তারিখটা ছিল ১৪ অক্টোবর, ২০১৫। ওই দিন এবং তার পরে বেশ কয়েক দিন ধরে, পাঞ্জাবের বিক্ষুব্ধ বাসিন্দারা রাস্তায় পথে নেমেছিল। গোটা পঞ্জাবের রাস্তা- গ্রামীণ সড়ক থেকে হাইওয়ে পর্যন্ত, সর্বত্র বিক্ষোভ চলেছিল। শ্রী গুরু গ্রন্থ সাহিবের অবমাননা এবং ফরিদকোটের বরগাড়ি এবং বেহবল কালান এলাকায় পুলিশের গুলিতে দুই ব্যক্তি হত্যার প্রতিবাদে অবরোধ চলেছিল। পঞ্জাববাসী সেদিন প্রকাশ সিং বাদলের নেতৃত্বাধীন শিরোমণি অকালি দল ও বিজেপি জোট সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিল। সাম্প্রতিক অতীতে ওই রকম বিক্ষোভ পঞ্জাবে আর হয়নি। কারণ, ১৪ অক্টোবর এবং পরের ওই দিনগুলোয় বিক্ষুব্ধ শিখ যুবকরা রাস্তায় প্রকাশ্যে তলোয়ার নিয়ে ঘোরাফেরা করেছিল। স্লোগান তুলেছিল, 'রাজ করেগা খালসা, সন্ত ভিন্দ্রানওয়ালে কি জিত।' ঠিক যেমনটা শোনা যেত, স্বর্ণমন্দিরে সংঘর্ষের আগের পর্যায়ে।
কিন্তু সেই সময়েও, পঞ্জাব একটি জিনিস হারায়নি, তা হল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সামাজিক কাঠামো। কারণ বিক্ষোভের সময় শিখদের নেতৃত্বে, তাঁদের হিন্দু ও মুসলিম বন্ধুরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, ধর্নায় বসে ন্যায়বিচারের দাবিতে স্লোগান তুলেছিল। যাঁরা শিখ গুরুদের অসম্মান করেছে, তাঁদের জন্য শাস্তি দাবি করেছিল। সেই সময় হিন্দু-মুসলিম বিক্ষোভকারীরাও স্লোগান তুলেছিল, 'গুরু নানক সকলের। শুধু শিখদের নয়। তিনি আমাদেরও গুরু। আমরা সকলেই প্রথমে পঞ্জাবি।' হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের বিক্ষোভকারীরা বলত, প্রতিবাদের জায়গায় ২৪ ঘণ্টা লঙ্গর চলবে। সব গ্রামে বিক্ষোভ চলবে। স্লোগান উঠবে, ' জো বোলে সো নিহাল, সত শ্রী অকাল।'
আরও পড়ুন- নার্সের ঝুলন্ত দেহ, ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে ধৃত হাসপাতাল মালিক
কিন্তু, সেই একতা শুক্রবার ছিল উধাও। পাতিয়ালায় শিবসেনার গোষ্ঠী এবং খালিস্তানপন্থীদের সংঘাতে এক অন্য পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। সেই পরিবেশ রেষারেষি এবং বিদ্বেষের। তার বাইরে কিন্তু, পঞ্জাবের হিন্দু ও শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে এক অটুট এবং গভীর বন্ধন রয়েছে। এই বন্ধন বহুকাল ধরেই টিকে আছে। শিখ ধর্মের শৈশবকালে গুরু নানক উপমহাদেশ ভ্রমণ করছিলেন। সেটা পঞ্চদশ এবং ষোড়শ শতাব্দীতে। যার কয়েক শতাব্দী পরে, ভারত ও পাকিস্তান দু'টি ভিন্ন দেশ তৈরি হয়েছে। তার পরও নানকের অনুসারীরা, হিন্দু বা শিখ নির্বিশেষে, তাঁর আদর্শ অনুসরণ করেছে। নিজেদের ‘নানকপন্থী’ বা ‘গুরু নানক নাম লেওয়াস’ বলে দাবি করেছে।
এই প্রসঙ্গে পাতিয়ালা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পরমবীর সিং জানাচ্ছেন, 'হিন্দু এবং শিখ সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদরেখা ভীষণ অস্পষ্ট। এতটাই অস্পষ্ট যে খালিস্তানের দাবি বেশিরভাগ হিন্দু বা শিখের কাছে গুরুত্ব পায় না। তাঁরা একে অপরের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। হিন্দু ও শিখরা একে অপরের সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী। একসঙ্গে উৎসব উদযাপন করে। একে অপরের উপাসনালয় পরিদর্শন করে। হিন্দুরা সর্বদা গুরু নানককে সম্মান করেছে। পাটিয়ালায় যাঁরা হাঙ্গামা করেছে, তাঁদের মতো কিছু মানুষ অবশ্য উভয় সম্প্রদায়েই আছে। কিন্তু, এই হাঙ্গামাকারীরা হিন্দু এবং শিখ সম্প্রদায়ের মূল স্রোত নয়।'
Read story in English