বর্বোরোচিত তাণ্ডব চোখ কপালে তুলেছিল পাঞ্জাব পুলিশের। গত মাসে, অমৃতপাল সিং তলোয়ার, লাঠি ও বন্দুক নিয়ে সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে অমৃতসরের আজনালা থানায় চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। পরদিনই আদালতের নির্দেশে অমৃতপাল সিংয়ের সহযোগী লাভপ্রীত সিং ‘তুফান’কে মুক্তি দেওয়া এই সময় অমৃতপালের ‘ঘনিষ্ঠ’ মুক্ত করতে পুলিশের সঙ্গে তার সংঘর্ষও হয়।
এই পুরো বিষয়টি কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে হতবাক করেছে এবং তখন থেকেই ‘ওয়ারিস পাঞ্জাব দে’ সংস্থার প্রধান অমৃতপাল সিং তদন্তকারী সংস্থার র্যাডারে রয়েছেন। অমৃতপাল সিং খোলাখুলিভাবে খালিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী ধারণাকে সমর্থন করার কথা বলেছেন।
অমৃতপাল সিং অমৃতসর জেলার জল্লুপুর খেদা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০১২ সালে কাজের জন্য দুবাই গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকে সম্প্রতি ভারতে ফিরে আসেন। এখন তিনি খালিস্তানি সমর্থক দীপ সিধুর সংগঠন ‘ওয়ারিস পাঞ্জাব দে’-এর প্রধান। সম্প্রতিক পথ দুর্ঘটনায় মারা যান দীপ সিধু। কৃষক আন্দোলনের সময় লাল কেল্লার হিংসার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন তিনি। অমৃতপাল সিং, একজন স্বঘোষিত খালিস্তানি সমর্থক, পৃথক শিখ রাষ্ট্রের দাবি করে আসছে এই সংগঠন এবং একাধিক উস্কানিমূলক বক্তব্যও নাম জড়ায় তার।
শনিবার সন্ধ্যায় পাঞ্জাব পুলিশ জানিয়েছে যে 'ওয়ারিস পাঞ্জাব দে' নামের একটি চরমপন্থী সংগঠনের বিরুদ্ধে অপারেশন জারি রেখেছে পাঞ্জাব পুলিশ। তারপর থেকেই খলিস্তানি নেতা অমৃতপাল সিংকে গ্রেফতারি অভিযানে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে পাঞ্জাব পুলিশকে। শেষ পাওয়া খবর অনুসারে অমৃতপাল সিংকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে, এখনও পর্যন্ত ৭৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
রাজ্যে বিশৃঙ্খলা রুখতে পঞ্জাব জুড়ে গতকাল থেকেই ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আজ দুপুর ১২টা অবধি ইন্টারনেট বন্ধ থাকবে বলেই জানা গিয়েছে।শনিবার সন্ধ্যায় গুজব ছড়ায় অমৃতপালকে গ্রেফতার করা হয়েছে, কিন্তু এখন পাঞ্জাব পুলিশ এই ধরনের ঘটনার কথা অস্বীকার করেছে। যদিও সূত্রের খবর এই পুরো অপারেশনের খবর গোপন রাখা হয়।
শুক্রবার থেকেই পাঞ্জাব সরকার তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ শুরু করেছে। শনিবার দুপুর থেকে রাজ্যে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অতিরিক্ত মুখ্য সচিব (স্বরাষ্ট্র) অনুরাগ ভার্মা শুক্রবার নিজেই এই নির্দেশ দিয়েছেন। ৩ রা মার্চ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেন।
বৈঠকের পরপরই, র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের আটটি কোম্পানি সহ প্রায় ২৩৪০ কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর কর্মীকে রাজ্যে পাঠানো হয়। সরকার জানায় হোলির উপলক্ষে রাজ্যে নিরাপত্তা কড়া করতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। আশা করা হয়েছিল যে উৎসবের সময়ই অমৃতপালকে গ্রেফতার করা হতে পারে। এদিকে অমৃতপাল বিবৃতি দিয়েছেন যে তিনি গ্রেফতারিতে ভয় পান না। এর আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি, পাঞ্জাব সরকার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছ থেকে রাজ্যের জন্য আরও ১২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে পাঠায়। G20 বৈঠক শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন সরকার।
গতকাল জলন্ধর-মোগা সড়ক সংলগ্ন মেহতপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করার পরিকল্পনা নেয় পাঞ্জাব পুলিশ। অমৃতপাল ও তার সহযোগীরা দুটি আলাদা আলাদা গাড়িতে ছিলেন। পুলিশ গ্রেফতার করে তার ৬ সহযোগীকে। অমৃতপাল নিজে একটি মার্সিডিজ গাড়িতে ছিলেন। কোনভাবে তিনি পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। সূত্রের খবর “অমৃতসর, জলন্ধর, মোগা এবং ফিরোজপুরের সীমান্ত পুরোপুরি সিল করে দেওয়া হয়”। অমৃতসরের অমৃতপালের গ্রাম জুল্লুপুর খেরাকে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়। অমৃতপালের পক্ষে গ্রামে আসা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে যে রাজ্যজুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা রবিবার (১৯ মার্চ) পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। অমৃতপাল সিংকে গ্রেফতার করতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ, এই খবর জানতে পেরেই তাঁর সমর্থকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও পোস্ট করে শাহকোটে জমায়েত হওয়ার আবেদন জানায়। রাজ্যে বিশৃঙ্খলা রুখতে পঞ্জাব জুড়ে গতকাল থেকেই ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
হরিয়ানা-পাঞ্জাব সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে
খালিস্তানপন্থী নেতা অমৃতপাল সিং এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযানের মধ্যে হরিয়ানা-পাঞ্জাব সীমান্তে নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। আম্বালা পুলিশকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে যাতে কোনভাবেই শান্তি বিঘ্নিত না হয়।
অমৃতপাল সিংয়ের গ্রামে কড়া ব্যবস্থা
অমৃতপাল সিংয়ের গ্রাম জল্লুপুর খাইরায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। পাঞ্জাব পুলিশের পাশাপাশি আধাসামরিক বাহিনীও গ্রামে মোতায়েন করা হয়েছে।
পাঞ্জাবে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে
পাঞ্জাবের জলন্ধরেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। মেহতাবপুরার সাব-ইন্সপেক্টর বলরাজ সিং বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে’। অমৃতপাল সিং-য়ের বিরুদ্ধে তল্লাশি অভিযানের মধ্যে রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি।