শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) তৈল সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে ১ এপ্রিল থেকে জ্বালানির খুচরো দাম নিশ্চিতভাবে বাড়তে চলেছে। তবে সংস্থার চেয়ারম্যান সঞ্জীব সিং সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, "ব্যাপক দামবৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা গ্রাহকদের উপর বোঝা চাপাব না।"
গাড়ির জ্বালানির দাম বাড়ছে কেন
১ এপ্রিল থেকে সারা দেশে নিষ্কাশন নিয়মে বিএস ৬ পদ্ধতি কার্যকর হবে। বর্তমানে লাগু বিএস ৪ ও বি এস ৩ বিধির থেকে এটি উন্নত পদ্ধতি।
ভারত সরকার মোটরচালিত যান সহ বিভিন্ন ইঞ্জিন থেকে যে বায়ু দূষণ হয়, তা নিয়ন্ত্রণের জন্য ভারত সরকার স্থিরীকৃত বিধিই হল বিএস নিষ্কাশন মান। ভারত এ ব্যাপারে ইউরোপিয় বিধি মেনে চলে, তবে তার মধ্যে সময়ের ফারাক থাকে।
বিএস বিধি যত কঠোর হবে. ততই গাড়ির টেলপাইপ থেকে নিষ্কাশনের মাধ্যমে দূষণের ক্ষেত্রে সহনশীলতা কমবে। অর্থাৎ, ভারতে বিএস মান যত উপরে উঠবে, গাড়ি তত পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত হয়ে উঠবে।
টেলপাইপ থেকে নিষ্কাশনের পরিমাণ কমাতে যেমন ভাল ইঞ্জিন প্রয়োজন, তেমনই একই সঙ্গে প্রয়োজন পরিচ্ছন্ন জ্বালানিও।
বিএস-৬-এর সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ জ্বালানির জন্য তৈল শোধনাগারগুলি ব্যাপক পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে।
আইওসি চেয়ারম্যানের বক্তব্য অনুসারে, ওই সংস্থা খরচ করেছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। এ সপ্তাহেই বিপিসিএল জানিয়েছে, তাদের খরচের পরিমাণ ৭০০০ কোটি টাকা। ওএনজিসি পরিচালিত এইচপিসিএল এখনও পর্যন্ত তাদের খরচের পরিমাণ জানায়নি, যদিও তারা বলেছে নির্দিষ্ট তারিখ থেকে তারা কেবলমাত্র বিএস ৬ জ্বালানিই বিক্রি করবে।
তেল কোম্পানিগুলি যে অর্থ খরচ করেছে তার জন্য গ্রাহককে পাম্পে অতিরিক্ত দাম দিতে হবে। তাঁরা কম দূষিত জ্বালানি পাবেন, যার জেরে বায়ুও অপেক্ষাকৃত দূষণমুক্ত হবে বলে আশা করা যায়।
বিএস ৬ জ্বালানি ও বিএস ৪ জ্বালানি কীভাবে আলাদা?
মূল তফাৎ জ্বালানির মধ্যে অবস্থিত সালফারে। সালফার যত কম হবে, জ্বালানি তত কম পরিষ্কার হবে। ফলে বিএস ৬ ডিজেল ও পেট্রোল কম সালফার যুক্ত।
বিএস ৬ জ্বালানিতে সালফারের পরিমাণ থাকবে ৮০ শতাংশ কম- ৫০ পিপিএম থেকে তা কমে হবে ১০ পিপিএম। ডিজেল গাড়িতে নিষ্কাশনের পরিমাণ ৭০ শতাংশ ও পেট্রোল ইঞ্জিনযুক্ত গাড়িতে ২৫ শতাংশ নিষ্কাশন কমবে।
নয়া জ্বালানিতে পরিবর্তন কী ভাবে হবে?
