ওই চিঠিতে নিহত আল-কায়েদা নেতা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হওয়া হামলাকে ন্যায্য বলে প্রমাণের চেষ্টা করেছিলেন। TikTok বিবৃতিতে বলেছে, 'এই চিঠির প্রচারের বিষয়বস্তু স্পষ্টভাবেই যে কোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন না-করার বিষয়ে আমাদের নিয়ম ও নীতিকে লঙ্ঘন করেছে।' বুধবার, দ্য গার্ডিয়ান বিন লাদেনের অনুবাদ করা চিঠি ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে দিয়েছে। ওই চিঠি ২০০২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। নিউজ আউটলেট তার ওয়েবসাইটে বলেছে যে চিঠিটি সম্পূর্ণ প্রসঙ্গ ছাড়াই সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হচ্ছে। তাই, 'আমরা এটিকে নামিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং এর পরিবর্তে পাঠকদের সেই সংবাদ নিবন্ধের দিকে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যেটি মূলত এই চিঠিকে প্রাসঙ্গিক করেছে।' এক্ষেত্রেই প্রশ্ন উঠছে, কেন ২১ বছর পুরনো একটা চিঠি সোশ্যাল মিডিয়ায় এত আকর্ষণীয় হয়ে উঠল? আর চিঠিতে কী-ই বা লিখেছিলেন লাদেন?
লাদেনের চিঠি কেন সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার হচ্ছে?
চিঠিটি পুনরায় জনপ্রিয় ওঠার সঙ্গে বর্তমান ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের সম্পর্ক আছে। এই যুদ্ধ গত ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে হামাসের হামলার পর শুরু হয়েছিল। সেই হামলায় ১,০০০-এরও বেশি লোক প্রাণ হারান। প্রতিশোধ হিসেবে, হামাস দ্বারা শাসিত গাজা উপত্যকায় ইহুদি রাষ্ট্র ইজরায়েল অবিরাম বোমাবর্ষণ করে এবং ছিটমহল গাজায় স্থল আক্রমণও চালিয়েছে। এখনও পর্যন্ত কয়েক হাজার শিশু-সহ ১২,০০০-এরও বেশি প্যালেস্তিনীয়, ইজরায়েলের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন। আল কায়েদা মার্কিন হামলায় প্রায় ৩,০০০ মানুষকে হত্যা করার পরে চিঠিটি লিখেছিলেন বিন লাদেন। সেই চিঠিতে তিনি ইজরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের সমালোচনা করেছিলেন। আমেরিকানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে তাঁরা প্যালেস্তিনীয়দের ওপর 'নিপীড়ন' চালানোর জন্য অর্থ দিচ্ছে। পাশাপাশি ওই চিঠিতে লাদেন ইহুদিবিরোধী মন্তব্যও করেছিলেন।
ব্যবহারকারীদের বক্তব্য
TikTok-এর মত প্ল্যাটফর্মে, অসংখ্য ব্যবহারকারী চিঠিটি মার্কিন বিদেশনীতির সমালোচনা করার জন্য ব্যবহার করেছেন। সেখানে ওই ব্যবহারকারীরা দাবি করেছেন যে, চিঠিটি তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করেছে। উদাহরণ স্বরূপ, একজন ব্যবহারকারী TikTok-এ শেয়ার করা একটি ভিডিওতে ব্যাখ্যা করেছেন, 'এটা আসলে আমার মন ছুঁয়ে গেছে যে আমেরিকান জনগণের কাছে সন্ত্রাসবাদকে এমন একটি ধারণা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে যে সন্ত্রাসবাদীরা হল মানুষের এলোমেলো গোষ্ঠী। তারা হঠাৎ একদিন জেগে ওঠে। আর, শুধু ঘৃণা করে। যার কোনও মানে হয় না।'
বিশ্লেষকরা যা বলছেন
নিউজউইক ম্যাগাজিন রিপোর্টে জানিয়েছে, চিঠিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার কারণ কী, তা এখনও স্পষ্ট নয়। অনেক বিশ্লেষক এবং মার্কিন রাজনীতিবিদ দাবি করেছেন যে TikTok ব্যবহারকারীরা একটি, 'সন্ত্রাসবাদীদের ইশতেহার' প্রচার করছেন। তাঁরা আমেরিকান যুবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য অ্যাপটিকে গোপনে প্রচার চালানোর রাস্তা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, 'এই চিঠি আধুনিক সোশ্যাল মিডিয়ার ভয়ঙ্কর বাস্তবতাকেও প্রতিফলিত করেছে। যেসব তরুণরা ৯/১১-র পরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের কাছে জনপ্রিয় করার জন্য এই সব ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে। যা দ্রুতগতির স্মার্টফোনে দ্রুত ছড়াচ্ছে।'
কী নিয়ে লাদেনের চিঠি?
বিন লাদেন ইজরায়েলের প্রতি সমর্থনের কারণে আমেরিকার ওপর হামলাকে ন্যায্য বলে দাবি করেছেন। তিনি লিখেছেন, 'আপনাদের সাহায্য এবং সমর্থনে ব্রিটিশরা প্যালেস্তাইনকে ইহুদিদের হাতে তুলে দিয়েছে। তারা ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্যালেস্তাইন দখল করে আছে। সেখানে নিপীড়ন, অত্যাচার, অপরাধ, হত্যা, বহিষ্কার, ধ্বংস চালাচ্ছে। ইজরায়েলের সৃষ্টি এবং ইজরায়েল রাষ্ট্র টিকে থাকা সবচেয়ে বড় অপরাধের অন্যতম। আপনারা (আমেরিকা) সেই অপরাধীদের নেতা। আর, অবশ্যই ইজরায়েলের প্রতি আমেরিকার সমর্থনের মাত্রা ব্যাখ্যা করার এবং প্রমাণ করার কোনও দরকার নেই।'
আরও পড়ুন- কীভাবে শনাক্ত করবেন অডিও বা ভিডিও জাল কি না, জানুন ১০ উপায়
লাদেনের বক্তব্য
চিঠিতে আল-কায়েদা নেতা আরও যোগ করেছেন যে প্যালেস্তাইন, সোমালিয়া, চেচনিয়া, কাশ্মীর এবং লেবাননে মুসলমানদের বিরুদ্ধে আমেরিকান সরকারের মদদপুষ্ট হিংসা এবং ইরাকে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা মানুষকে ক্ষুধার্ত করে রেখেছিল। যার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া দরকার। বিন লাদেন চিঠিতে আরও লিখেছেন, আমেরিকার লোকজন, আমেরিকার জনগণ, যাঁরা ট্যাক্স দেন, সেই ট্যাক্সের টাকায় তৈরি বোমা বর্ষণকারী বিমান আফগানিস্তানে, ট্যাংকগুলো প্যালেস্তাইনের বাসিন্দাদের বাড়ি ঘরে আঘাত করছে। যে সেনারা আরব উপসাগরের জমি দখল করে আছে তাঁদের মাইনে দেওয়া হচ্ছে ওই টাকায়। আর, যে নৌবহরগুলো অবরোধ নিশ্চিত করেছে, সেই নৌবহরও তৈরি হয়েছে ওই ট্যাক্সের অর্থে। আর, সেই কারণেই আমেরিকার জনগণ আরবদের বিরুদ্ধে আমেরিকান এবং ইহুদিদের করা সমস্ত অপরাধ থেকে পার পেতে পারেন না। এমনটাই চিঠিতে দাবি করেছিলেন লাদেন।