/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2023/10/The-story-of-Mahatma-Gandhi.jpg)
একজন লোক ৫০ টাকার নোট ধরে রয়েছেন। (অমিত চক্রবর্তীর এক্সপ্রেস ছবি)
হেনরি কার্টিয়ের-ব্রেসন, মার্গারেট বোর্ক-হোয়াইট এবং ম্যাক্স ডেসফোরের মত বহু বিশিষ্ট ফটোগ্রাফার মহাত্মা গান্ধীর বিভিন্ন ছবি তুলেছেন। কিন্তু, গান্ধীজির সর্বাধিক প্রচারিত ছবি, ভারতের সরকারি মুদ্রায় তাঁর প্রতিকৃতি। জাতির জনক হিসেবে তিনি ১৯৪৭ সালে স্বাধীন ভারত গঠনের পরে জাতীয় মুদ্রায় স্থান পেয়েছেন। এটা বলে দেওয়াই যায়। কিন্তু, মজার ব্যাপার হল ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই নয়। তার বেশ কয়েক দশক পর ১৯৯৬ সালে মহাত্মা গান্ধী ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা ভারতীয় ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা রিজার্ভ ব্যাংকের বাজারে ছাড়া প্রতিটি আইনি ব্যাংকনোটের স্থায়ী বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠেন।
ভারতীয় মুদ্রায় ব্যবহৃত গান্ধীর ছবি কবে তোলা?
ব্যাংকনোটে যে গান্ধীর প্রতিকৃতি দেখা যায়, তা কোনও ব্যঙ্গচিত্র নয়। এটি ১৯৪৬ সালে তোলা একটি ফটোগ্রাফের কাট-আউট। সেখানে তিনি ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ লর্ড ফ্রেডেরিক উইলিয়াম পেথিক-লরেন্সের সাথে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ফটোগ্রাফটি নির্বাচন করা হয়েছিল, কারণ এতে গান্ধীর হাসির সবচেয়ে উপযুক্ত অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে। তবে, এই ছবির ফটোগ্রাফারের পরিচয় এবং কে এই ছবি ব্যাংক নোটের জন্য বেছে নিয়েছিলেন, তা অজানাই থেকে গেছে। সাধারণত, আরবিআইয়ের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট রুপির নোট ডিজাইন করে থাকে। নকশার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। আরবিআই আইন ১৯৩৪-এর ধারা ২৫ অনুসারে, 'ব্যাংক নোটের নকশা, গঠন এবং উপাদান' কেন্দ্রীয় বোর্ডের সুপারিশ বিবেচনার পরে কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা অনুমোদিত হয়।
গান্ধী কখন প্রথম নোটে স্থান পান?
মহাত্মা গান্ধী প্রথমবার ভারতীয় মুদ্রায় স্থান পান ১৯৬৯ সালে। সেই সময় তাঁর জন্মের শতবার্ষিকী স্মরণে একটি বিশেষ সিরিজ প্রকাশ করা হয়েছিল। আরবিআই গভর্নর এলকে ঝা-এর স্বাক্ষর ছিল। সেখানে মহাত্মা গান্ধীকে সেবাগ্রাম আশ্রমের পটভূমিতে চিত্রিত করা হয়েছিল। তারপরে, ১৯৮৭ সালের অক্টোবরে গান্ধীজির ছবি-সহ ৫০০ টাকার নোটের একটি সিরিজ চালু করা হয়েছিল।
স্বাধীন ভারতে ব্যাংক নোট
১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট, ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণার কয়েক মাস ধরে, রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া রাজা ষষ্ঠ জর্জের ছবি-সহ ঔপনিবেশিক সময়ের নোট জারি করা শুরু করে। ভারত সরকার ১৯৪৯ সালে তার ১ টাকার নোটের নতুন নকশা প্রকাশ করে। সেটা ওয়াটারমার্ক উইন্ডোতে। সেই নোটে রাজা জর্জের স্থানে সারনাথে অশোক স্তম্ভের সিংহ প্রতীক প্রতিস্থাপিত করা হয়।
গান্ধী থেকেছেন ব্রাত্যই
বছরের পর বছর ধরে, ভারতীয় নোটে নানা ছবির প্রয়োগ হয়। কিন্তু, গান্ধীর ছবি ব্যবহার হয়নি। যেমন, বাঘ এবং সাম্বার হরিণের ছবি ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৭০-এর দশকে তুলে ধরা হয় কৃষি প্রচেষ্টার দৃশ্য তুলে ধরার ওপর। এরপর কৃষিকাজ থেকে চা পাতা তোলাও উঠে আসে ছবিতে। ১৯৮০-এর দশকে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং ভারতীয় শিল্পের চিহ্ন ব্যাংক নোটে স্থান পায়। আর্যভট্ট উপগ্রহ ২ টাকার নোটে, ৫ টাকার নোটে খামার যান্ত্রিকীকরণ এবং ২০ টাকার নোটে কোনার্কের চাকা স্থান পেয়েছিল।
আরও পড়ুন- চেনা-অচেনা ভগৎ সিং! বাস্তবে কেমন ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা?
গান্ধীর প্রতিকৃতি ব্যাংক নোটে
১৯৯৬ সালে অশোক স্তম্ভের পুরোনো ব্যাংক নোটগুলো প্রতিস্থাপিত করা হয়। আরবিআই চালু করে নতুন 'মহাত্মা গান্ধী সিরিজ'। সঙ্গে, বেশ কিছু নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যও চালু করা হয়। যার মধ্যে স্থান পায় এক উইন্ডোযুক্ত নিরাপত্তা থ্রেড, সুপ্ত চিত্র এবং দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ইন্টাগ্লিও বৈশিষ্ট্য। ২০১৬ সালে, আরবিআই ব্যাংকনোটে 'মহাত্মা গান্ধী নতুন সিরিজ' চালু করে। গান্ধীর প্রতিকৃতি অব্যাহত রেখে, নোটে স্বচ্ছ ভারত অভিযানের লোগো যোগ করা হয়। সঙ্গে যুক্ত হয় অতিরিক্ত নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যও।