বৃহস্পতিবার লালকেল্লার প্রাচীর থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সারা ভারতে একযোগে নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েক বছর ধরে 'এক দেশ, এক নির্বাচন'-এর কথা বলছেন। তিনি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর ঘোষণা করেছিলেন যে সমস্ত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এই ব্যাপারে আলোচনা করা হবে। এখন প্রশ্ন হল, 'এক জাতি, এক নির্বাচন' কী? একসঙ্গে নির্বাচন হলে কী লাভ হবে? কেন বিভিন্ন বিরোধী দল 'এক জাতি, এক নির্বাচন'-এর ধারণার বিরোধিতা করছে?
পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি
ভারতজুড়ে লোকসভা এবং সমস্ত বিধানসভায় একযোগে নির্বাচনের দাবি ও বিরোধিতার যথেষ্ট যুক্তি আছে। পক্ষে যুক্তি হল- 'এক দেশ, এক নির্বাচন' নীতি কার্যকর হলে ভোটের খরচ কমবে। নিরাপত্তা নিয়ে কমিশনকেও সমস্যায় পড়তে হবে না। বর্তমানে, বছরের প্রায় সব সময়ই কোথাও না-কোথাও নির্বাচন হয়। রাজনৈতিক দলগুলো অভিযোগ করে যে আদর্শ নির্বাচনী আচরণবিধি পালন করতে গিয়ে জনগণকে তাদের প্রাপ্য প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া যাচ্ছে। সরকারের কল্যাণমূলক নীতি পালন করা যাচ্ছে না। জনগণের জন্য প্রয়োজনীয় নতুন প্রকল্প ঘোষণা করা যাচ্ছে না।
একসঙ্গে নির্বাচন ঠিক কতটা কঠিন!
পালটা যুক্তি দেখানো হয়- শুধুমাত্র একটি মেগা নির্বাচনের মাধ্যমে যাবতীয় নির্বাচনের প্রয়োজন মেটানো খুব কঠিন ব্যাপার। ভারতের মতো বিশাল এবং জটিল দেশে তো প্রায় অসম্ভব! এর মোকাবিলা করার জন্য একটি মহড়া আগে দরকার। কারণ, এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বয়ে নিয়ে যাওয়াও ব্যাপক সমস্যার ব্যাপার। যেমন, এখন যতটা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন এবং ভোটার ভেরিফাইয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল মেশিনের প্রয়োজন পড়ে, একসঙ্গে সব ভোট হলে, তার কমপক্ষে তিনগুণ মেশিনের দরকার পড়বে।
আরও পড়ুন- আদানির সংস্থায় বিদেশি বিনিয়োগের অভিযোগ মিথ্যে নয়! এমনটাই উঠে এল তদন্তে
বঞ্চিত হবে ছোট দলগুলো
এমনটাও ধারণা আছে যে একযোগে নির্বাচন হলে ছোট আঞ্চলিক দলগুলোর তুলনায় সর্বভারতীয় দলগুলো বেশি লাভবান হবে। ঘুরিয়ে বললে, বিজেপির মত দলগুলো বেশি সুবিধা পাবে। যা, অন্যায্য বলে অভিযোগ ছোট দলগুলোর। তাদের প্রশ্ন, কোনও সরকার তার মেয়াদ পূর্ণ করার আগেই যদি সেই সরকারের পতন ঘটে, তখন তাহলে কী হবে? যেমন সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভায় অত্যন্ত অস্থিরতা দেখা গেছে। এই অস্থিরতার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠেছে। পাশাপাশি, অতীতে যেমন দেখা গেছে যে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থা টালমাটাল। যেমন, ১৯৫২ সাল থেকে ১৭টি লোকসভার মধ্যে সাতটি নির্ধারিত সময়ের আগেই ভেঙে দেওয়া হয়েছিল (১৯৭১, ১৯৮০, ১৯৮৪, ১৯৯১, ১৯৯৮, ১৯৯৯ এবং ২০০৪ সালে)। এসব ক্ষেত্রে তো ফের নির্বাচন করতেই হবে। তাহলে, একসঙ্গে নির্বাচন করে লাভটা কী হল? এমনটাই প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিক দলগুলো।