হুরিয়ত কনফারেন্সের আজীবন সভাপতি পদ থেকে সৈয়দ আলি শাহ গিলানি পদত্যাহ করার পর পাকিস্তানে মেডিক্যাল আসন বিক্রির অভিযোগ সামনে এসেছে। হুরিয়ত কনফারেন্স থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার চিঠিতে গিলানি মুজফফরাবাদ চ্যাপ্টারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্রোহ ও আর্থিক বেনিয়মের অভিযোগ করেছেন। গিলানি তাঁর পদত্যাগের চিঠিতে লিখেথেন, কিছুদিন ধরে, বিশেষ করে গত দু বছর ধরে অল পার্টি হুরিয়ত কনফারেন্সের এজেকে চ্যাপটারের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছিল। সম্প্রতি এক তদন্তরে পর কিছু সদস্যকে বিতাড়ন করা হয়েছেস এবং আরও কিছুজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে... যাতে স্বচ্ছতা আনা যায়, আপনার প্রতিনিধিরা আহ্বায়কের সঙ্গে অসহযোগিতা শুরু করে। হুরিয়তের সূত্র বলছে এই তদন্ত চলছিল পাকিস্তানে মেডিক্যাল সিট বিক্রি করার অভিযোগ ঘিরে।
কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীদের পাকিস্তান কি দিয়ে থাকে?
গত দু দশক ধরে জম্মু কাশ্মীরের ছাত্রছাত্রীদের সমস্ত পেশাদার কোর্সের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে পাকিস্তানে, বিশেষ করে মেডিক্যাল ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। ছাত্রছাত্রীরা উচ্চশিক্ষাতেও ভর্তি হতে পারেন। জম্মু কাশ্মীরের ছাত্রছাত্রীদের মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, ১) যাঁরা পাকিস্তানের শিক্ষা মন্ত্রকের মাধ্যমে বিদেশি ছাত্রদের জন্য ধার্য আসনের আবেদন করেন, এবং ২) স্কলারশিপ প্রোগ্রামের জন্য যাঁরা আবেদন করেন।
বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ আসনে যাঁরা আবেদন করেন, তাঁদের যে কোনও বিদেশি ছাত্রদের ধার্য অর্থ দিতে হয়। কিন্তু স্কলারশিপের জন্য যাঁরা আবেদন করেন, তাঁদের ১০০ শতাংশ স্কলারশিপ ও নিখরচায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়। যাঁদের বাবা-মা বা নিকটাত্মীয় কাশ্মীরে সেনাবাহিনির হাতে মারা গিয়েছেন বা ভারতীয় বাহিনীর হাতে নিপীড়িত হয়েছেন, তাঁদের এই স্কলারশিপের জন্য অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
প্রতি বছর পাকিস্তানে প্রায় ৫০ জন ছাত্রছাত্রী পাকিস্তানে এমবিবিএস পড়তে যান, প্রায় সমসংখ্যক ছাত্রছাত্রী যান অন্যান্য বিষয়ে পড়াশোনা করতে। এঁদের পাকিস্তানে বিভিন্ন কলেজে পাঠানো হয়।
এ বছর পাকিস্তান সরকার কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীদের জন্য ১৬০০ স্কলারশিপের ঘোষণা করে। পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্ট্যান্ডিং কমিটি ফর ফেডারেল এডুকেশন অ্যান্ড প্রফেসনাল ট্রেনিংয়ের বৈঠকে এ কথা প্রকাশিত হয়। তবে অতিমারী ও আন্তর্জাতিক উড়ান নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে এ বছর কোনও ছাত্রছাত্রী পাকিস্তান যেতে পারেননি।
ছাত্রছাত্রীদের যোগ্যতা কে নির্ধারণ করে?
বিভিন্ন বিষয়ে ভর্তির জন্য কাট অফ পার্সেন্টেজের ব্যবস্থা থাকলেও, ছাত্রছাত্রীদের জন্য নামের সুপারিশ আসে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের কাছ থেকে। কয়েক বছর ধরেই হুরিয়তের দুই বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর নেতারাই পাকিস্তানের কোর্সে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির সুপারিশপত্র লিখে দিচ্ছেন। তবে দ বছর আগে গিলানি নেতৃত্বাধীন হুরিয়ত দুর্নীতির অভিযোগের ভিত্তিতে এ ধরনের সুপারিশপত্র গ্রহণ বন্ধ করে দেয়।
বিতর্ক কী নিয়ে?
কয়েক বছর ধরেই অভিযোগ উঠছে, বিশেষ করে পাকিস্তানের কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সুপারিশপত্র লিখে দেওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে অর্থ দাবি করছেন এবং পাক সরকারের উদ্দেশ্য খর্বিত হচ্ছে। এমনও অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন পুলিশ অফিসারও বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের কাছ থেকে সুপারিশপত্র লিখিয়ে
২০১৯ সালে আরেকট বিতর্ক সামনে আসে যখন ন্যাশনাল বোর্ড অফ একজামিনেশন একজন মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েটের স্ক্রিনিং টেস্ট নিতে অস্বীকার করে, য়া বিদেশ থেকে মেডিক্যাল ডিগ্রি নিয়ে আসা যে কোনও ভারতীয়ের পক্ষে বাধ্যতামূলক। ওই ছাত্র পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মিরপুরে চিকিৎসাবিদ্যা পাঠ করেছিলেন, যা অবিচ্ছিন্ন কাশ্মীরের অংশ বলে ভারতের দাবি। ওই ছাত্র জম্মু কাশ্মীর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। আদালত বিদেশমন্ত্রককে ওই ছাত্রের মেডিক্যাল ডিগ্রিকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বিবেচনা করতে বলে। আদালত বলে, "এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই য়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীর, যেখানে ওই মেডিক্যাল কলেজ অবস্থিত তা ভারতের অংশ এবং নিয়ন্ত্রণরেখার অপর পারে অবস্থিত এবং সেখানকার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ইসলামিক রিপাবলিক অফ পাকিস্তানের হাতে। যদি এটাই গৃহীত অবস্থান হয়, তাহলে সেখানকার কোনও মেডিক্যাল প্রতিষ্ঠান ভারতের মেডিক্যাল কাউন্সিলের স্বীকৃতি চাইবে এমনটা প্রত্যাশা করা যায় না।"
কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীরা পাকিস্তানে পেশাদারি শিক্ষা নিতে যাওয়ায় আগ্রহী কেন?
কাশ্মীর ছাত্রছাত্রীদের বাবা-মা-রা চান তাঁদের সন্তানরা, বিশষ করে কন্যাসন্তানরা চিকিৎসাবিদ্যাকে কেরিয়ার হিসেবে বেছে নিক। কাশ্মীরে পেশাদারি শিক্ষার কলেজ কম থাকায়, ছাত্রছাত্রীরা চিকিৎসাবিদ্যা পড়তে বিদেশে যান- প্রথমে তাঁরা যেতেন রাশিয়ায়, পরে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে। পাকিস্তানে এই কোর্স অপেক্ষাকৃত ভাল ও শস্তা, ফলে দেশের বিভিন্ন অংশে কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীরা হামলার মুখে পড়ার পর তাঁদের পাকিস্তান যাওয়ার চাহিদা বেড়েছে।