প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে ২০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন তাতে সরকারের ভাণ্ডারের খুব বেশি ব্যয় হবে না। ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অতিরিক্ত ৮.০৪ লক্ষ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত নগদ হিসেবে দিয়ে দিয়েছে।
এর সঙ্গে গত ২৭ মার্চ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ১.৭ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। বাকি যে ১০.২৬ লক্ষ কোটি টাকা, তার বিস্তারিত বিবরণ এখনও পাওয়া যায়নি।
তিন দিন আগে আর্থিক ঋণের সংশোধিত ক্যালেন্ডারের উল্লেখ করে একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ৯ মে সরকার ২০-২১ সালের বাজেটে উল্লিখিত বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার হিসেব ৭.৮ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ লক্ষ কোটি টাকা করেছে... একভাবে এর ফলে আর্থিক প্যাকেজ দাঁড়াচ্ছে জিডিপি-র ২.১ শতাংশ (৪.২ লক্ষ কোটি টাকা)।
আরও পড়ুন, আরোগ্য সেতু অ্যাপের তথ্য কাদের কাছে যেতে পারে, সংশয় ও উদ্বেগ
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণ ক্যালেন্ডার সংশোধন কোভিড-১৯-এর জন্য প্রয়োজন বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছিল।
অর্থাৎ সরকার এই সিলিং মেনে চললে দরিদ্র, পীড়িত ও পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ৪.২ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করতে পারবে সরকার। কিন্তু যদি ঠিকমত ব্যবহার করা যায়, তাহলে তা অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারবে, বিশেষ করে ভারতীয় অর্থনীতি যখন ৪৭ দিন হারিয়ে ফেলেছে।
সূত্র বলছে নগদ টাকা ট্রান্সফার করার পর অবশিষ্ট অর্থ তখনই খরচ করা হবে যখন তা থেকে সবচেয়ে বেশি লাভ উঠে আসবে। আরেকটি সূত্র বলছে, "যেমন যদি সরকার কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের সংস্থার ১০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি স্বীকার করে নেয়, তাহলে তারা ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দেবে। কিন্তু সমস্যা হল আজকাল ব্যাঙ্ক ঋণ বাড়াতে চায় না। এর ফলে বাজেট বরাদ্দে হয়ত খুব বেশি ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না, তবে অতিমারীর ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সংস্থাগুলির ঋণ পেতে দেরি হবে।"
একইভাবে এমএসএমই প্যাকেজ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী নিতিন গড়করির প্রস্তাব অনুযায়ী যদি ধরে নেওয়া হয় সরকার ব্যাঙ্ক ও আর্থিক সংস্থাগুলিকে এক লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত বিমা ধরনের কোনও নিশ্চয়তা দেয়, তাহলে বাজেট থেকে অনেকটা খরচ হবে না। একদিকে ১ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ মানে বেশ বড়রকমের আর্থিক প্যাকেজ, অন্যদিকে বাজেটে হয়ত খরচ হবে দু হাজার কোটি টাকা।
এ ছাড়া সরকার ব্যাঙ্কগুলির পুনর্পুঁজিকরণ ঘটাতে পারে, যার ফলে তাদের পুঁজির ক্ষমতা বাড়বে। নাম প্রকাশ করতে না চাওয়া এক সরকারি আধিকারিক বলেছেন, "এ ক্ষেত্রে আমাদের বন্ডের সুদটুকুই দিতে হবে, যার অর্থ খুব বেশি খরচ নয়।"
"সরকারের পক্ষে এখন ব্যাপক সহায়তা করা সম্ভব নয়। গোটা ব্যাপারটা অনেকটা রোগীকে আইসিইউ থেকে বের করে এনে রিলিফ দেওয়ার মত। থরচ বাড়ানোর মত আর্থিক সংস্থান এখন নেই", বলছেন ওই আধিকারিক।
আরও পড়ুন, সংক্রমণে এগিয়ে বড় শহরগুলিই
এমনকী ২৭ মার্চের প্রথম আর্থিক প্যাকেজে টাকা ট্রান্সফারের জন্য মোট খরচ আগামী তিন মাসে হবে ৬১৩৮০ কোটি টাকা। মহিলা জনধন যোজনায় ১০০০০ কোটি, বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ৩০০০ কোটি, কৃষকদের জন্য ১৭৩৮০ কোটি এবং নির্মাণ কর্মীদের জন্য ৩১০০০ কোটি টাকা কল্যাণ মূলক ফান্ড থেকে দেওয়া হবে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিবৃতিতে বলা হয়েছে কোভিড-১৯ অতিমারীর জন্য ঋণ ক্যালেন্ডার সংস্কার করা প্রয়োজন ছিল। কৃষকদের জন্য ১৭৩৮০ কোটি টাকার যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তা অতিরিক্ত নয়, ২০-২১ সালের বাজেটেই তার উল্লেখ ছিল। সরকার তার থেকেই প্রথমভাগের বরাদ্দ ২০০০ টাকা করে দিচ্ছে (প্রধানমন্ত্রী-কিসান যোজনায় বছরে ৬০০০ টাকা দেওয়ার কথা)। একইভাবে নির্মাণকর্মীদের জন্য সরকারকে অতিরিক্ত ঋণ নিতে হচ্ছে না।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন