বিদেশমন্ত্রী এস জয়সংকর এ সপ্তাহে পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা আশা করি একদিন আমরা ওখানকার প্রত্যক্ষ আওতায় নিয়ে আসব।
গত মাসে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছিলেন, "পাকিস্তানের সঙ্গে যদি কথা হয়, তা হবে পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে, জম্মু কাশ্মীর নিয়ে নয়।" লোকসভায় অমিত শাহ বলেছিলেন, "আমি যখনই জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের কথা বলি, তখন আমি পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও আকসাই চিনের কথাও বলি।"
আরও পড়ুন, বিজেপির কাশ্মীর যোগ, সৌজন্যে শ্যামাপ্রসাদ
১৯৯৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সংসদে সর্বসম্মত ভাবে যে প্রস্তাব পাশ হয় তাতে বলা ছিল, "জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য বর্তমানে এবং ভবিষ্যতে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ আছে এবং থাকবে" এবং দাবি করা হয়, "পাকিস্তান গায়ের জোরে জম্মু ও কাশ্মীরের যে অংশ নিজেদের দখলে রেখেছে তা তাদের খালি করে দিতে হবে।"
নিয়ন্ত্রণরেখার ওপারে কী আছে?
১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি সংঘর্ষবিরতির পর থেকে পাকিস্তান নিজেদের দখলে রেখেছে ১৩,২৯৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা, যা পাক অধিকৃত কাশ্মীর বলে পরিচিত। এর আগে ১৪ মাস ধরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ চলে, যা শুরু হয়েছিল কাশ্মীরে পাশতুন জনজাতির অনুপ্রবেশ এবং তার পর সেনাবাহিনীর অনুপ্রবেশের জেরে।
২০১৭ সালের জনগণনা অনুসারে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জনসংখ্যা ৪০ লক্ষ। এটি ১০ জেলায় বিভক্ত। এর মধ্যে কাশ্মীর সীমান্তবর্তী জেলাগুলি হল- নীলম, মুজফফরাবাদ, হাট্টিয়ান বালা, বাঘ, এবং হাভেলি। রাওয়ালকোট, কোটলি, মীরপুর, ও ভীমবের জেলা জম্মু লাগোয়া। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাজধানী হল মুজফফরাবাদ, যা ঝিলম নদীও তার শাখানদী নীলম (ভারতীয়দের কাছে কৃষ্ণগঙ্গা) উপত্যকায়, শ্রীনগরের সামান্য উত্তরে অবস্থিত।
১৯৬৩ সালের একটি চুক্তি অনুসারে পাকিস্তান কারাকোরামের ওপারে, শাক্সগাম এলাকায় জম্মু কাশ্মীরের ৫০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা চিনকে দিয়ে দেয়।
গিলগিট বাল্টিস্তান কী?
পাক অধিকৃত কাশ্মীরের উত্তরে এবং পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনওয়ালা প্রদেশের পূর্বদিকে অবস্থিত এ এক ছবির মত পার্বত্য এলাকা। ১৮৪৬ সালে শিখ সেনাদের পরাজিত করার পর জম্মু কাশ্মীরের সঙ্গে এই এলাকাও ব্রিটিশরা বিক্রি করে দেয় জম্মুর ডোগরা শাসক গুলাব সিংয়ের কাছে। কিন্তু মহারাজা গুলাব সিংয়ের কাছ থেকে লিজ নিয়ে এ এলাকার শাসনক্ষমতা নিজেদের হাতেই রেখেছিল তারা।
আরও পড়ুন, জম্মু কাশ্মীর বিশেষ মর্যাদা হারিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত: একটি টাইমলাইন
১৯৩৫ সালে সে লিজ নবীকরণ করা হয়। ১৯৪৭ সালে কর্নেল পদমর্যাদার এক ব্রিটিশ সেনা অফিসার মহারাজা হরি সিংয়ের গভর্নরকে বন্দি করেন এবং ওই এলাকা পাকিস্তানের হাতে তুলে দেন।
গিলগিট বাল্টিস্তান ৭২, ৭৮১ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের সাড়ে পাঁচগুণ বড়। কিন্তু এ এলাকার জনসংখ্যা বেশ কম, ২০ লক্ষেরও কম মানুষের বাস এখানে। গিলগিট বাল্টিস্তানে তিনটি প্রশাসনিক ডিভিশন ও ১০টি জেলা রয়েছে। তিনটি প্রশাসনিক ডিভিশন হল গিলগিট, ঘিজার এবং নাগার পড়ে গিলগিট প্রশাসনিক ডিভিশনের মধ্যে, বাল্টিস্তান ডিভিশনের মধ্যে পড়ে ঘাঞ্চে, খারমাং এবং স্কাদ্রু, ডিয়ামের জিভিশনের অন্তর্ভুক্ত হল ডিয়ামের এবং আস্টোর।
গিলগিট বাল্টিস্তানের প্রশাসনিক পরিস্থিতি কী?
পাক অধিকৃত কাশ্মী এবং গিলগিট বাল্টিস্তান দুইই ইসলামাবাদ দ্বারা পরিচালিত হলেও কোনওটিই পাকিস্তানের সরকারি তালিকাভুক্ত নয়। পাকিস্তানের প্রদেশের সংখ্যা হল চারটি- পাঞ্জাব, খাইবার পাখতুনওয়ালা, বালোচিস্তান ও সিন্ধ।
পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও গিলগিট বাল্টিস্তান দুইই স্বায়ত্তশাসিত এলাকা। পাকিস্তানের বক্তব্য নিজেদের মানচিত্রে এ এলাকাগুলি ঢুকিয়ে ফেললে তারা নিজেরাই সমস্যায় পড়বে, কারণ সেক্ষেত্রে জম্মু কাশ্মীরকে বিতর্কিত ইস্যু বলে তারা রাষ্ট্রসংঘ এবং অন্যত্র যে দাবি করে আসছে তা প্রশ্নের মুখে পড়বে। অন্যদিকে ভারতের তরফে ১৯৯৪ সালে সংসদে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুসারে পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও গিলগিট বাল্টিস্তান- দুইই ১৯৪৭ সাল থেকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
Read the Full Story in English