প্রধানমন্ত্রীর শপথগ্রহণে বিমস্টেকভুক্ত দেশের নেতাদের আমন্ত্রণ কেন জরুরি

বিমস্টেকের শুরু ১৯৯৭ সালে। শুরুতে এর সদস্য ছিল বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড। পরে এতে যুক্ত হয় মায়ানমার, নেপাল এবং ভূটান।

বিমস্টেকের শুরু ১৯৯৭ সালে। শুরুতে এর সদস্য ছিল বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড। পরে এতে যুক্ত হয় মায়ানমার, নেপাল এবং ভূটান।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Narenda Modi Oath Bimstec

নরেন্দ্র মোদী

৩০ মে নরেন্দ্র মোদীর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। ওই দিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিমস্টেক (বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন)ভুক্ত দেশগুলিকে, কিরগিজ প্রজাতন্ত্র এবং মরিশাসকেও। এই পদক্ষেপের ফলে ভারত এক সতর্ক এবং বড়সড় কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিল বলেই মনে করা হচ্ছে। এর ফলে বঙ্গোপসাগর থেকে মধ্য এশিয়া এবং সারা পৃথিবীর ভারতীয় ডায়াস্পোরার কাছে পৌঁছতে চাইছে ভারত।

Advertisment

আগের মোদী আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সার্ক নেতৃত্বকে এবং পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে। তাঁর আশা ছিল এর ফলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অগ্রসর হবে। এবার সার্ককে বাদ দেওয়ার কারণ দিল্লি চাইছে তাদের সঙ্গে প্রতিবেশীদের সম্পর্কের মধ্যে যাতে পাকিস্তান না ঢুকে পড়ে।

প্রধানমন্ত্রী মোদীর শপথে কারা আমন্ত্রিত, কেন

কিরঘিজ প্রজাতন্ত্রের নেতাদের আমন্ত্রণের মাধ্যমে সাংহাই কর্পোরেশন অর্গানাইজেশন(এসসিও)-র সঙ্গে ভারতের যোগাযোগ স্পষ্ট। এসসিও-র নেতৃত্বে রয়েছেন কিরঘিজ নেতারা এবং এর অন্তর্ভুক্ত হল চিন, রাশিয়া, উজবেকিস্তান, কাজাকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং পাকিস্তান। ২০১৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান এই গোষ্ঠীর সদস্যপদ পায়। তারা এবার কাউন্টার টেররিজম এবং যোগাযাগের মত কৌশলগত লক্ষ্যপূরণের জন্য সদস্যপদের অগ্রগতি চায়।

Advertisment

এবং মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবিন্দ জগনথ, যিনি সারা বিশ্বে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূরণ পদে রয়েছেন, তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এ বছর জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত প্রবাসী ভারতীয় দিবসের অনুষ্ঠানেও। যেহেতু ২০১৪ সাল থেকেই ভারতীয় ডায়াস্পোরা মোদীর কূটনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ফলে জগনথকে আমন্ত্রণ অত্যন্ত স্বাভাবিক বলেই মনে করা হচ্ছে।

তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা রয়েছে বিমস্টেকভুক্ত দেশগুলিকে আমন্ত্রণ জানানোয়। বিমস্টেক-এ ভারত ছাড়া অন্যান্য সদস্য় দেশগুলি হল বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, নেপাল এবং ভূটান।

সার্ক থেকে বিমস্টেক

সার্কের ছাই থেকেই উৎপন্ন হয়েছে বিমস্টেক। ২০১৬ সালের অক্টোবরে উরি হামলার পর ভারত দু দশকের পুরনো কিন্তু উপেক্ষিত এই গোষ্ঠীকে নতুন করে বাঁচিয়ে তুলতে পদক্ষেপ করে ভারত। গোয়ায় ব্রিকস সম্মেলন ছাড়াও বিমস্টেক নেতাদের সঙ্গে আলাদা ভাবে মিলিত হন মোদী।

সে বছর সেপ্টেম্বরে বিমস্টেক দেশগুলি ভারতের ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিতব্য় সার্ক সম্মেলন বয়কটের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানায়।

এর পরেই আঞ্চলিক মঞ্চ হিসেবে বিমস্টেক উঠে আসে, যেখানে পাঁচটি সার্কভুক্ত দেশগুলি মিলিত হয়ে উপ আঞ্চলিক সহযোগিতা বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চালাবে। ভারত দীর্ঘদিন ধরেই মনে করছিল সার্কের যা উপযোগিতা তা পাকিস্তানের কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে।

