Advertisment

Explained: কার্গিলের লড়াইয়ে কীভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন মুশারফ?

নওয়াজ শরিফ বারবার দাবি করেছেন, তিনি কার্গিলের হামলার ব্যাপারে কিছুই জানতেন না।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Pervez Musharraf 1

পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে মারা গিয়েছেন। ৭৯ বছর বয়সি মুশারফ গুরুতর রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর শীর্ষকর্তা জেনারেল মুশারফ ১৯৯৯ সালে রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। আর, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করেন। তিনি পাকিস্তানের ১০ম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। একদশক পাকিস্তান শাসনের পর ২০০৮ সালে ক্ষমতাসীন জোটের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে তিনি পদত্যাগ করেন।

Advertisment

এরপরে মুশারফ স্বআরোপিত নির্বাসনে লন্ডনে চলে যান। পরে দুবাইয়ে থাকতেন। প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের কার্যকাল বিভিন্ন বিতর্ক এবং ভুল পদক্ষেপের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়া থেকে ২০০৭ সালে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে হত্যার অভিযোগে মুখোমুখি হওয়া পর্যন্ত, মুশারফ একটি গভীর বিতর্কিত উত্তরাধিকার রেখে গেলেন।

ভারতের প্রেক্ষাপটে, ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধে তাঁর ভূমিকার জন্য মুশারফকে সবচেয়ে বেশি স্মরণ করা যেতে পারে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রধান হিসাবে মুশারফ ভারতে পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীদের পাঠিয়ে হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন এবং তা সম্পাদন করেছিলেন। যাইহোক, এটি তাঁর জন্য এক বিপর্যয়কর সামরিক ব্যর্থতায় পরিণত হয়। কারণ, এই যুদ্ধে ভারত পাকিস্তানিদের পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য করেছিল। তিন মাসব্যাপী যুদ্ধের পরে তাদের পরাজিত করেছিল।

কার্গিল যুদ্ধ কী?
১৯৯৯ সালের মে থেকে জুলাই, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধে ভারতের কাশ্মীরে কার্গিল জেলা এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর অন্যান্য অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছিল। পাকিস্তানের বাহিনী এবং অনুপ্রবেশকারীরা নিয়ন্ত্রণরেখার ভারতীয় অংশে পাহাড়ি এলাকা দখল করার পর যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। সূত্রের খবর, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল, 'তুষারময় শীতের কারণে ভারতীয় সেনাবাহিনীর খালি করা এলওসিজুড়ে উচ্চ এলাকায় থাকা যতগুলো সম্ভব পোস্ট দখল করা।' তারা কার্গিলের জমির বদলে ভারতের দখলে থাকা সিয়াচেন নিয়ে দর কষাকষি করতে চাইছিল। সেনা মনে করছিল, এই সংঘর্ষ কাশ্মীরের বিরোধকে আন্তর্জাতিকস্তরে নিয়ে যাবে। তাতে কাশ্মীর সমস্যার একধরনের সমাধান হয়তো হবে। কিন্তু, তা পাকিস্তানের পক্ষে যাবে।

কার্গিল যুদ্ধে মুশারফের ভূমিকা কী ছিল?
সেনাপ্রধান জেনারেল মুশারফ ছাড়াও, কার্গিল যুদ্ধের পরিকল্পনাটি পাকিস্তান সেনার আরও তিন জন জেনারেল করেছিলেন। তাঁরা হলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ খান, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহমুদ আহমেদ এবং মেজর জেনারেল জাভেদ হাসান। তাঁরা একসঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে 'গ্যাং অফ ফোর' নামে কুখ্যাত ছিলেন। যাই হোক, 'অপারেশন বিজয়' নামে যৌথ অভিযানে ভারতীয় বিমান বাহিনী এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানিদের পরাজিত করার পর তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ব্যর্থ হয়।

সংঘর্ষের ফলে ভারত-পাক সম্পর্কের অবনতি ঘটে। প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী এবং প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে 'লাহোর চুক্তি' নামে একটি যুগান্তকারী দ্বিপাক্ষিক শান্তি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন। তার মাত্র কয়েক মাস পরে ভারত সরকার পাকিস্তানের থেকে কার্গিল যুদ্ধের বিশ্বাসঘাতকতা পেয়েছিল। ২০১৮ সালের এক সাক্ষাত্কারে নওয়াজ শরিফ জানিয়েছিলেন যে বাজপেয়ী তাঁকে বলেছিলেন, 'কারগিলে দুঃসাহসিকতার সঙ্গে তাঁর পিঠে ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। কারণ এটি লাহোর ঘোষণার পরেই হয়েছিল।'

আরও পড়ুন- পাকিস্তানের সামরিক শাসক থেকে হত্যা মামলায় পলাতক, কেমন ছিলেন পারভেজ মুশারফ?

পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ অবশ্য বরাবরই বলে এসেছেন যে পারভেজ মুশারফ তাঁকে কার্গিল যুদ্ধের পরিকল্পনা সম্পর্কে অন্ধকারে রেখেছেন। যদিও সামরিক বিশেষজ্ঞরা তা মানতে নারাজা। তাঁরা মনে করেন যে শরিফকে তিনটি পৃথক বৈঠকে কার্গিলের অপারেশন সম্পর্কে জানানো হয়েছিল।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের জন্য তাঁর লেখায় প্রতিরক্ষা ও বিদেশ নীতি বিশ্লেষক আজাদ সিং রাঠোর বলেছেন, 'মনে হয়, পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী LOC-তে দুই সেনাবাহিনীর আপেক্ষিক শক্তি সম্পর্কে জানতেন। আসলে শরিফ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, তাঁর লোকেরা কার্গিল এবং পরে সিয়াচেন পাবে। কিন্তু, কার্গিল অপারেশন ১৯৭১ সালের যুদ্ধের পরে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছিল।'

Read full story in English

Atal Bihari Vajpayee Kargil Vijay Diwas Pervez Musharraf
Advertisment