কম দূষণের জ্বালানি একক ভাবে বায়ুদূষণে নাটকীয় পরিবর্তন আনতে পারবে না। পুরো সুবিধা পাবার জন্য উঁচু মানের জ্বালানির সঙ্গে চাই বিএস ৬ গাড়িও।
গাড়ি নির্মাণকারীরা বিএস ৬ গাড়ি ১ এপ্রিল থেকে বিক্রি করবেন। যে সমস্ত বিএস ৪ গাড়ি রাস্তায় রয়েছে, সেগুলি রেজিস্ট্রেশন বলবৎ থাকাকালীন রাস্তায় থাকতে পারবে।
এটা একটু উদ্বেগের বিষয়, কারণ বিএস চার ইঞ্জিনযুক্ত গাড়িতে বিএস ৬ জ্বালানি, বা বিএস ৬ গাড়িতে বিএস ৪ জ্বালানি দূষণের পরিমাণ তেমন কমাবে না, দীর্ঘ মেয়াদে গাড়ির ইঞ্জিনেরও ক্ষতি করতে পারে।
ভারতে নিষ্কাশন সংক্রান্ত নিয়মগ্রহণের ইতিহাস কী?
নিষ্কাশন সম্পর্কিত নিয়ম প্রথম বলবৎ হয় ১৯৯১ সালে। তা কঠোর করা হয় ১৯৯৬ সালে, যখন প্রায় সমস্ত গাড়ি প্রস্তুতাকারী সংস্থাকে প্রযুক্তির উন্নতি ঘটাতে হয়েছিল নিষ্কাশনের পরিমাণ কমাবার জন্য।
পরিবেশের বিষয় মাথায় রেখে জ্বালানি সম্পর্কিত নিয়মাবলী স্থির হয়েছিল ১৯৯৬ সালের এপ্রিলের গোড়ায়, যা লাগু করা স্থির হয় ২০০০ সালে ও বিআইএস ২০০০ মানকে গৃহীত হয়েছিল।
১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর, কেন্দ্র ভারত স্টেজ ১ (বিআইএস ২০০০) এবং ভারত স্টেজ ২ নিয়ম লাগু করে, যা মূলত ইউরো ১ ও ইউরো ২-এর সমতুল। বিএস ২ বিধি ছিল এনসিআর ও অন্য মেট্রো শহরগুলির জন্য, বাকি ভারতের জন্য বিএস ১।
২০০৩ সালের অটো জ্বালানি নীতির সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ১৩টি বড় শহরে বিএস ৩ ও বাকি দেশে বিএস ২ বিধি চালু হয়। এপ্রিল ২০১০ থেকে ১৩টি বড় শহরে বিএস ৪ ও বাকি দেশে বিএস ৩ নীতি চালি হয়।
এই নীতি অনুসারে বিএস ৫ ও বিএস ৬ নীতি যথাক্রমে ২০২২ সালের ১ এপ্রিল এবং ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল থেকে বলবৎ হবার কথা ছিল।
কিন্তু ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক একটি খশড়া নোটিফিকেশন জারি করে সমস্ত নতুন চার চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে বিএস ৫ বিধি ২০১৯ এর ১ এপ্রিলে এগিয়ে আনে এবং বাকি গাড়ির ক্ষেত্রে ওই বিধি লাগুর তারিখ ঠিক করে ২০২০ সালের ১ এপ্রিল। বিএস ৬ গাড়ির ক্ষেত্রে বিধি লাগুর তারিখ স্থির হয় ১ এপ্রিল ২০২১ ও ১ এপ্রিল ২০২২।
এর অল্প কয়েকদিন পরেই সড়ক পরিবহণমন্ত্রী নিতিন গড়করি ঘোষণা করেন, সরকার বিএস ৬ বিধি ২০২০ সালের ১ এপ্রিলে এগিয়ে এনেছে এবং বিএস ৫ বিধি সম্পূর্ণত বাদ দেওয়া হয়েছে।