বিকল্প সন্ধানের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল ২০১৪ সালের সার্ক সম্মেলনের সময়ে যখন মোদী কাঠমাণ্ডুতে বলেছিলেন, সার্কের মধ্যে বা বাইরে থেকে সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। এই বক্তব্য় সার্কের সদস্যভুক্ত দেশগুলি তথা পাকিস্তানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এক বার্তা ছিল।

২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে একটি গবেষণাপত্রে জয়িতা ভট্টাচার্য লিখেছিলেন, যেহেতু সার্ক সম্মেলন বাতিল হয়নি, মুলতুবি হয়েছে মাত্র, ফলে সার্কের পুনরুজ্জীবনের সময় হয়েছে। বিমস্টেকের সাফল্যের অর্থ সার্কের ব্য়র্থতা নয়, বরং তা দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিস সহযোগিতা ক্ষেত্রে নয়া অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।

ব্রিকস-বিমস্টেকের সম্মেলনের দু বছর পর বিমস্টেকের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।

এই এলাকা কেন গুরুত্বপূর্ণ

বঙ্গোপসাগর পৃথিবীর বৃহত্তম উপসাগর। এ উপসাগর অঞ্চলে সাতটি দেশ মিলিয়ে সারা পৃথিবীর বাসিন্দাদের মোট ২২ শতাংশের বাস। এখানকার সম্মিলিত গড় উৎপাদনের পরিমাণ ২.৭ ট্রিলিয়ন।

আর্থিক চ্য়ালেঞ্জ সত্ত্বেও এই সাতটি দেশই জাতীয় বৃদ্ধির হার ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ৩.৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করতে সক্ষম হয়েছেষ প্রতি বছর এই উপসাগর দিয়েই পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ বাণিজ্য সম্পন্ন হয়ে থাকে।

বিমস্টেকের শুরু ১৯৯৭ সালে। শুরুতে এর সদস্য ছিল বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং থাইল্যান্ড। পরে এতে যুক্ত হয় মায়ানমার, নেপাল এবং ভূটান। এখন বিমস্টেকে দক্ষিণ এশিয়ার আরও পাঁচটি এবং এসিয়ানের আরও দুটি দেশকে অন্তরভুক্ত করা হয়েছে যার ফলে দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মধ্যে সেতু তৈরি হয়েছে। মালদ্বীপ, আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সমস্ত বৃহৎ দেশগুলিই এখন বিমস্টেকের অন্তর্ভুক্ত।

প্রসপেক্টস ফর বে অফ বেঙ্গল কমিউনিটি নিয়ে একটি গবেষণাপত্রে ভি সূর্যনারায়ণ ২০০০ সালে লিখেছিলেন ভারতের খুব কম লোকই জানে যে ইন্দিরা পোর্ট থেকে থাইল্যান্ডের ফুকেটের দূরত্ব চেন্নাই বা মাদুরাইয়ের চেয়ে কম।

এই এলাকার সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি হওয়ায় ভারতের এখান থেকে পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক। ২০১৭ সালে বিমস্টেকের ২০ বছর পূর্তিতে মোদী বলেছিলেন বিমস্টেক শুধু দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যেই যোগসূত্র রচনা করেনা, একই সঙ্গে হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরের বাস্তুসংস্থানেরও যোগসাধন করে।

ভারতে বসবাসকারী জনগণের মধ্যে এক চতুর্থাংশই বাস করেন বঙ্গোপসাগর উপকূলে (অন্ধ্র প্রদেশ, ওড়িশা, তামিল নাড়ু এবং পশ্চিমবঙ্গে)। এবং উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলির সাড়ে চার কোটি বাসিন্দা উন্নয়নের সম্ভাবনার সাপেক্ষে বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং থাইল্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধা পাবেন।

কৌশলগত ভাবে বঙ্গোপসাগর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কারণ ভারত মহাসাগরকে ব্যবহার করে চলেছে চিন। দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন পরিকাঠামোর জন্য ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে চিন, সে জন্য বিমস্টেকের সদস্যভুক্ত প্রায় সবকটি দেশেই বিনিয়োগ করেছে তারা। বাদ রাখা হয়েছে ভারত ও ভূটানকে।

ভারত মহাসাগরে ডুবোজাহাজ এবং জাহাজের সংখ্যাবৃদ্ধির মাধ্যমে বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে চিন তাদের গতিবিধি বাড়াচ্ছে। এ অবস্থায় ভারত চাইছে বিমস্টেকভুক্ত দেশগুলির মধ্যে সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে।

Read the Full Story in English

PM Narendra Modi