প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর সাম্প্রতিকতম, সংখ্যার হিসেবে টানা ষষ্ঠবারের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। এবারের ভাষণে তিনি সম্পদ সৃষ্টিকারীদের অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।
এদিনের ভাষণে তিনি বলেন, "যারা দেশের জন্য সম্পদ সৃষ্টি করছেন, যাঁরা দেশের সম্পদ সৃষ্টিতে সহায়তা করছেন তাঁরা সবাই দেশেরও সেবা করছেন। সম্পদ সৃষ্টিকারীদের দিকে আমাদের সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকানো উচিত নয়, তাঁদের উদ্দেশ্যকে সন্দেহ করা উচিত নয়।" প্রধানমন্ত্রী বলেন, "দেশে আজ এরকম সম্পদ সৃষ্টিকারীর প্রয়োজন রয়েছে।" এরপর তিনি ব্যাখ্যাও করেন বিষয়টি। তিনি বলেন, দেশবাসীর উচিত সম্পদ সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, "যদি সম্পদ সৃষ্টি না হয়, তা হলে সম্পদ বণ্টনও হবে না।"
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য দুটি কারণে আলাদা করে দেখা দরকার।
আরও পড়ুন, ১৫ অগাস্ট দিনটিতেই কেন পালিত হয় ভারতের স্বাধীনতা দিবস?
প্রথমত তাঁর এবারের অবস্থান প্রথম দফায় তাঁর সম্পদ সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কিত বক্তব্য থেকে পৃথক। প্রথম দফায় মোদীর আকাঙ্ক্ষা ছিল ভূমি ও শ্রমের ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত সংস্কার। উদাহরণ, তিনি বারবার জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সহজ করতে এবং ব্যবসার জন্য সস্তায় জমি দেওয়ার জন্য অর্ডিন্যান্স এনেছেন। রাজ্যসভায় প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা না-থাকার জন্য বারবার পিছু হঠতে হয়েছে তাঁকে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বারবার তাঁকে 'সুট বুট কি সরকার' বলে অভিহিত করেছেন। এর ফলে প্রধানমন্ত্রী মোদীর আর্থিক সংস্কারের লক্ষ্য অনেকটাই ঘা খেয়েছে।
এবার সম্পদ সৃষ্টিকারীদের হয়ে তাঁর ব্যাটিং এবং দেশের মানুষের কাছে বড় ও ছোট ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি বদলের আহ্বান সম্ভবত এ দেশের বেসরকারি উদ্যোগের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতাই সূচিত করে।
দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রীর এই বার্তা এমন একটা সময়ে, যখন ভারতীয় অর্থনীতির বৃদ্ধির গতি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে মাত্র ৬ মাস আগে যে ৭.৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা হয়েছিল, তা কার্যত ৬ শতাংশে গিয়ে ঠেকতে পারে। এর চেয়েও খারাপ ব্যাপার হল, সরকারি খরচ ইতিমধ্যেই প্রসারিত হয়েছে। অর্থনীতিতে মন্দার জেরে সম্পদ সংগ্রহের পরিমাণ বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেকটাই নিচে।
আরও পড়ুন, রাসবিহারী বোস: ইতিহাসে উপেক্ষিত বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামী
বৃদ্ধির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি হল রফতানি, বিশ্ব রফতানি। গোটা দুনিয়ায় বাণিজ্য নিয়ে টেনশন ও ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিশ্ব অর্থনীতির বৃদ্ধিরও হাল একই।
এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভাষণ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে তিনি চান ভারতের ব্যবসা পথনির্দেশক হয়ে উঠুক। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি চান কেন তিনি ব্যবসার পক্ষে থাকছেন সে কথা দেশবাসী বুঝুক, যাতে আগের বারের মত তাঁকে রাজনৈতিক চাপের মুখে না পড়তে হয়।
Read the Full Story in English