'স্বাস্থ্যই সম্পদ', একটি বহু পরিচিত বাক্য। কিন্তু করোনার জেরে এই স্বাস্থ্যই আজ বিপন্নতার মুখে। ২০১৮ সালে নীতি আয়োগের যে প্রস্তাব ছিল স্বাস্থ্য প্রক্রিয়ার কেন্দ্রীকরণ নিয়ে ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবসে প্রস্তাবকেই স্বীকৃতি দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে ভাষণে ন্যাশনাল ডিজিটাল হেলথ মিশনের ঘোষণা করেন তিনি। প্রযুক্তিনির্ভর এই হেলথ মিশনের ফলে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিপ্লব আসবে বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতীয় স্বাস্থ্য পরিচয়পত্র (national health ID) আসলে কী?
জাতীয় স্বাস্থ্য পরিচয়পত্র কোনও ব্যক্তির স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্ত তথ্যের ভান্ডার হবে। জাতীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের (এনএইচএ) মতে, প্রতিটি রোগী, যারা স্বাস্থ্যের রেকর্ড ডিজিটালভাবে পেতে চান হেলথ আইডি তৈরির মাধ্যমে তা উপলব্ধ করতে পারবেন। প্রতিটি স্বাস্থ্য পরিচয়পত্র ন্যাশনাল ডিজিটাল হেলথ মিশনের সঙ্গে যুক্ত হবে। তবে অবশ্যই তা রোগীর অনুমতি নিয়েও বানান হবে। ব্যক্তির বিবরণ এবং মোবাইল নম্বর বা আধার নম্বর ব্যবহার করে হেলথ আইডি তৈরি করা হবে। এই একটি কার্ডেই থাকবে সেই ব্যক্তির স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য।
স্বাস্থ্য পরিচয়পত্রের মূল প্রস্তাবটি কী ছিল?
২০১৭ সালে জাতীয় স্বাস্থ্য নীতির উদ্দেশ্য ছিল দেশে ডিজিটালি একটি স্বাস্থ্য প্রযুক্তি তৈরি করা। এই ইকো-সিস্টেমের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় স্বচ্ছতা যেমন থাকবে সরকারি এবং বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রেও এক অনন্য ভূমিকা গ্রহণ করবে। ২০১৮ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি আয়োগে ভারতের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে এই ডিজিটাল নীতিকেই কাঠামোর 'মেরুদন্ড' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। এও বলা হয় যে এর ফলে চিকিৎসায় ভুলভ্রান্তির পরিমান কমবে এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থারও গুণগত মাণ বৃদ্ধি পাবে। এই প্রস্তাবটি পরে কেন্দ্রীয় সরকার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ইলেক্ট্রনিক্স এবং আইটি মন্ত্রকের সঙ্গে ডিজিটাল হেলথ কেয়ারকে সক্রিয়করণের জন্য একটি কৌশল এবং নথিও প্রস্তুত করে।
আরও পড়ুন, মেয়েদের বিয়ের বয়স ন্যূনতম কত হওয়া উচিত? বদল আসতে চলেছে নিয়মে?
মোদী কী জানালেন?
এই প্রকল্পের আওতায় সব ভারতীয় একটি করে স্বাস্থ্য আইডি কার্ড দেওয়া হবে। সেই কার্ডে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যাবতীয় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এর ফলে যত বার আপনি কোনো ডাক্তারের কাছে বা ফার্মেসিতে যাবেন, আপনার সব তথ্য ওই কার্ডে জমা হয়ে যাবে। আপনি কোন ডাক্তার দেখাচ্ছেন বা কী ওষুধ খাচ্ছেন, যাবতীয় তথ্য ওই কার্ডে জমা থাকবে।” আয়ুষ্মান ভারতের ইমপ্লিমেন্টিং এজেন্সি ন্যাশনাল হেলথ অথরিটি এই প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করেছে। অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট, উভয় মাধ্যমেই এটি পাওয়া যাবে। ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের জন্য ৪৭০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক।
আরও পড়ুন, স্বাধীনতা দিবসে ‘ডিজিটাল ভারত’ তৈরিতে তিনটি বড় ঘোষণা মোদীর
বিশ্বে এ ধরনের কোনও সিস্টেম রয়েছে কি?
হ্যাঁ রয়েছে। ২০০৫ সালে ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস একটি ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ড সিস্টেম চালু করে। ২০১০ সালের মধ্যে সে দেশের সমস্ত রোগীর তথ্য কেন্দ্রীভূত করাই ছিল এর উদ্দেশ্য। বেশ কয়েকটি হাসপাতালের মাধ্যমে এই সিস্টেম চালু করার কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু সমস্যা বাধল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। দেখা গেল এই সব কাজ করতে গিয়ে সে দেশে স্বাস্থ্য কর ছাড়িয়ে গিয়েছিল ১২ বিলিয়ন ডলার। শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়েছিল এই প্রকল্পটি এবং আইটি ক্ষেত্রে সবথেকে ব্যয়বহুল ব্যর্থ প্রকল্প হিসেবে এটিকে বিবেচনা করা হয়।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন