মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ওসামা বিন লাদেনের ছেলে হামজা বিন লাদেনের নিহত হওয়ার খবর সুনিশ্চিত করে জানিয়েছেন। হামজা কে, আফগানিস্তান-পাকিস্তান এলাকায় আমেরিকার সন্ত্রাসবাদবিরোধী অপারেশনে তার নিহত হওয়ার ঘটনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
হামজা বিন লাদেন
শনিবার হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে হামজা বিন লাদেন হল উসামা বিন লাদেনের ছেলে এবং আল কায়েদার শীর্ষ স্থানীয় সদস্য। হামজার বয়স মোটামুটি ৩০-এর মধ্যে, যদিও আমেরিকার স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে তার জন্মের দুটি সম্ভাব্য বছর রয়েছে, একটি ১৯৮৯, অন্যটি ১৯৮৬।
হামজার জন্ম সৌদি আরবের জেড্ডায়। বেশ কয়েক দশক ধরে লাদেন পরিবার এখানেই বাস করে। হামজা এবং ওসামার বয়োজ্যেষ্ঠ আত্মীয়দের বাসও এখনও এখানেই।
আরও পড়ুন, ফারুক-ওমরদের সঙ্গে দুই সাংসদের সাক্ষাৎ নিয়ে আদালতের রায়
পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদের কুখ্যাত সেই চত্বরে ওসামা যে তিন স্ত্রীর সঙ্গে বাস করত, তাদের একজনের নাম খৈরিয়া সাবার। সেই খৈরিয়া সাবারই হামজার মা।
হামজার বিয়ে হয়েছিল আল কায়েদা নেতা আবদুল্লা আহমেদ আবদুল্লার মেয়ের সঙ্গে। সে বিয়ের ভিডিও পাওয়া গিয়েছিল অ্যাবোটাবাদের সেই বাড়তে, যেখানে ২০১১ সালে ওসামাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয় মার্কিন সিল বাহিনী। গার্ডিয়ান পত্রিকায় ২০১৮ সালে ওসামার সৎ ভাইদের সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সেখানে দাবি করা হয় হামজার আরেকটি বিয়ে হয়েছিল মিশরের সন্ত্রাসবাদী মহম্মদ আটার মেয়ের সঙ্গে। ২০১১ সালে ওয়ার্লড ট্রেড সেন্টারে যে আত্মঘাতী বিমান হামলা হয়, সে বিমান অপহরণকারীদের মাথা ছিল এই মহম্মদ আটা।
পশ্চিমি গোয়েন্দামাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ৯-১১ হামলার পর বেশ কয়েক বছর ধরে ইরানে লুকিয়েছিল হামজা- তেহরান তাকে সুরক্ষা দিত।
২০১৭ সালে আমেরিকা হামজাকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি ঘোষণা করে। তার মাথার দাম ধার্য করা হয় ১ মিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে হামজা যে জনগণের উদ্দেশে বার্তা পাঠিয়েছিল, সেটিই তার শেষ বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে। এ বছরের গোড়ায় হামজার সৌদি নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়।
হামজার হত্যা
এ বছরের জুলাই মাসে আমেরিকান গোয়েন্দাদের উদ্ধৃত করে নিউ ইয়র্ক টাইমস ও এনবিসি নিউজ জানায় হামজা বিন লাদেনকে হত্যা করা হয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট অনুসারে হামজা গত দু বছরের মধ্যে কোনও একটি সময়ে নিহত হয়েছে, এবং তার মৃত্যুতে আমেরিকার হাত রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য তখন এ রিপোর্টের সত্যতা স্বীকার করেনি।
আরও পড়ুন, খালিস্তান আন্দোলনের প্রাক্তন সমর্থকরা ভারতে প্রবেশ করার অনুমতি পেলেন কেন?
সত্যতা স্বীকার করা হল শনিবার। তবে হোয়াইট হাউস এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে চায়নি। কোন সংস্থা এ মৃত্যুর জন্য দায়ী সে ব্যাপারেও কিছু বলা হয়নি। এমনকি সংবাদমাধ্যমে এমন কথাও বলা হচ্ছে যে হামজার মৃত্যু মার্কিন সামরিক বাহিনীর হাতে নাও হয়ে থাকতে পারে, এর পিছনে থাকতে পারে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। সিআইএ অবশ্য এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেনি।
শনিবার সংবাদ সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে হামজার মৃত্যুর ঘটনা কয়েকমাস আগের, এবং প্রেসিডেন্টট্রাম্প সে সময়ে নাম না করে এক মার্কিন আধিকারিককে উদ্ধৃত করে এই সাফল্যের কথা জানিয়েছিলেন। সংবাদ সংস্থা এপি এক মার্কিন আধিকারিককে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, হামজার মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে গত দেড় বছরের মধ্যে।
হোয়াইট হাইস কেন ৯-১১র আঠারতম বার্ষিকীর তিন দিন পর এ ঘটনার কথা ঘোষণা করল, তা স্পষ্ট নয়। ৯-১১র বিমান হামলায় নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ও পেনসিলভানিয়ায় ৩০০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
হামজা কেন গুরুত্বপূর্ণ
সম্প্রতি ইসলামিক স্টেট সহ অন্য জেহাদি গোষ্ঠীর উত্থানে চাপা পড়ে যাচ্ছিল আল কায়েদা। হামজা যে তার বাবার প্রতিষ্ঠিত জঙ্গি নেটওয়ার্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে চাইছিল- সে কথা প্রায় সর্বজনবিদিত।
আরও পড়ুন, ভারত-পাকিস্তান যখন রাষ্ট্র সংঘে মুখোমুখি
গত জুলাইয়ে নিউ আমেরিকা ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ডিরেক্টর পিটার বার্গেন গার্ডিয়ান পত্রিকায় একটি সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি বলেন, আল কায়েদা স্পষ্টতই হামজাকে উত্তরাধিকারী হিসেবে তৈরি করছিল। আল জাওয়াহিরি খুব একটা কার্ষকরী নেতা নয়। ওর তত ক্যারিশমা নেই। ফলে আল কায়েদা হামজাকে সামনে আনতে চাইছিল।
হোয়াইট হাউস বলছে, হামজার হত্যাকাণ্ড আল কায়েদার গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বাদায়ী ক্ষমতাহ্রাস করল এবং তার পিতৃনামের সঙ্গে যুক্ত থাকার চিহ্নকেও নাশ করল।
কিশোর বয়স থেকেই আল কায়েদার ভিডিওয় হামজাকে দেখা যেত। মনে করা হয়, ৯-১১ হামলার পর তাকে তৈরি করার দায়িত্ব নিয়েছিল আল জাওয়াহিরির সহকারী আবু আল-খয়ের-আল-মাসরি। সালাফিপন্থী জিহাদি আল নুসরা ফ্রন্ট, যারা সিরিয়ার আল কায়েদা বলে পরিচিত, তাদের হয়ে সিরিয়ায় লড়াই করতে গিয়ে মারা যায় আল-মাসরি।
Read the Full Story in English