পাকিস্তানের নির্বাচনে ইমরান খান ও নওয়াজ শরিফ দুজনেই জয়ের দাবি করেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে হিংসার খবর পাওয়া গেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা রাস্তায় নেমে এসেছে। বরাবরের মতো এবারও নির্বাচনী কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। পাকিস্তানের ৮ ফেব্রুয়ারির (বৃহস্পতিবার) নির্বাচন ইতিমধ্যেই প্রতিবেশী দেশটিকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যেও জেলবন্দি ইমরান খানের অনুগত নির্দলরা নির্বাচনে এগিয়ে থাকার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু, প্রশ্ন হল যে তাঁরা কি আদৌ সরকার গঠন করতে পারবেন?
নওয়াজের পথও সহজ নয়
পাকিস্তানের মিডিয়া চেনাগলিতে একটা পুরোনো কথা হামেশাই শোনা যায়, তা হল- 'পাকিস্তান সেনা কখনও যুদ্ধে জেতেনি। কিন্তু কখনও নির্বাচনে হারেনি।' পাকিস্তানে নির্বাচন একটি সুবিধাজনক শাসনব্যবস্থা স্থাপনের জন্য। কিন্তু, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তাকেই হাতিয়ার করে। এবারের নির্বাচনও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা ছিল না। ইমরান খানকে বাদ দিয়ে পাকিস্তানের সেনা তাদের পুরোনো ঘোড়া নওয়াজ শরিফ এবং তার পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজকে (পিএমএল-এন) সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। একাধিক সাজা দেওয়া হয়েছিল। সেই সব সাজাই ইমরানকে নির্বাচনী দৌড়ের বাইরে রেখেছে। তাঁর সহযোগীরাও নিপীড়নের সম্মুখীন হয়েছেন। ইমরানের দল, পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইমরান-অনুগতরা নির্দল হিসেবে নির্বাচনে লড়তে বাধ্য হয়েছেন। নেতৃত্বহীন, একটি পঙ্গু সংগঠনই প্রচারে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। কার্যত এভাবেই ৮ ফেব্রুয়ারি, নওয়াজ শরিফের জয়ের পরিস্থিতি তৈরির জন্য মঞ্চ বানানো হয়েছিল। পাকিস্তানে এবং বিদেশের বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ আশা করেছিলেন যে, পিটিআই মুছে যাবে। আর, সেনা সমর্থিত পিএমএল-এন জয়ী হবে। তবুও, বৃহস্পতিবার রাতে যখন ফলাফল আসতে শুরু করে, তখন এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে জনগণের মধ্যে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা তাঁর অনুগতদের নির্বাচনী জয়ে সাহায্য করেছে। পিছনে সেনার পূর্ণ সমর্থন থাকা সত্ত্বেও সরকার গঠন করা নওয়াজ শরিফের কাছে কোনও কেক কাটার মত ব্যাপার হবে না।
কারচুপি ও নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ
পিটিআইয়ের আশ্চর্যজনক পারফরম্যান্স সামনে আসতেই, মাঠে নেমে পড়ে পাকিস্তনের সেনা। অবাঞ্ছিত ফলাফল এড়াতে সেনাকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে বলেও অভিযোগ। পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় ইন্টারনেট এবং মোবাইল পরিষেবাগুলো স্তব্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ, পাকিস্তানি সোশ্যাল মিডিয়াগুলো এইসব কারচুপি দেখাতে শুরু করেছিল। এনিয়ে ভিডিও প্রকাশ করে উত্তেজনা ছড়াচ্ছিল। পিটিআই-সমর্থিত নির্দলদের ব্যাপক লিড থাকলেও আচমকা তাঁরা হাজার হাজার ভোট হারান। আর, পিএমএল-এনের প্রার্থীরা লিড নেন। এরপরই পথে নামেন মানুষজন। নাগরিক এবং প্রশাসনের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। অনেকেই তাঁদের ভোট চুরি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন।
নির্বাচনী প্রক্রিয়া ক্রমশ প্রহসনমূলক হয়ে ওঠে। যা নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক এবং অন্যান্য দেশ প্রতিক্রিয়া জানায়। এমনকি পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়। আমেরিকার তরফে বিবৃতিতে বলা হয়, 'আমরা নির্বাচনী হিংসা, গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলা-সহ মানবাধিকার হরণ এবং মৌলিক স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ, ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ পরিষেবার ওপর বিধিনিষেধের নিন্দা জানাই। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়েও উদ্বিগ্ন। এনিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করা উচিত।' শনিবার ডনের সম্পাদকীয়তে বলা হয়, 'বেসামরিক ব্যাপারে প্রকাশ্যে এবং ক্রমাগত হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে অনেক ক্ষোভ রয়েছে। রাষ্ট্রকে সেটা বুঝতে হবে।'E