প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার-উল-হক কাকারের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ৯০ দিনের মধ্যে সেদেশে একটি সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, পাকিস্তানে নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ এবং সেদেশে দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভোটপ্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়েছে।
ভোটের তারিখ নির্ধারণ
দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির নির্বাচন কমিশন ভোটের জন্য ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিকে তারিখ হিসেবে নির্ধারণ করেছে। কিন্তু, এই সময়সীমা পূরণের ব্যাপারে অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দুর্নীতি ও অন্যান্য অভিযোগে বেশ কয়েক মাস ধরে কারারুদ্ধ। শুধু তাই নয়, ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতাও বর্তমানে কারাগারের পিছনে। এতে নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
এই পরিস্থিতিতে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মধ্যে পাকিস্তান তীব্র আর্থিক অস্থিরতার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। যা থেকে বের করে আনার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও সাংবিধান অনুযায়ী, এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একমাত্র কাজ হল সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন আয়োজন করা। কিন্তু, সেসব বাদ দিয়ে এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী কাকার বলছেন, 'আমরা অর্থনীতি, বেসরকারিকরণ এবং পরিবহণ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি।'
ইমরানের অভিযোগ
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মে মাসে গণবিক্ষোভের সময় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে নিশানা করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে, তাঁর দল এবং সমর্থকদের বিরুদ্ধে কাজ করছে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। সেই কারণেই তাঁর দলের নেতাদের ধরপাকড় চলছে। ইমরানের দাবি, তারপরও তিনিই পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। এই পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর মর্জিমাফিক চলে কাকারের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। নির্বাচনের আরও বিলম্ব হলে, সেই জনপ্রিয়তা আরও কমতে পারে।
আরও পড়ুন- সবজির দামই মাথাব্যথা! বিরাট সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে রিজার্ভ ব্যাংক, কী জানাচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা?
অভিযোগ ও পালটা অভিযোগ
এই প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মালিহা লোধি ডিডব্লিউ-কে বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একমাত্র কাজ হল নির্বাচন তত্ত্বাবধান করা। কিন্তু, এই সরকার তার সাংবিধানিক ভূমিকার বাইরে কাজ করেছে। এই পদক্ষেপ তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বিতর্কিত করে তুলেছে।' এই পরিস্থিতিতে ইসলামাবাদের সাংবাদিক আসমা শিরাজি ডিডব্লিউকে বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগের অন্যান্য সরকারের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনেক আর্থিক সিদ্ধান্তও নিচ্ছে।' ইমরান খানের আন্তর্জাতিক মিডিয়া বিষয়ক উপদেষ্টা জুলফিকার বুখারি লন্ডন থেকে ডিডব্লিউকে বলেছেন, 'নির্বাচনের আগে বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের ওপর কড়াকড়ি, আসলে প্রাক-নির্বাচনী কারচুপিরই সমতুল্য। এই নির্বাচনে মোটেও সুষ্ঠু হবে না।' পালটা, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পাশেই আছে। কার্যত প্রধানমন্ত্রী কাকারকে সমর্থন করে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, কোনও বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না।