অযোধ্যায় রাম মন্দিরের জমকালো উদ্বোধনের আর একমাসও বাকি নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) অযোধ্যায় নবনির্মিত মহর্ষি বাল্মীকি বিমানবন্দরের উদ্বোধন করেন। এই বিমানবন্দরের নামকরণ করা হয়েছে মহর্ষি (মহান ঋষি) বাল্মীকির নামানুসারে। তিনি রামায়ণের প্রাচীনতম সংস্করণ বা ভগবান রামের গল্পের রচয়িতা হিসেবে স্বীকৃত।
আরও পড়ুন- ভারতের ‘উত্তর-পূর্ব’, জানেন কীভাবে তৈরি হয়েছিল এই অঞ্চল, শুনলে অবাক হবেন!
রামায়ণের আদি কবি
বাল্মীকিকে সংস্কৃতে আদি কবি বা 'প্রথম/মূল কবি' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর কারণ হল, তিনি রামায়ণ রচনা করেছেন। যাকে সংস্কৃত সাহিত্য ঐতিহ্যের প্রথম মহাকাব্য বলে মনে করা হয়। ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপার তাঁর আর্লি ইন্ডিয়া (২০০২)-এ লিখেছেন, 'বাল্মীকি রামায়ণকে প্রথম রচিত কোনও সচেতন সাহিত্য হিসেবে বর্ণনা করা যায়। আদিকাব্যের মত বর্ণনা অন্য কোনও মহাকাব্যে পাওয়া যায়নি।' যাইহোক, বাল্মিকী রামায়ণের সাহিত্য বিশ্লেষণ ইঙ্গিত করে যে তা ঋষি ব্যাস রচিত মহাভারতের তুলনায় প্রাচীন। থাপার লিখেছেন, 'রামায়ণের ভাষা আরও মসৃণ এবং এর ধারণাগুলো পরবর্তী সমাজের সঙ্গে আরও বেশি সম্পর্কিত। যদিও ঐতিহ্যগতভাবে রামায়ণ আগের বলে মনে করা হয়।' রোমিলা থাপারের দাবি, রামায়ণ সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে রচিত হয়েছিল। যদিও রবার্ট গোল্ডম্যানের মতো পণ্ডিতরা রামায়ণকে খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীর সময়কালীন বলে মনে করেন।
বালা এবং উত্তরকাণ্ডে বাল্মীকি নিজেই আবির্ভূত হন
বাল্মীকির রামায়ণ সাতটি-কাণ্ডে বিভক্ত। এর প্রতিটি কাণ্ড ভগবান রামের গল্পের আলাদা অংশ। মহাকাব্যের প্রথম অধ্যায় বালা ও শেষ অধ্যায় উত্তর-কাণ্ডে বাল্মীকি নিজেই উপস্থিত হয়েছেন। বালাকাণ্ড শুরু হয় বাল্মীকি ঋষি নারদকে জিজ্ঞাসা করে যে পৃথিবীতে এখনও একজন ধার্মিক মানুষ অবশিষ্ট আছেন কি না? যার উত্তরে নারদ, 'রাম' নাম উল্লেখ করেছিলেন। বাল্মীকি তখন তাঁর বয়ান শুরু করেন। উত্তরকাণ্ডে, ভগবান রাম তাঁর স্ত্রী সীতাকে নির্বাসিত করার পর, সীতা বাল্মীকির আশ্রমে আশ্রয় পান। সেখানে তিনি যমজ ছেলে লব এবং কুশের জন্ম দেন। যাঁরা পরে তাঁর শিষ্য হন। বালাকাণ্ডে, রামায়ণের গল্পটি লব এবং কুশের কাছে বাল্মীকির একটি বর্ণনা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
আরও পড়ুন- ২০২৪-এ খেলার দুনিয়া, টি২০ থেকে অলিম্পিক, কতটা প্রভাব ফেলবে রাজনীতিতে?
পরবর্তী সংযোজন
ইতিহাসবিদদের একাংশ মনে করেন যে, এই দুটি অধ্যায়ই সম্ভবত মহাকাব্যের পরবর্তী সংযোজন। আরশিয়া সাত্তার তাঁর, 'উত্তরা: দ্য বুক অফ অ্যানসার্স (২০১৭)'-এ লিখেছেন, 'এই প্রথম এবং শেষ অংশগুলোর ভাষা এবং সুরের পরিপ্রেক্ষিতে স্পষ্ট যে তা পরবর্তী ভাষাগত এবং আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে, পরবর্তী ধর্মতাত্ত্বিক সময় থেকে এসেছে। সেই সময় থেকে, যখন বিষ্ণু দেবতা হয়ে উঠেছেন।' তিনি লিখেছেন, 'এখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে রাম হলেন ঈশ্বর। তিনি বিষ্ণুর অবতার। বিষ্ণুকে অন্যান্য দেবতারা মানব রূপ ধারণ করতে এবং রাবণকে হত্যা করতে প্ররোচিত করেছিলেন। রামায়ণের সংস্করণ উপমহাদেশে এবং এর বাইরেও বিভিন্ন ভাষায় প্রদর্শিত হওয়ায় দেবতা হিসেবে রামের গল্পটি পরে বৈষ্ণব ভক্তির একটি অংশ হয়ে ওঠে।'